ইতিহাশে খাড়াইয়া মাওলানারে কদমবুছির কোশেশ
মাওলানা ভাশাানিরে বুঝতে পারি আমি, তারে লাইকও করি। মাওলানার ঘাটতিগুলা আমার ভিতরেও কম বেশি আছে, তাই বুঝতে কিছু শুবিধাও হয়।
এই জামানার পলিটিক্সে জেই হেকমত বা কৌশলের আলাপ দেখেন মাঝে মাঝে, এই হেকমতের শবচে পজিটিভ ভার্শনটা পাইবেন মাওলানার মাঝে; ওনার ভিতর মদে ঘেন্না ছাড়া তেমন কোন ঘেন্না আছিলো না; আজকে অনেকে পেট ভইরা মদ খাইয়া মন ভরা ঘেন্না উগরায়, তার তুলনায় মাওলানার মদে ঘেন্না বহুত খুবছুরত! ঘেন্না পেরায় না থাকায় মাওলানা শাচ্চা হেকমত এস্তেমাল করতে পারছেন। অনেকেই দেখবেন ঘেন্না উতরাইতে না পারায় হেকমতে কামিয়াব হয় না! মাওলানা ইছলাম ঘেন্না করতেন না, হিন্দুও না, না কেপিটাল, না মার্ক্স, না পচ্চিম, না আরব, না ইনডিয়া, না পোলা, না মাইয়া! আবার এগুলার কোনটায় বাড়তি পিরিতিও আছিলো না ওনার; এই জামানাতেও এমন একজন বাইর কইরা দেখান! ওনার পিরিতি আছিলো মাকলুকাতে, মানুশ এবং আর শব মাকলুকাতে এবং এই পিরিতির দরকারেই, তাবত মাকলুকাতে দরদি মন লইয়া, মাকলুকাতের শুখের দরকারে জেকোন হেকমতে উনি রাজি আছিলেন, ঘেন্নার কমতি থাকায় উনি তাই দরকারে জে কারো লগে দোস্তি করতে পারছেন, মাকলুকাতের দুশমনরেও চিনতে পারছেন পয়লা নজরেই! ওদিকে, ঘেন্নার কমতির কারনে এগুলা পারছেন জেমন হাচা, তেমনি মাকলুকাতে/মানুশে তুমুল দরদ আর পিরিতি থাকার কারনেই হয়তো ঘেন্না উতরাইয়া উঠতে পারছেন! এই এই কারনেই ওনারে পলিটিকেল হেকমতের শবচে শাচ্চা এবং পজিটিভ নজির কইলাম!
কিন্তু জে কোন জামানাতেই এমন অতি রেয়ার গুন লইয়াও মাওলানা খুব বেশি হাছিল করতে পারেন নাই বা জা কিছু পারতেন, তার মাঝে অল্পই পারছেন বাস্তবে! মাওলানার থিকা ঐ পিরিতি আর দরদ আর ঘেন্না উতরাইয়া ওঠার ছবক জেমন নেওয়া দরকার আমাদের, তেমনি ওনার আরো আরো পারা কেমনে আটকাইয়া গেছিলো, শেইটা বুইঝা লইয়া ওনার ঘাটতিগুলা উতরাইয়া ওঠার রাস্তা তালাশ করতে হবে আমাদের, করা দরকার!
শুরুতেই আমাদের খেয়াল রাখা দরকার, মাওলানা আশলে একটা ছিভিল পলিটিকেল ছিস্টেমের পলিটিশিয়ান! পলিটিকেল ছিস্টেম খুনি হইয়া উঠলে মাওলানা ডরাইতেন, এমনকি পালাইতেন ডরে!
আমাদের খেয়াল রাখা দরকার জে, ইংরাজ আমলের আখেরি জামানায় অনশন/উপাশ করা বা না খাইয়া থাকাই বিরাট একটা পলিটিকেল মুভমেন্ট আছিলো! নজরুল থিকা গান্ধি, জেলখানায় উপাশ থাইকা মুভমেন্ট করছেন! ওনারা না খাইয়া মরলে জেন বা ইংরাজের কত কি আশে জায়! এর লগে এই জামানা তুলনা কইরা দেখেন, এখন উপাশি বা অনশনি মুভমেন্ট কইরা মরা কেমন কমন, শাশকের তাতে কিছুই আশে জায় না!
ডাইরেক হামলা করলে, গুলি করলে শুর্যশেনদের মতো ফাশি-টাশি হইতো তো বটেই, কিন্তু জালিয়ানওয়ালাবাগে পাইকারি খুনের পরে শম্ভবত বিটিশ ইনডিয়ায় মুভমেন্ট করা, রাস্তায় নামা একটু শোজাই আছিলো! আজকের বাকশালি বাংলাদেশ বা ইনডিয়ার মতো মিছিলে গুলি করা, ক্রসফায়ার, গুম, রিমান্ডে হাড্ডি গুড়াইয়া দেওয়া ঠিক কমন আছিলো না! পলিটিকেল বন্দির ইজ্জতও আছিলো জেলে, অনশন কইরা জেলখানাতেই হাছিল করার উপায় আছিলো তখন!
ঠিক শেই জামানার পলিটিশিয়ান মাওলানা; কিন্তু পাকিস্তান হবার পরে, অন্তত জিন্না মরার পরে শেই ছিভিল পলিটিকেল ছিস্টেম আছিলো না আর! আগে হিন্দু মোছলমান রায়ট হইছে, দুছরা ওয়ার্ল্ড ওয়ারে বিটিশ পলিছির কারনে আকাল ঘটছে, লাখে লাখে মানুশ মরছে না খাইয়া, খুন করছে হিন্দু-মোছলমান, তবু পলিটিকেল ছিস্টেমে শরকারি খুন-গুম ডাইরেক ততো আছিলো না মনে হয়!
আজকে বিএনপির মিটিং থিকা জেমন গুম কইরা ফেলা হয়, বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া জায়, পাগল হইয়া ইনডিয়ায় ঘুরতে দেখা জায়, এমনটা আছিলো না!
কিন্তু জিন্না মরার পরে ১৯৫২ শালের ২১ ফেবরুয়ারি জেই শরকারি খুন হয়, মাওলানার শেইটা বেশ অচেনা, অন্তত শেই টাইম পার হইয়া আশছি বইলাই ভাবতেন মনে হয় উনি; তাই ২১ ফেবরুয়ারির ঘটনার পরে মাওলানা পালাইলেন, ওনারে আর খুইজাই পাওয়া গেল না, উনি নাকি জমুনায় নৌকায় ঘুরতেছেন, জমিনে নামেন না আর!
পরে আইউব বা ৭২’র পরে আওয়ামি-বাকশালের আমলে উনি মুভমেন্টে নামছেন, কিন্তু ঐ পেরাইমারি ছিভিলিটির ব্যাপারে শিওর হইয়াই নামছেন! মরার রিস্ক এড়াইছেন, শম্ভবত একাত্তরেও।
ইতিহাশের দরকারে আড়ি দিয়া খাড়াবার জখন দরকার, তখন উনি খাড়ান নাই তেমন, অন্তত জানের রিস্ক লইতে একদমই নারাজ আছিলেন! এবং পলিটিকেল ছিস্টেম জে ওনার ভাবনার মতো নাই, এই নয়া ভায়োলেন্ট, অতি জালেম ছিস্টেমে উনি জে ঠিক ‘ফিট’ না, এইটা মনে হয় উনি বুঝতেন! শেই কারনেই হয়তো ৭০’র ইলেকশনে ময়দান ছাইড়া দিছেন আওয়ামি লাঠিয়ালদের কাছে! দরকারে মারামারি-খুনাখুনি পারবে লিগ, এমন একটা ভরশাতেই হয়তো ময়দান থিকা দুরে থাকছেন তখন!
আমার হিশাবে ঐটা ঠিক হয় নাই মাওলানার, দরকারে নিজের দলের দায়িত্ত আর কাউকে দিতে পারতেন, লিগের লগে কোয়ালিশনও করতে পারতেন! আমার আন্দাজ হইলো, তখন মাওলানার ময়দান ছাড়ার ভিতরেই পরের বাকশালের পত্তন, নাইলে বাংলাদেশের একমাত্র লিডার হইয়া উঠতেই পারতো না লিগের পেছিডেন! মাওলানার এমন ময়দান ছাড়া ১৯৫৪ শালেও দেখতেছি আমরা, কেন ছোরাবর্দি পিএম হবেন, কেন ভাশানি ফাইট দেবেন না খমতা পাইতে!? এইখানেও হিম্মতের কিছু কমতি পাইতেছি! ছোরাবর্দিকে নিজের চাইতে ফিট ভাবতেন উনি, কেন? ছোরাবর্দির ইংরাজি ভালো বইলা, উকিল বইলা?!
বাংলার মানুশ মাওলানারে ভালোবাশতো, তার উপর ভরশা করতো, তাতেই ইতিহাশের একটা দায়িত্ত ওনার উপর বর্তায়; আপনে তেমন কেউ হইলে আপনার উপরও, তখন আপনারে খাড়াইতে হবে, নিজের দরকারে ততো না, আপনের লগের/পিছের ঐ মানুশগুলার দরকারে! ইতিহাশের দরকারে তখন পিছাইয়া গেলে, না খাড়াইলে কতক বেইমানি হয় মানুশের লগে, আপনের গাহেকদের লগে!
মাওলানায় আজকে জারা দিশা পাইতে চান, তারা মাওলানার থিকা কি কি ছবক নিতেছেন? পিরিতি বা দরদের ছবকের লগে লগে ইতিহাশের দরকারে খাড়াইতে না পারার ছবকও লইতেছেন না তো!
আমার ভিতরও ঐ হিম্মতের ঘাটতি মালুম হয় আমার, এই কুৎশিত পলিটিকেল ছিস্টেমে আমি ফিট তো, শন্দেহ জাগে মনে! … ইতিহাশের দরকারে হিম্মত দেখাইতে পারবো কি! জানি না। আপনারা পারবেন, আজকের মাওলানা ভক্তরা? নিজেরে লইয়া আমার শন্দেহ তো আছেই, আপনাদের ব্যাপারে শেই শন্দেহ আরো বেশি আমার! কেননা, আপনাদের মাওলানা ভক্তির মাঝে একটা ঘাপলা দেখতে পাই আমি! আপনারা মাওলানারে দিয়া আশলে মানুশের মনে থাকা জিয়ারে কবর দিতে চান, এমনটাই শন্দেহ আমার! এবং শেইটাই তো ইতিহাশের দরকারে আপনাদের না খাড়াবার নজির…!
রক মনু
Latest posts by রক মনু (see all)
- এডিটোরিয়াল: ‘উইন্টার ইজ কামিং’ - মার্চ 10, 2024
- ফিকশন: দোস্তি - এপ্রিল 4, 2023
- রাজনিতির দাগ খতিয়ান: বাকশাল-দুছরা বিপ্লব এবং তার পর - ডিসেম্বর 5, 2022