Main menu

সাহিত্য এবং আর্টে কিছু ভড়ং, কিছু মহৎ এটিচিওড ঢুকে গেছে, যেগুলা ডেনজারাস – চেসোয়াফ মিয়শ

This entry is part 26 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

চেসোয়াফ মিয়শের ইন্টারভিউ তরজমা করবার ইচ্ছা আমার হইছিলো মেইনলি এই কারনে যে, কবি হিশাবে উনি একজন ইন্টারেস্টিং কেইস। তার জীবন এবং আইডেন্টিটি নানারকম কন্ট্রাডিকশন ও কনফ্লিক্টে ভরা। আর এই সমস্ত কনট্রাডিকশনের ফলে, এবং একটা নিদৃষ্ট আইডেন্টিটির অভাবে, উনি একভাবে রিলেট করতে পারছেন মডার্ন এইজে মানুশের ওভারঅল সিচুয়েশনের সাথেই। এই সমস্ত কনট্রাডিকশন এবং নিদৃষ্ট একটা পজিশনে দাড়াইতে না পারা, নিদৃষ্ট একটা পলিটিকাল পজিশনের ওপর ফেইথ রাখতে না পারা – এইগুলা ওনারে নিয়ে গেছে “দা রিয়েল” এর খোজে। যাকে আপনি খোদাও বলতে পারেন। এবং মিয়শ’কে আপনি মডার্ন এইজের লালন ফকিরও বলতে পারেন। লালন ফকিরও যেমন হিন্দু বা মুসলিম বা জাতপাতের কোনো আইডেন্টিটির ওপরেই নিজেকে বসাইতে পারেন নাই, বরং ট্রান্সেন্ড করছেন সবকিছুর মধ্যে, “দা রিয়েল” এর খোঁজ করছেন, বুঝতে পারছেন যে বাড়ির পাশের আরশি নগরেই সে থাকে, কিন্তু একদিনও তারে দেখতে পান না, মিয়শ-ও তার জীবনে লিথুয়েনিয়ান, পোলিশ, ফ্রেঞ্চ, আমেরিকান, ইস্ট ইয়োরোপিয়ান, ওয়েস্টার্ন, কমিউনিস্ট, লিবারেল কোনোটাই পুরাপুরি হইতে পারেন নাই, আর তিনিও একজন মিস্টিক সাধুর মতো এক ধরনের স্পিরিচুয়ালিটির খোঁজ করছেন, “সায়েন্টিফিক মোড অফ থিংকিং”-কে অপছন্দ করছেন, কবিতাকে মনে করছেন রিয়েলিটি’কে এক্সপ্রেস করার মিডিয়াম – যেটা করার জন্য তিনি ইস্ট এবং ওয়েস্ট এ দুই দুনিয়ার কবিতা থেকেই এলিমেন্ট নিছেন, এবং একইসাথে ইন্ডিভিজুয়াল হইতে চাইছেন আর ইন্ডিভিজুয়ালিটি’কে ডিমিন-ও করতে চাইছেন, এবং নানাভাবে পেসিমিজমের সাথে ডিল করে গেছেন, আর শেষমেশ উনিও বাড়ির পাশের আরশি নগরের পড়শী’কে কখনো দেখতে পান নাই।   

চেসোয়াফ মিয়শের জন্ম ১৯১১ সালের লিথুয়েনিয়া’য়, যেটা তখন ছিলো রাশিয়ান এম্পায়ারের আন্ডারে। কিন্তু এথনিকালি তারা লিথুয়েনিয়ান-ও ছিলেন না। তারা ছিলেন পোলিশ, এবং পোলিশ ভাষায় কথা বলতেন। ছোটবেলা থেকে দাদার লাইব্রেরি থেকে বই পড়তে পড়তে তার ইমাজিনেশন তৈরি হয়। বর্তমান লিথুয়েনিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াস তখন একটা প্রোভিনশিয়াল টাউন, এবং এখানে নানা জাতি, নানা ভাষা, খ্রিষ্টিয়ানিটির নানা শাখার মধ্যে উনি বড় হইছেন, পড়ালেখা করছেন। উনি একইসাথে ফেসিনেটেড হইছেন ডারউইনের থিওরি দিয়ে, আবার উনি ক্যাথলিসিজম’কেও আপন করে নিছেন। আর, আরো পরে যখন আইনস্টাইন তার থিওরি অফ রিলেটিভিটি পেশ করেন, তখন মিয়শ আপ্লুত হন এই ভেবে যে এর মধ্যে দিয়ে সায়েন্স আর স্পিরিচুয়ালিটির একটা কমন গ্রাউন্ড তৈরি হবে। 

একটা পর্যায়ে রাশিয়াতে বিপ্লবের মাধ্যমে জারের পতন হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন জন্ম লাভ করে। এরপর নানা কনফ্লিক্টের পরিপ্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে ভিলনিয়াস ছেড়ে মিয়শ’কে পোল্যান্ডের ওয়ারস’তে [Warsaw] পালায়ে আসতে হয়, যেটা তখন নাৎজি’দের দখলে। ওখানে উনি যোগ দেন সোশালিস্ট রেজিস্টেন্সে। আর, যুদ্ধের পর উনি পোলিশ কমিউনিস্ট রেজিমের কালচারাল এটাচে হিশাবে কাজ করেন। এই সময় ওনার ভেতরে নিজের সাথে নিজের যে বাহাশ চলতেছিলো, সেটা টের পাওয়া যায় ওনার বিখ্যাত নন-ফিকশন বই “দা ক্যাপটিভ মাইন্ড”-এ। একইসাথে কবিতার বইও বের হইতে থাকে ওনার। 

একটা পর্যায়ে উনি পোলিশ কমিউনিস্ট রেজিমের সাথে সম্পর্ক ভেঙে প্যারিসে চলে আসেন। আর এখানে উনি এমন এক সাহিত্যিক-দার্শনিক-ইন্টেলেকচুয়াল সিন্ডিকেটের মুখোমুখি হন, যারা কমিউনিজমের প্রেমে হাবুডুবু খাইতেছেন। কমিউনিজম’কে ত্যাগ করে আসা লোক হিশাবে ওখানে ওনার পজিশন বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। জীবন ভর এইরকম নানা কনফ্লিক্টেই উনি কাটাইছেন। আর আমেরিকায় চলে যাবার পর এবং ওখানে ইউনিভার্সিটি’র টিচার হিশাবে জীবন শুরু করার পর ওনার যেই কনফ্লিক্ট বড় হয়ে দেখা দেয় সেটা হইতেছে উনি তো পোলিশ ভাষার কবি। পোলিশ ভাষার খুবেকটা পাঠক আমেরিকায় ছিলো না। আর পোল্যান্ডে ওনার বই ছিলো নিষিদ্ধ। চোরাই পথে যাইতো বটে, কিন্তু পাঠকের সাথে ইন্টারেকশনের কোনো উপায় ছিলো না। 

বিশ শতকের যাবতীয় মিলিটারি কনফ্লিক্ট এবং ফিলোসফিকাল কনফ্লিক্ট ওনার জীবনের বাস্তবতা’কে শেইপ করছে, আর উনি কবিতায় এইগুলাকে ডিল করছেন। পার্সোনাল ক্রাইসিস থেকে উপরে উঠে এক ধরনের হিউমেন এবং গ্লোবাল ক্রাইসিসের জায়গা থেকে লেখার চেষ্টা করছেন। এই ইন্টারভিউ থেকে কবিতা’কে উনি কিভাবে ডিফাইন করেন এবং কোন জিনিশ’টাকে কবিতার পারপাস মনে করেন – এইগুলার ভালো আইডিয়া পাওয়া যায়। কবিতা লেখার ব্যাপার’টাকে উনি স্পন্টেনিয়াস প্রোসেস মনে করেন নাই, বরং কবিকে চুজিং করতে হবে। কবির সব কথা, সব এক্সপেরিয়েন্স, সব ফিলিং, যা কিছু কবির কাছে ইন্টারেস্টিং – তার সবকিছুই যে রিডারের কাছেও ইন্টারেস্টিং হবে তা তো না। তবে মিয়শ এটাও মনে করেন নাই যে, শুধু রিডারের জন্যই কবিতা’টা লেখা হইতেছে। বরং মিয়শ বলেন যে, উনি একটা অল্টার ইগো’কে ভেবে তার জন্য লিখতেছেন। এবং উনি লিখতে চাইতেছেন যেটা “প্রোপার”, কিন্তু কাব্যিক। আর ওইটা খুব বেশি “রিয়েলিস্টিক” হবে না, তবে ওইটা হবে ট্রুথ, “দা রিয়েল”।  Continue reading

আমাদের ভাষাসমস্যা – মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (১৯১৭)

This entry is part 7 of 22 in the series লেখার ভাষা

[১৩২৪ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মিলনীর দ্বিতীয় অধিবেশনের সভাপতি হিসাবে কলকাতায় দেয়া ভাষণ।]

আমরা বঙ্গদেশবাসী। আমাদের কথাবার্তার, ভয়-ভালবাসার, চিন্তা-কল্পনার ভাষা বাংলা। তাই আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। দুঃখের বিষয়, জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধের ন্যায় এই সোজা কথাটীকেও আমাদের মধ্যে এক সম্প্রদায়কে বুঝাইয়া দিলেও তাঁহারা জোর করিয়া বুঝিতে চাহেন না। তাই মধ্যে মধ্যে আমাদের মাতৃভাষা কি কিংবা কি হইবে, তাহার আলোচনা সাময়িক পত্রিকাদিতে দেখিতে পাওয়া যায়। হা আমাদের সূক্ষ্ম বুদ্ধি।

মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন ভাষা কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিয়া পরাণ আকুল করে? মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন ভাষার ধ্বনির জন্য প্রবাসীর কান পিয়াসী থাকে? মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন ভাষায় কল্পনা-সুন্দরী তাহার মনমজান ভাবের ছবি আঁকে? কাহার হৃদয় এত পাষাণ যে মাতৃভাষার অনুরাগ তাহাতে জাগে না? পৃথিবীর ইতিহাস আলোচনা করিয়া দেখ মাতৃভাষার উন্নতি ব্যতীত কোনও জাতি কখনও কি বড় হইতে পারিয়াছে? আরব পারস্যকে জয় করিয়াছিল। পারস্য আরবের ধর্ম্মের নিকট মাথা নীচু করিয়াছিল, কিন্তু আরবের ভাষা লয় নাই; শুধু লইয়াছিল তাহার ধর্মভাব আর কতকগুলি শব্দ। তাই আনোয়ারী, ফারদৌসী, সাদী, হাফিয, নিযামী, জামী, সানাই, রূমী প্রমুখ কবি ও সাধক-বুলবুল কুলের কলতানে আজ ঈরানের কুঞ্জ-কানন মুখরিত। যে দিন ওয়াইক্লিফ লাটিন ছাড়িয়া ইংরেজী ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ করিলেন, সেই দিন ইংরেজের ভাগ্যলক্ষ্মী সুপ্রসন্ন হইল। যতদিন পর্য্যন্ত জৰ্ম্মানিতে জম্মান ভাষা অসভ্য ভাষা বলিয়া পরিগণিত ছিল, তত দিন পর্য্যন্ত জর্ম্মানির জাতীয় জীবনের বিকাশ হয় নাই। বেশী দূর যাইতে হইবে না। আমাদেরই প্রতিবেশী আমাদের হিন্দুস্থানী মুসলমান ভাইগণ সংখ্যায় এত অল্প হইয়াও এত উন্নত কেন? আর আমরা সংখ্যায় এত বেশী হইয়াও এত অবনত কেন? ইহার একমাত্র কারণ তাঁহারা মাতৃভাষার প্রতি অনুরক্ত আর আমরা মাতৃভাষার প্রতি বিরক্ত। হিন্দুস্থানী আলিমগণ উর্দুভাষায় কুরআন শরীফের অনুবাদ এবং তফসীর, ফিক্হ, হদীস, তসউউফ, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, ভ্রমণ-বৃত্তান্ত, কাব্য, উপন্যাস প্রভৃতি বিষয়ে বহু মৌলিক গ্রন্থ রচনা করিয়া কিংবা এতদ্বিষয়ক আরবী, পারসী ও ইংরাজি প্রভৃতি ভাষার গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশ করিয়া উর্দু ভাষায় সর্বাঙ্গসুন্দর ইসলামী সাহিত্যের সৃষ্টি করিয়াছেন। কিন্তু দুই চার জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ব্যতীত আমাদের মৌলভী মৌলানাগণ বঙ্গ ভাষায় গ্রন্থ রচনা করা দূরে থাকুক বঙ্গভাষা কাফেরী ভাষা, তাহাতে ধর্মগ্রন্থের অনুবাদ করিলে ধর্মগ্রন্থের অমর্য্যাদা করা হয় ইত্যাদি রূপ প্রলাপ উক্তি করিতে ছাড়েন না। বিশুদ্ধরূপে বাংলা বলা বা লেখা তাঁহারা নিন্দাজনক মনে করেন। ফলে তাঁহাদের ধর্ম্মবিষয়ক বক্তৃতা শুনিয়া সামান্য বাংলা-জানা শ্রোতারা পর্য্যন্ত হাসিবে কি কাঁদিবে, তাহা ঠিক করিতে পারে না। তাঁহাদের বাংলা ভাষায় যেমন দখল, উদ্ধৃতিও তেমন। স্কুলের ন্যায় যে পর্য্যন্ত বাংলার মাদ্রাসাতেও বাংলা ভাষা অবশ্যপাঠ্য দেশীয় ভাষারূপে স্থান না পাইবে, সে পর্য্যন্ত আমাদের এ দুরবস্থা ঘুচিবে না। যে পর্য্যন্ত আরবী-পারসী-জানা মুসলমান লেখক বাংলা ভাষার সেবায় কলম না ধরিবেন, সে পর্য্যন্ত কিছুতেই বঙ্গীয়-মুসলমান-সাহিত্য গঠিত হইবে না। সে দিন অতি নিকট, যে দিন বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভাষার স্থান অধিকার করিবে। বিদেশীয় ভাষার সাহায্যে জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চ্চার ঘতন সৃষ্টিছাড়া প্রথা কখনও টিকিতে পারে না। Continue reading

বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ – অমর্ত্য সেন (পার্ট ১)

অনুবাদকের ভূমিকা

১.
নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র। আমার মতে, পিটার টামাস বাউয়ারের কাজকর্ম বাদ দিলে, তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশের জন্য সবচাইতে প্রাসঙ্গিক ও দরকারি অর্থনৈতিক গবেষণা করছেন অমর্ত্য সেন। সেই গবেষণার বড় অংশ আছে বিখ্যাত বই পভার্টি এন্ড ফ্যামিন-এ, বইয়ের নবম অধ্যায় এইটা।

নবম অধ্যায় অর্থাৎ বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ আসলে একটা কেইস-স্টাডি। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের সাথে বন্যারে সম্পর্কিত বলা হয়। অফিশিয়াল হিসাবমতে মারা গেছেন ২৬০০০ মানুষ। বাস্তবে সংখ্যাটা ছিলো অনেকানেক বেশি। দুর্ভিক্ষের কারণ হিসাবে দায়ী করা হইছে এভেইলেবল খাদ্য ঘাটতিরে (ফ্যাড)। যদিও কম খাদ্য আমদানি ও গভমেন্টের অল্প খাদ্য মজুত রিলিফ ওয়ার্করে সীমিত করে দিছে, সেন দেখাইছেন, এই ফ্যাড এপ্রোচ আসলে তেমন কিছুই ব্যাখ্যা করে না। পেশাগত স্টেটাস আর নিঃস্বতার তীব্রতার বিশ্লেষণ দেখাইছে দুর্ভিক্ষের শিকার সবচাইতে বড় গ্রুপটা ছিলো লেবার। লেবারদের এক্সচেঞ্জ এন্টাইটেলমেন্ট বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হইছ। সেন এই সিদ্ধান্তে আসছেন যে দুর্ভিক্ষ ব্যাখ্যায় ও বোঝাবুঝিতে এক্সচেঞ্জ এন্টাইটেলমেন্ট এপ্রোচ আরও ভালো কাজ করে।

মোটাদাগে এই হইলো বিষয়বস্তু। কিন্তু অমর্ত্য বাবুর গবেষণার আসল মজা ও প্রজ্ঞার জায়গাটা চিকনদাগের ডিটেইলে ও আর্গুমেন্টে। বইয়ে খালি দুর্ভিক্ষের কারণ অনুসন্ধান ও সরকারি ব্যার্থতা না, বাংলার (এখনও) মোটাদাগের কৃষিভিত্তিক সমাজের অর্থনৈতিক ও পেশাভিত্তিক নানান গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচিত হইছে। সাধারণ ডেটা পাঠ কইরাও সমাজ সম্পর্কে কি দারুণ সব পর্যবেক্ষণ বাইর কইরা নিয়া আসা যায় তার প্রমাণ এই গবেষণা। যেমন: ধানমাড়াই পেশাটার সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বভাবচরিত্রের ব্যাখ্যা ড. সেন যেভাবে করছেন, আমিও বেশ অবাক হইছি, অথচ আমি বড় হইছি গ্রামে (দ্যাখেন বাংলার মহাদুর্ভিক্ষ অধ্যায়টা)। উদাহরণ দিয়া ভূমিকা বড় করবো না, অমর্ত্যবাবুর গবেষণা পাঠকরে পইড়া দেখতে বলবো।

সেনের গবেষণায় উঠে আসছে, দুর্ভিক্ষের কারণ খাদ্যাভাব না, আসলে রাষ্ট্রে ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতার অভাব। অমর্ত্য বাবুর একাডেমিক পরিভাষা ‘এন্টাইটেলমেন্ট’। অর্থাৎ খাদ্য কে পাবে আর কেন, কোন মাত্রায় পাবে সেইটা ঠিক কইরা দেওয়া রাজনীতির কারণে দুর্ভিক্ষ হইছিল। মোট সংখ্যা না, ব্যক্তির আলাদাভাবে ও মিনিমাম ভালো থাকা দেখা জরুরি। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের কথাই ধরেন। সেপ্টেম্বর মাসে ৬০০০ লঙ্গরখানা খুলে ৪৩ লাখ মানুষরে রান্না করা খাবার দেওয়া হয়। ফলে দুর্ভিক্ষের শোচনীয় অবস্থাটা কিছুটা ‘ভালো’ হয়। অথচ সেপ্টেম্বরের আগে এইটা যে দুর্ভিক্ষ সেইটা ঘোষণাই করা হয় নাই! আরও আগে ঘোষণা দিয়া সরকার আগায়ে আসলে ক্ষয়ক্ষতি আরও কমানো যাইতো। আরও মজার ব্যাপার মোট খাদ্যের মাত্র ১.৩৬% ছিলো সরকারের মজুদে। এইটা দিয়াই কাজ চালাইছে। আসলে সরকার যদি মনে করতো খাদ্য সমস্যা সমাধান জরুরি, এইটা সমাধান কঠিন কোনো ব্যাপার ছিলো না।

‘জিডিপি বাড়ছে, আয় বাড়ছে, তার মানে মানুষ খুব ভালো আছে’ –এইসব সরকারি জিকির আমাদের দেশে নতুন না। অমর্ত্য সেন দেখাইছেন যে দুর্ভিক্ষের সময় আয় আরও বেশি বাড়ে। অমর্ত্য বাবু এইসব শুভঙ্করের ফাঁকি আমাদের নজরে আনেন। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ বিশ্লেষণ কইরা অমর্ত্যবাবু তাই প্রস্তাব দিছেন জিডিপির বিপরীতে ‘পার ক্যাপিটা ক্যালোরি ইনটেক’ এর জনশুমারি করতে। শহর আর গ্রামে প্রোটিন ইনটেক আর ক্যালরি ইনটেকের ব্যবধান বেশি যেন না হয়। ব্যবধান বেশি হওয়া দুর্ভিক্ষের একটা লক্ষণ। সমাজে মানুষের স্বাধীনতা ও অধিকার ইত্যাদির হাজির না থাকাই যে দুর্ভিক্ষের কারণ এমন দাবি গবেষণায় আছে। অমর্ত্য সেন একটা কথা জোর দিয়া বলেন যে, মডার্ন যুগে দুর্ভিক্ষ খাদ্যাভাবে হয় না, হয় মানুষের অব্যবস্থাপনার জন্যে, রাষ্ট্র ঠিকমতো না চললে।

জানুয়ারি ২০২৩
হাজারিবাগ| ঢাকা-১২০১

দরকারি টার্মগুলি

ক. নি:স্বতা — ডেস্টিটিউট আর ডেস্টিটিউশন এর বাংলা এই বইয়ে যথাক্রমে নি:স্ব ও নি:স্বতা। আরও চলনসই, সহজ বাংলা পাই নাই বইলা ‘ডেস্টিটিউশন এর চাইতে অন্তত সহজ’ – বিবেচনায় নি:স্বতা রাখছি।

খ. ক্যারি-ওভার — পরিভাষা ডিকশোনারিতে অর্থ দেওয়া আছে অগ্রে আনয়ন /মেয়াদ বর্ধিতকরণ। এই অর্থ আসলে শব্দটা এইখানে বুঝায় নাই। গত বছর/বছরগুলার পরেও এখনও যে পরিমাণ রয়েছে গেছে সেই পরিমাণ খাদ্য (যেমন: চাউল ও গম) এইখানে ক্যারি-ওভার। Continue reading

লেডিয়া ডেভিসের ফ্ল্যাশ-ফিকশন

আজিব আচরণ

দেখেন কেমন কইরা পরিস্থিতিই দায়ী ঘটনাগুলার জন্য। যদি আমি অনেকগুলা ছোট ছোট ছিঁড়া টিস্যুর টুকরা কানে লাগায়া রাখি, আর একটা স্কার্ফ দিয়া পেঁচায়া রাখি মাথাটা, আমারে একদমই আজিব মনে হইব না: যখন আমি একলা থাকি, সব নিরবতা আমার থাকে, যেইটা দরকার আমার।


হারায়া যাওয়া জিনিশগুলা

জিনিশগুলা হারায়া গেছে, আবার হারায়া যায় নাই, বরং আছে এই দুনিয়ার কোথাও না কোথাও। বেশিরভাগই আছিলো সাইজে ছোট, যদিও এদের মাঝে দুইটা আছিলো সাইজে বড়, একটা কোট আর একটা কুকুর। ছোট জিনিশগুলার মাঝে সার্টেন একটা রিং আর সার্টেন একটা বোতাম আছিলো। তারা আমার কাছ থেকে হারায়া গেছে, যেইখানে এখন আমি আছি, কিন্তু তারা একবারে নাই হয়ে যায় নাই। তারা অন্য কোথাও আছে, হইতে পারে সেইখানে তারা অন্য কারো কাছে আছে। কিন্তু যদি কারো কাছে নাও থাকে, তবুও, রিংটা তো নিজের কাছ থেকে হারায়া যায় নাই, বরং আছে সেইখানেই, শুধু নাই যেইখানে আমি আছি, এবং বোতামটাও, সেইখানে, আছে, এখনো, শুধু আমি নাই সেইখানে।


হাঁটতে বের হওয়া

রাস্তার কাছে গিয়া রাগে ফেটে পড়া, কথা না বলে হাটতে থাকা, পাইন বনের মধ্যে একটা নিরবতা, পুরানা রেল-ব্রীজ জুড়ে একটা নিরবতা, পানির মধ্যে ফ্রেন্ডলি হওয়ার একটা চেষ্টা, মসৃন পাথরগুলার উপর দাঁড়ায়া তর্কগুলারে শেষ হইতে না দেয়া, কাদামাখা ঢাল বেয়ে নামার সময় রাগে চিৎকার করা, ঝোপের ভিতরে ফুঁপায়া ফুঁপায়া কানতে থাকা।


ইঁদুর

আমাদের ঘরের দেয়ালগুলাতে ইঁদুরের আনাগোনা, কিন্তু রান্নাঘরে তেমন সমস্যা নাই। এতে আমরা খুশি কিন্তু বুঝতে পারতেছি না, যেমন কইরা তারা আমাদের পাশের বাসার রান্নাঘরে ঢুকে, কেন তারা আমাদের রান্নাঘরে আসে না, যেখানে আমরা ফাঁদ পাইতা রাখছি। যদিও আমরা খুশি, আবার হতাশ ও, কারন ইদুরগুলা এমন আচরণ করেতেছে যেন আমাদের রান্নাঘরে কোন ঝামেলা আছে। আমরা কনফিউশনে পইড়া যাই, আমাদের ঘর তো আমাদের পাশের বাসার ঘরগুলার মতো এতো গোছানো না। আমাদের রান্নাঘরে তো আরো বেশি খাবার পইড়া থাকে, টেবিলের উপর ব্রেডের টুকরা পইড়া থাকে, আর ক্যাবিনেটের গোড়ায় ফালানো পচে যাওয়া পেঁয়াজ থাকে। আসলে, কিচেনে এতো আলগা খাবার থাকে যে আমার মনে হয় ইদুরগুলা খাবারের সাথে পাইরা উঠতে পারে না। সাজানো-গোছানো রান্নাঘরে থাকলে এনাফ খাবার জোগাড় করা খুব মুশকিল, বসন্ত না আসা পর্যন্ত রাতের পর রাত সারভাইভ করা খুব কঠিন। নরমালি তারা ধৈর্য ধরে শিকার খুঁজে এবং কিছু একটা পাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে খট খট করে কামড়াইতে থাকে, তৃপ্তি না আসা পর্যন্ত। যা-ই হোক, আমাদের রান্নাঘরে আসলে মনে হয় তারা এমন কিছু ফেইস করে, যা তাদের অভিজ্ঞতার সাথে যায় না, তারা এই পরিস্থিতিরে ডিল করতে পারে না। তারা হয়তো ঝুঁকি নিয়া কয়েক ধাপ সামনে আগায়, তারপর এতো খাবারের দৃশ্য আর এতো গন্ধ পায় যে আবার গর্তে পালায়া যায়, তাদের মাঝে তখন কাজ করে একটা অস্বস্তি আর ময়লা খাবারগুলা সাফ করতে না পারার লজ্জা। Continue reading

(বই থেকে) স্বাতন্ত্রের স্বীকৃতি এবং রাষ্ট্রিক বনাম কৃষ্টিক স্বাধীনতা – আবুল মনসুর আহমদ (১৯৬৮)

This entry is part 17 of 22 in the series লেখার ভাষা

[আবুল মনসুর আহমদের “আত্মকথা” (১৯৬৮) বইয়ের পনের ও ষোল নাম্বার চেপ্টার]

স্বাতন্ত্রের স্বীকৃতি

১. সোজা পথ সহজ না

পাকিস্তান সৃষ্টির প্রায় এক যুগ পূর্ব হইতে আমার সাহিত্যিক মতবাদে যে ধীর অথচ দৃঢ় পরিবর্তন আসিতেছিল, তাতে আমার আশা হইয়াছিল অখণ্ড বাংলার কৃষ্টিবোধের ও সাহিত্যিক-স্বাতন্ত্রের জটিলতা বাংলা বাটোয়ারায় সহজ হইয়া গেল। রাজনীতিতে ‘স্পিরিট-অব-পার্টিশন’-এর ব্যাখ্যা করিয়া আমি ভারত বাটোয়ারাকে যেমন হিন্দু-মুসলিম সমস্যার সর্বাঙ্গীণ সুন্দর সমাধান বলিয়াছিলাম ও বিশ্বাসও করিয়াছিলাম, পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার স্বতন্ত্রীকরণকে আমি তেমনি আমাদের কৃষ্টিক, ভাষিক ও সাহিত্যিক জটিলতার সহজ সমাধানের পন্থা বলিয়া অভিনন্দিত করিয়াছিলাম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে আমি এই মতবাদের সমর্থক খাড়া করিয়াছিলাম। মৃত্যুর মাত্র দুই বছর আগে বোধ হয় দূরদর্শিতা বলেই তিনি লিখিয়াছিলেন : বাংলা আসলে দুইটা। পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা শুধু দেহে নয়, অন্তরেও দুই। কলিকাতা-কেন্দ্রিক পশ্চিম বাংলা হইতে পৃথক হইয়া পূর্ব বাংলা রাজনৈতিক। ও অর্থনৈতিক দিকে স্বাধীনতা পাইল, রাজনৈতিক নেতারা অবশ্যই তা উপলব্ধি করিয়াছিলেন। কিন্তু আমার দৃষ্টি ছিল অন্য দিকে। আমি ভাবিয়াছিলাম, কৃষ্টিক-ভাষিক ও সাহিত্যিক দিকে পূর্ব বাংলা পশ্চিম বাংলার সবল দুচ্ছেদ্য বাহু-ডোর হইতে মুক্ত হইয়া স্বকীয়তা আত্মস্থ ও বিকশিত হইবার সুযোগ লাভ করিল। এটা অচিন্তনীয় অপূর্ব সুযোগ। অন্যথায় কলিকাতার পাটকেলের হাত হইতে পূর্ব বাংলার কৃষকদের মুক্তির যেমন কোনও সম্ভাবনা ছিল না, বঙ্কিম-রবীন্দ্র-শরশ্চন্দ্রের দুর্ভেদ্য বৃত্ত হইতে পূর্ব বাংলার শিল্পী-সাহিত্যিকদের মুক্তিরও কোনও আশা ছিল না। এ অবস্থায় কলিকাতা ছাড়িয়া সকলের আগে ঢাকা আসা আমার প্রথম কর্তব্য ছিল লেখক-সাহিত্যিকদের জন্য টেবিল-চেয়ার সাজাইতে, অভাবে সিলেটের শীতল পাটি বিছাইতে; আর, নারী-সাহিত্যিকদের জন্য কলিকাতার শিফন কাথানের বদলে ঢাকাইয়া জামদানি যোগাড় করিতে। কিন্তু ইত্তেহাদ-এর ঢাকা আসার পথে সরকারি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হওয়ায় উহার সম্পাদনার দায়িত্ব পালনের দরুন আমারও ঢাকা আসিতে তিন বছর দেরি হইয়া গেল। তাই কলিকাতায় বসিয়া পূর্ব পাকিস্তানের সামান্য খেদমত করিবার চেষ্টা করিলাম। পূর্ব পাকিস্তানের শিশুদের জন্য ছোটদের কাছাছুল আম্বিয়া নামক দুই খণ্ডের একটি শিশু-পাঠ্য-পুস্তক লিখিলাম। এই প্রথম চেষ্টায় সরকার পক্ষ হইতে যে বাধা পাইয়াছিলাম, তৎকালে সেটা খুবই কঠোর মনে হইয়াছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে স্বয়ং সাহিত্যিকদের নিকট হইতে প্রাপ্ত বাধার কাছে সে সরকারি বাধাটা ছিল নিতান্তই তুচ্ছ। শিল্পী-সাহিত্যিকদের বিরোধিকার কথা পরে ক্রমে-ক্রমে বলিতেছি। সরকারি বাধাটার কথাটা আগে কহিয়া লই।

 

২. প্রথম তিক্ত অভিজ্ঞতা

আমি চিত্র-শিল্পকে শিল্প-সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ মনে করি। এ বিষয়ে আমি আমাদের ওলামা-সমাজের একাংশের সহিত একমত কোনও দিন ছিলাম না। সাধারণ শিল্প-সাহিত্য ছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রেও চিত্রকে অত্যাবশ্যক মনে করিতাম। বিশেষত শিশুশিক্ষায় ‘পিকটরিয়েল রিপ্রেয়েন্টশন’-কে অপরিহার্য বিবেচনা করিতাম। এই বিশ্বাসকে পাকিস্তানের শিক্ষা-বিভাগে চালু করিবার আশায় ১৯৪৭ সালে কলিকাতা বসিয়াই ছোটদের কাছাছুল আম্বিয়া নামে দুই খণ্ডের একটি সচিত্র শিশুপাঠ্য বই লিখিলাম। তাতে শেষ পয়গম্বর হযরত রসুলুল্লাহ ছাড়া কতিপয় প্রধান নবীর ও সেই সঙ্গে ইবলিস, নমরুদ ও কারুনের কাহিনী লিখিলাম। এই বইয়ে কাহিনীর সাথে সংগতি রাখিয়া কিছু কিছু কাল্পনিক ছবি দিলাম। ছবিগুলি তৎকালীন শ্রেষ্ঠ মুসলিম আর্টিস্টদের অন্যতম কাজী আবুল কাসেমের হাতে আঁকাইলাম। মানুষের, বিশেষত, পীর-পয়গম্বরদের, ছবি সম্বন্ধে মুসলিম সংস্কারের প্রতি নজর রাখিয়া এই সব কাল্পনিক ছবি আঁকিতেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হইল। কোনও ছবিতেই সংশ্লিষ্ট নবীর মুখ দেখান হইল না। শিশুদের পক্ষে কাহিনী বুঝিবার জন্য যেভাবে যতটুকু দরকার সেইভাবে ও ভঙ্গিতে একজন কল্পিত মানুষের ছবি আঁকা হইল মাত্র। আমার প্রিয় বন্ধু আয়নুল হক খ ও মোহাম্মদ নাসির আলীর ঢাকায় সদ্য-প্রতিষ্ঠিত নওরোজ কিতাবিস্তান এই বই ছাপিয়া বাজারে ছাড়িলেন। বইটি তৎকালীন জনপ্রিয়তা লাভ করিল। কোনও কোনও শিক্ষাবিদ বইখানাকে ক্লাস থ্রি-ফোরের ‘র‍্যাপিডরিডার’ করিবার সুপারিশ করিলেন। এমন সময় পূর্ব বাংলা শিক্ষা দফতরের সেক্রেটারি জনাব এফ। করিমের একটি শোক’ নোটিস ও ঢাকা হইতে প্রকাশিত একমাত্র দৈনিক আজাদ-এর সম্পাদকীয় রূপে একটি হুঁশিয়ারি পাইলাম। সরকারি নোটিসে আমার এ বই কেন বাযেয়াফত হইবে না, তার কারণ দর্শাইতে বলা হইল। আর আজাদ-এর সম্পাদকীয়তে আমাকে ভোলানাথের কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়া হইল। উল্লেখ্য যে, কিছুদিন আগে হযরত পয়গম্বর সাহেবের ছবিসহ একটি বই বিক্রির অপরাধে ভোলানাথ সেন নামক কলিকাতার এক পুস্তক বিক্রেতাকে জনৈক মুসলমান আততায়ী হত্যা করিয়াছিল। এই উপলক্ষে আজাদ আমার এই পুস্তকের প্রকাশক ও বিক্রেতাদিগকেও হুঁশিয়ার করিয়া দিলেন। মওলানা আকরম খাঁ সাহেবের আজাদএর কথার জবাবে শহীদ সুহরাওয়ার্দীর ইত্তেহাদ-এর কিছু বলিবার উপায় ছিল না। তাই আমি পূর্ব বাংলা সরকারের শিক্ষা-দফতরের সেক্রেটারি সাহেবের জবাব দিলাম। মি. এফ করিম ছিলেন উর্দু সাহিত্যিক। তাঁর সাথে আমার পরিচয় ছিল। তাই আমার ক্য শশা করিবার কৈফিয়তটি শুধু সরকারি অভিযুক্ত আসামির কাঠখোট্টা লিগ্যাল স্টেটমেন্ট ছিল না। একজন সাহিত্যিকের কাছে অপর একজন সাহিত্যিকের পত্রও ছিল সেটা। পয়গম্বর সাহেবরাও দেহী মানুষ ‘বাশার আল-কোরআনের এই শিক্ষার দিকে এবং পিকটরিয়েল রিপ্রেযেন্টেশন ছাড়া শিশুশিক্ষা হয় না বলিয়া আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানীদের অভিমতের দিকে সেক্রেটারি সাহেবের মনোযোগ আকর্ষণ ত করিলামই, তাছাড়া সদ্য-প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান সরকারের শিক্ষানীতি সম্বন্ধে কতিপয় প্রশ্ন পেশ করিলাম। শিল্প-সাহিত্য সম্পর্কে তাঁর সরকারের অভিমত কী সে প্রশ্নও তুলিলাম। নয়া রাষ্ট্রের নয়া সরকার পাকিস্তানে সিনেমা-থিয়েটার করিতে দিবেন কি না, দিলে সে সবে আউলিয়া-দরবেশ পীর-পয়গম্বদের মত আদর্শ ও অনুকরণীয় চরিত্রসমূহ রূপায়ণ ও চিত্রায়ণ করিতে দেওয়া হইবে? না প্রচলিত নাটক-সিনেমার মত শুধু অমুসলমানদের দেব-দেবী ও মহাপুরুষদেরে লইয়াই পাকিস্তানি ছায়াছবি ও ড্রামা-নাটক হইতে থাকিবে? যদি মুসলিম মহাপুরুষদের জীবনালেখ্য নাটকে-সিনেমায় আঁকিতে হয়, তবে ছবি ত ছবি জিন্দা মানুষকে পীর-পয়গম্বর সাজিতে হইবে কি না? যদি, পক্ষান্তরে, মুসলিম মহাপুরুষদের জীবন লইয়া কোনও নাটক সিনেমা করিতে না দেওয়া হয় তবে, পাকিস্তানের জনগণ নাটক-সিনেমার মারফত একটা বিপুল সম্ভাবনাময় মহৎ শিক্ষার মাধ্যম হইতে বঞ্চিত থাকিবে কি না? যদি পাকিস্তানের নাটক-সিনেমায় শুধু অমুসলমান দেব-দেবী ও মহাপুরুষদের জীবনালেখ্য প্রদর্শিত হয়; তবে পাকিস্তানি মুসলমানদের ধর্মীয় ও কৃষ্টিক পরিস্থিতি ও পরিবেশ কী দাঁড়াইবে, পাকিস্তানের বর্তমান শাসকরা কি চিন্তা করিয়া দেখিয়াছেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →