Main menu

যেকোনো চিন্তা, পোয়েটিকাল বা অন্যকিছু, যেকোনো চিন্তাই অনেককিছুর জোট হইয়া তৈয়ার হয় – রবার্ট ফ্রস্ট

This entry is part 13 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

ফ্রস্টের জন্ম ১৮৭৪ সালে সানফ্রানসিসকো’তে, আর এমেরিকান লিটারারি ক্রিটিক রিচার্ড পরিয়ার যখন ফ্রস্টের এই ইন্টারভিউটা নিতেছেন তখন ১৯৬০ সাল, ফ্রস্ট ততদিনে কাটাইয়া ফেলছেন ৮৪ বছরের একটা লম্বা জীবন। এর তিন বছর পরে ফ্রস্ট মারা যান বোস্টনে। ওনার এপিটাফে লেখা হয় ওনার কবিতার লাইন, “I had a lover’s quarrel with the world”.

কবি হিসাবে ফ্রস্টকে সিম্পল কোনো ডেফিনেশনের আন্ডারে আনা সম্ভব না। ফ্রস্ট নিজে এই ধরনের এটেম্পট পছন্দ করতেন না। আর নিজেও এইগুলা নিয়া ভাবতেন না। অন্য এক ইন্টারভিউ’তে এই প্রসঙ্গে কইছিলেন যে, “আমি অতো সেলফ-কনশাস না”। যাই হোক, অনেকে অনেকরকম কথা তো বলছে, ফ্রস্টের কবিতার ডিরেকশানকে লোকেট করতে চাইছে, ওনার আগে-পরের লেগেসি বাইর করতে চাইছে। ফ্রস্ট নিজে সমালোচনা পড়তেন না। বাট কেউ যদি ওনার সমানে এইরকম কিছু বলতো, যদি ওনারে কোথাও লোকেট করার এটেম্পট নিতো, উনি কনফিডেন্টলি-ই ঐটারে নাকচ করতেন, এবং এই ধরনের একটা ভাইব দিতেন যে ওনারে ডিফাইন করার যেইকোনো এটেম্পট-ই আসলে ওনার একটা ভুল বা আংশিক ভিউ-ই অফার করতে পারে।

…একটা ব্যাপার, যেইটা ইন্টারভিউয়ারের ভূমিকায়ও কিছুটা বলা হইছে, এইখানে আরেকবার বইলা রাখতেছি যেহেতু অনুবাদ করতে গিয়া ব্যাপারটা বারবার ফেইস করছি। ফ্রস্ট কবিতা লেখার ক্ষেত্রে খেয়ালে বা বেখেয়ালে গলার টোনের উপর ভালোই ডিপেন্ড করতেন। অর্থাৎ, কবিতাটা পড়ার সময় কোন জায়গায় কোন টোনে পড়া হইতেছে – এই ধরনের ব্যাপারগুলা খুব ভাইটাল ওনার কবিতার মিনিং তৈয়ার হওয়ার ক্ষেত্রে। এই ব্যাপারে ইন্টারভিউটার মধ্যে আলাপ আছে। তো, এই মানুষ যখন বাস্তবে কথা কইতেছেন কারোর লগে, সেইক্ষেত্রেও এই ‘টোন’ এর ব্যাপারটা ইম্পর্টেন্ট; এবং শারীরিক নানা এক্সপ্রেশান, কোথায় কখন থামলেন, কোন শব্দটায় জোর দিলেন – এই সব নিয়াই কথার মিনিং দাঁড়াইতেছে, এবং সামনের লোকটা বুঝতে পারতেছে। কথা বলার মধ্যে ফ্রস্ট কখনো কখনো হয়তো ঠিকমতো একটা সেন্টেন্স-ই কইলেন না, কখনো হয়তো একটা লাইনে “তারা” বলতে একদলরে বুঝাইলেন, আর পরের লাইনে গিয়া “তারা” বলতে অন্য কোনো গ্রুপরে বুঝাইলেন – এই সমস্ত ব্যাপারের কারণে আপনের বুঝায় কোনো অসুবিধা হবে না যদি আপনে তার সামনে ‘দর্শক’ এবং ‘শ্রোতা’ হিসাবে থাকেন। বাট এইরকম একটা দুইঘণ্টার ইন্টারভিউকে যখন টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে এরপর সেইখান থেকে ট্রান্সক্রিপশান করে লিখিত ফরম্যাটে আনা হয়, সেইটা পড়ার সময় কোনো কোনো জায়গায় ঠিকমতো বুঝতে পারা একটু টাফ হইতে পারে। প্লাস, ১৯৬০ সালে দুইজন এমেরিকান লোক কথা কইতেছে, সেইটা ২০২১ সালে বাংলাদেশের একজন লোক যখন পড়বে তার তো একটু টাফ হবে ভাষার নানান চিকন চিকন ব্যাপারগুলারে ঠিকঠাক মতন ধরতে পারার ক্ষেত্রে। এবং যেইটা ধরতে পারা গেলো সেইটারে আবার বাংলা ভাষায় একইরকম এক্সপ্রেশানে প্রকাশ করতেও হ্যাপা কম না। পড়ার সময় এইগুলা মাথায় রাখা ভালো, তবে না রাখলেও ক্ষতি নাই।

ফ্রস্ট বিশ শতকের একজন ভাইটাল কবি। সেই স্বীকৃতি উনি বাঁইচা থাকা অবস্থায়ই বেশ ভালোমতোই পাইছেন। তবে কবি হিসাবে একটা ‘পজিশান’ পাইতে ওনার সময় লাগছিলো, তার কারণও আছে। উনি ধইরা নিছিলেন ম্যাগাজিনে লেখা থেকেই ব্যাপারগুলার শুরুয়াত হবে। আমেরিকায় যখন উনি ম্যাগাজিনে লিখতেছিলেন, তখন উনি যেমন রিজেকশানের স্বীকার হইতেছিলেন না, তেমন খুব বেশি একনোলেজমেন্ট-ও পাইতেছিলেন না। ফলে ওনার জানা আছিলো না কী করতে হবে। ১৯১২ সালে ফ্রস্ট ইংল্যান্ডে যান। ১৯১৫ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে উনি আমেরিকায় ব্যাক করেন। মাঝখানের তিন বছরে ফ্রস্ট ইংল্যান্ডে কবি হিসাবে ভালোই একনোলেজমেন্ট পাইছিলেন, এবং ওনার প্রথম দুই বই A Boy’ Will (১৯১৩) আর North of Boston (১৯১৪) ঐখানেই পাবলিশ হয়। আমেরিকায় যখন ব্যাক করেন, ওনার ভাষায় ততদিনে উনি অলরেডি “মেইড পোয়েট”। আমেরিকায় আসার অল্পদিনের মধ্যে হেনরি হোল্ট অ্যান্ড কোম্পানি ওনার বই পাবলিশ করতে থাকে। ইংল্যান্ডের প্রতি ফ্রস্ট একটা কৃতজ্ঞতা ফিল করতেন। এবং আমেরিকার প্রতিও। আমেরিকার ক্ষেত্রে কারণটা ছিল মেইনলি কলেজগুলার চাকরি। কম বয়সে ফ্রস্ট জুতার কারখানায় চাকরি করছেন, লোকাল পত্রিকার এডিটরের কাজ করছেন, হাইস্কুলের টিচারি করছেন, কৃষিকাজ করছেন, এইরকম অনেক কিছুই করছেন অল্প অল্প করে। তবে কবি হিসাবে স্বীকৃতি পাইবার পরে ওনার দায়িত্ব নিছে আসলে কলেজগুলা। যেমন, এমহার্স্ট কলেজের চাকরির ব্যাপারে বলতে গিয়া আরেক জায়গায় উনি বলছিলেন যে বিশ বছর ধইরা এখানে ফ্যাকাল্টির মেম্বার হিসাবে উনি আছেন এবং ওনার তেমন কোনো কাজ নাই কেবল নিজের কবিতা লেখা ছাড়া।

আরেকটা ইনফরমেশান দিয়া রাখি পাঠকের কনফিউশান এড়ানোর জন্য। ইন্টারভিউয়ারের ভূমিকাতে ফ্রস্টের লগে নিউ ইংল্যান্ডের সম্পর্কের ব্যাপারে আলাপ আছে। নিউ ইংল্যান্ড বইলা ডাকা হয় আমেরিকার উত্তর-পূর্ব সাইডের একটা অঞ্চলকে। কানেক্টিকাট, মেইন, ম্যাসাচুসেটস, নিউ হ্যাম্পশায়ার, রোড আইল্যান্ড, ভারমন্ট – এই স্টেটগুলা নিউ ইংল্যান্ডের ভিতর পড়ে।

সাহিত্যের বাইরে ফ্রস্টের আরো নানা ইন্টারেস্টের জায়গা আছিলো। পলিটিক্স আর সায়েন্সের কথা স্পেশালি বলা যায়। তবে কবিতারে উনি কবিতা-ই রাখতে পারছিলেন। পলিটিকাল কবিতা বা নেচারের কবিতা বা এই টাইপের কিছু করতে যান নাই।

লাস্টে একটা ইন্টারেস্টিং কাহিনী বইলা শেষ করি। ইউটিউবে ওনার একটা শর্ট ইন্টারভিউ দেখছিলাম, তাহমিদ রহমান এইটা দিছিলো আমারে। ঐখানে ইন্টারভিউয়ার ওনারে জিগাইছিলেন উনি অপটিমিস্ট নাকি পেসিমিস্ট। ফ্রস্ট তারে উল্টা জিগাইছেন, “আপনে কোনটা?” তো উনি কইছিলেন, “ওয়েল, আই হ্যাভ ফেইথ।” ফ্রস্ট কইলেন, “এইটার দ্বারা কি বুঝাইতেছেন আপনে অপটিমিস্ট?” ইন্টারভিউয়ার কইলেন, “আমার লজিক অনুসারে, ইয়েস।” তখন ফ্রস্ট কইলেন, “অপটিমিস্ট দ্বারা কী বুঝান? যিনি ফিউচারের ব্যাপারে আশাবাদী?” উত্তর আসলো, “হ্যাঁ”। ফ্রস্ট বললেন, “আমি শুধু ফিউচারের ব্যাপারে না, পাস্ট এবং প্রেজেন্টের ব্যাপারেও আশাবাদী।” ইন্টারভিউয়ার বললেন, “এটার মানে কী?” ফ্রস্ট কইলেন, “আমি মনে করি অতীত যেইরকম ছিলো, সেইটার জন্যই একদিন তারে সঠিক বইলা মাইনা নেয়া যাবে। আর যেই বর্তমানটা আছে সেইটাও একদিন ইতিহাসে তার পয়েন্ট প্রুভ করবে।”

লাবিব ওয়াহিদ

———————————–

রবার্ট ফ্রস্ট: রাইটিং বোর্ড ছাড়া আমি কখনো লেখি না। গোটা জীবনে আমার কোনো টেবিল আছিলো না। আর লেখার লাইগা আমি সবরকম জিনিশই ইউজ করি। জুতার সোলের উপ্রেও লেখি।

ইন্টারভিউয়ার: আপনে কখনোই ডেস্কে লেখতে চাইলেন না কেন? এর কারণ কি এইটা হইতে পারে যে, আপনে প্রচুর মুভ করতেন আর অনেক জায়গাতেই বসত করছিলেন?

ফ্রস্ট: যখন আমি ছোট ছিলাম তখনও আমার কোনো ডেস্ক আছিলো না। লেখার লাইগা কোনো আলাদা রুম আছিলো না।

ইন্টারভিউয়ার: এখন কি কেমব্রিজ-ই আপনের ঘাঁটি?

ফ্রস্ট: শীতকালে খালি। পাঁচমাসের মতো থাকি ভারমন্টের রিপটনে। ঐখানে লম্বা সময় ধইরা সামার কাটাই। কিন্তু আমার অফিস আর কাজকামের জায়গা এখানেই।

… … …

ইন্টারভিউয়ার: যখন আপনে ইংল্যান্ডে ছিলেন, ১৯১২ থেকে ১৯১৫ তে, আপনের কি ঐখানেই থাইকা যাবার কথা মনে হইছিলো কখনো?

ফ্রস্ট: না না, আমি ঐখানে গেছিলাম কিছুদিন গরিব থাকার লাইগা, আর কিছু না। তখন আমি ঐখানে বই ছাপাইবার কথাও চিন্তা করি নাই। কাউরে আমি আমার বই ছাপাইবার জন্য অফার করি নাই। আমার বয়স আছিলো আটতিরিশ, না কী? এইরকমই হবে। অই বয়সে আমি ভাবতাম, বই পাবলিশের রাস্তা হইলো প্রথমে ম্যাগাজিনে ভালো করা। ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে আমার নসিব অত ভালা আছিলো না, কেউ আমারে আলাদা কইরা খেয়াল করে নাই, মাঝেমধ্যে তারা আমারে চেক পাঠাইতো, ব্যাস। সুতরাং, বই পাবলিশ করার জন্য আমি নিজেরে প্রস্তুত মনে করতাম না। কিন্তু ইংল্যান্ড যাইবার পরে, আমি আল্টিমেটলি তিনটা বই লেখছি। এ বয়’স উইল, নর্থ অফ বোস্টন আর এরপরেরটা (মাউন্টেন ইন্টারভাল)’র একটা পার্ট আমি লেইখা রাখছিলাম আলগা কাগজের একটা গাদার মধ্যে।

ইন্টারভিউয়ার: ইংল্যান্ডে থাকার সময় পাউন্ডের লগে আপনের সাক্ষাৎ হইছিলো কেমনে?

ফ্রস্ট: ফ্র্যাংক ফ্লিন্টের মাধ্যমে। উনি ছিলেন শুরুর দিকের ইমেজিস্ট, আর অনুবাদক। ওনার লগে পাউন্ডের দোস্তি আছিলো, আর তাদের ছোট গ্রুপটার মধ্যে উনি একজন ছিলেন। একটা বইয়ের দোকানে ওনার লগে আমার দেখা, জিগাইলেন, “আমেরিকান?” আমি কইলাম, “হ, কেমনে বুঝলেন?” কয়, “জুতা দেইখা”। এটা আছিলো পোয়েট্রি বুকশপ, হ্যারল্ড মনরোর, মাত্রই গুছাইয়া উঠতেছিলো। উনি কইলেন, “কবিতা লেখেন?” আমি কইলাম, “যা নাজেল হয় তা কবুল করি”। তারপর উনি কইলেন, “আপনের তো তাইলে আপনের দেশের লোকরে চেনার কথা। এজরা পাউন্ড।” আমি কইলাম, “আমি তো এনার নাম শুনি নাই।” আসলেই আমি শুনি নাই। আমি সাহিত্য ম্যাগাজিন এড়াইয়া চলতেছিলাম, মানে ঐগুলা খুবেকটা পড়তাম না, আর গসিপের প্রতিও আমার কখনো ইন্টারেস্ট আছিলো না। তো, ফ্লিন্ট কইলেন, “আমি তারে কমু আপনের কথা।” এরপর আমি পাউন্ডের কাছ থেইকা কার্ড পাইছিলাম। পাইবার দুই তিন মাসের মধ্যে ঐটা ইউজ করি নাই।

ইন্টারভিউয়ার: পাউন্ড আপনের বই “এ বয়’স উইল” দেখছিলেন পাবলিশ হইবার আগেই, না? এইটা কেমনে ঘটছিলো?

ফ্রস্ট: বইটা অলরেডি পাবলিশারের হাতে ছিল, কিন্তু পাবলিশ হয় নাই। এর মধ্যেই পাউন্ডের লগে আমার দেখা হইছিলো। সেইটা তার কার্ড পাঠাইবার তিন চাইর মাস পরের কথা। কার্ডটা আমার অত পছন্দ হয় নাই।

ইন্টারভিউয়ার: কী লেখছিলো কার্ডে?

ফ্রস্ট: “বাসায় আইশেন, কখনো”, এটাই। পাউন্ড যেইরকম আরকী। তো, এইটারে খুবেকটা আন্তরিক দাওয়াত মনে হয় নাই আমার কাছে। পরে একদিন কেনসিংটনের চার্চ ওয়াক দিয়া হাঁইটা যাইবার সময় আমি কার্ডটা বাইর করলাম, আর পাউন্ডের খোঁজ করতে লাগলাম। পাউন্ডরে তার বাসায় পাওয়া গেলো। আরো আগে আসি নাই কেন তা নিয়া একটু কমপ্লেইন করলো, পাউন্ডিয়ান ওয়েতেই। তারপর কইলো, “ফ্লিন্টের থেকে শুনলাম আপনের একটা বই আছে”। আমি কইলাম, “এখনো হাতে আসে নাই”। সে কইলো, “আপনে এখনো চোখে দেখেন নাই বইটা?” আমি কইলাম, “না”। তারপরে কইলো, “আমরা গিয়া একটা কপি কালেক্ট করি, কী বলেন?” পাউন্ড চাইতেছিলো বইটার ব্যাপারে সবার আগে কথা কইতে। পাউন্ডের ব্যাপারে কইতে গেলে এই কথাটা সামনের দিকেই থাকবে: পাউন্ড সবার আগে জাম্প করতে চায়। সে কখনো অন্যদের লগে কথা কইয়া খবর লইবে না যে, তারা কেমনে জাম্প করবে। তার বদলে নিজের খেয়ালটারে পেটে রাইখা চুপ মাইরা থাকবে। তো, আমার পাবলিশারের কাছে গেলাম আমরা দুইজন; পাউন্ড বইটা নিলো। আমারে দেখাইলো না – পকেটে রাইখা দিলো। আমরা তার ঘরে ফিরলাম। সে তার ব্রিটিশ এক্সেন্টে কইলো, “আপনের বইটারে যদি আমরা পছন্দ করতে চাই, তাতে কি আপনের আপত্তি আছে?” আমি কইলাম, “ওহ, আগাইয়া যান, করেন পছন্দ”। কিছুক্ষণ পড়ার পরে সে এক জায়গায় হাসলো, আর আমি কইলাম যে আমি জানি কোন জায়গাটা পইড়া পাউন্ড হাসতে পারে। আরো কিছুক্ষণ পরে সে কইলো, “আপনে বাসায় চইলা যান। আমি এইটা রিভিউ করবো”। ফলে, আমি কখনো টাচ-ও করি নাই বইটা। আমার কপিটা ছাড়াই আমি বাসায় গেলাম আর পাউন্ড ঐটা রাইখা দিলো। তার হাতে থাকা অবস্থায় খুবেকটা ভালা কইরা ঐটা আমি দেইখা নিতে পারি নাই।

ইন্টারভিউয়ার: ঐটাই ত মনে হয় আপনের কবিতার ফেবারে প্রথম কোনো ইম্পর্টেন্ট রিভিউ আছিলো?

ফ্রস্ট: হ। এটা স্টেটসে ছাপা হইছিলো, শিকাগো থেকে। তবে ইংল্যান্ডে এটা আমারে খুবেকটা হেল্প করতে পারে নাই। ইংল্যান্ডে বইটা বাইর হইবার পরপরই এইটার রিভিউ লেখা শুরু হইছিলো। আমার মনে হয় ইংল্যান্ডে যারা এর রিভিউ লেখছে তাদের বেশির ভাগই জানতো না যে, শিকাগোতে অলরেডি এই বইয়ের রিভিউ পাবলিশ হইছে। হাবভাবে মনে হয় নাই যে তারা জানে। তবে আমার রেপুটেশানের শুরুয়াত হইবার ক্ষেত্রে পাউন্ডের রিভিউটার একটা ভূমিকা তো আছে। আমি সবসময় একটু রোমান্টিক-ই ফিল করছি এইগুলা নিয়া – আজব একটা অ্যাডভেঞ্চার সে আমারে দিছিলো। আর, ইংল্যান্ডে তার পজিশানটা আছিলো মিক্সড, এবং খুব ইন্টারেস্টিং। ইয়েটস, হিউফার [ফোর্ড মেডক্স ফোর্ড], এবং আরো ম্যালা লোকের লগে তার ফ্রেন্ডশিপ আছিলো।

… … …

ইন্টারভিউয়ার: যখন লন্ডন ছাইড়া গ্লোস্টেশায়ারে একটা ফার্মে থাকতে শুরু করলেন, তখন কি আপনের এইরকম ফিল হয় নাই যে লন্ডনে নিজের যে সাহিত্য সার্কেল আপনে বানাইছিলেন তার লগে এইটা বেখাপ্পা?

ফ্রস্ট: না, আমার চয়েসগুলা আমার ইংল্যান্ডে যাইবার লগেও কানেক্টেড আছিলো না। ঐ দিনগুলাতে আমার চয়েসগুলা আছিলো অলমোস্ট আনকনশাস। আমি জানতাম না দুনিয়াতে আমার আদৌ কোনো পজিশন আছিলো কিনা, এবং আমি নিজে কোনো পজিশন চুজ কইরাও নিতেছিলাম না। আমি আসলে কোনো গ্যাংয়ের লোক হইবার মতো লোক ছিলাম না। ঐযে ওদেরকে আপনেরা কী বলেন? – ওরা নিজেদেরকে জর্জিয়ান, এডওয়ার্ডিয়ান, এইরকম কিছু বলে – এডওয়ার্ড মার্শের আগ্রহ আছিলো যেইসব লোকজন নিয়া, আমি চাইতাম এইসব গ্যাংয়ের লগে যাতে আমার পরিচয়টা মিক্স না হইয়া পড়ে। এডওয়ার্ড মার্শ ওনার বইয়ে আমার কথা লিখছেন, তবে ওনার লগে আমার মোলাকাত হয় নাই কখনো।

ইন্টারভিউয়ার: লন্ডনে আপনের দেখা সাহিত্যিক লোকজনদের মধ্যে কি এই গ্যাং ফিলিং খুব আছিলো?

ফ্রস্ট: হ, হ। হাইস্যকর অবস্থা। আমার মনে হয় এইখানেও ব্যাপারটা এইরকমই। ঠিকমতো জানিনা যদিও। আমি তো এইসব জায়গায় “বিলং” করি না। যাই হোক, লন্ডনে তারা এইরকম বলতো, “ওহ, ঐযে অমুক, ওনার লেখায় তো মাটির গন্ধ আছে, ঐযে ঐ ক্রাউডদের জন্য উনি লেখেন। তোমাদের আমেরিকায় এইরকম কেউ আছে?” এইসব কথাবার্তা যেন সেট করা আছে, বুঝলেন? যেমন ধরেন মেইসফিল্ডের কথা – গ্যাংয়ের লোকেরা মেইসফিল্ডের ব্যাপারে জানেনা, কিন্তু – “ওহ, ঐ লোকটা, ভালো কাজ করে, ঐযে ঐ ক্রাউডের জন্য”।

… … …

ইন্টারভিউয়ার: আপনে যখন কবিতা লেখতে শুরু করলেন তখন এমন কোনো কবি কি আছিলো যারে সবচেয়ে বেশি এডমায়ার করতেন?

ফ্রস্ট: আমি ঐ তত্ত্বটার ঘোর বিরোধী আছিলাম, স্টিভেনসনের ঐ চিন্তাটা, যে আপনেরে কারোর ধাঁচ নকল করার প্র্যাকটিস কইরা কিছু শিখতে হইবো (you should play the sedulous ape to anybody)। এই জিনিশ এমেরিকান এডুকেশানের যেই ক্ষতি করছে ততো ক্ষতি আর কোনোকিছু করে নাই।

ইন্টারভিউয়ার: আপনে কি আপনের কাজ এবং অন্য কোনো কবির কাজ এর মধ্যে কোনোরকম সম্পর্ক দেখতে পাইসেন কোনোসময়?

ফ্রস্ট: এইটা অন্য কেউ আইসা আমারে জানাক। আমি জানি না।

ইন্টারভিউয়ার: তবে, ধরেন যখন আপনে রবিনসন বা স্টিভেন্সের কবিতা পড়েন, আপনে কি এমন কিছু পান যেইটা আপনের নিজের কবিতার মধ্যেও আছে?

ফ্রস্ট: ওয়ালেস স্টিভেন্স? সে তো আমার অনেক পরের।

ইন্টারভিউয়ার: আমি বুঝাইতে চাইতেছি, ওনারে পড়তে গিয়া আপনে কোনো –

ফ্রস্ট: কোনো সম্পর্ক পাইছি কিনা আমার লগে? না, এইটা কওয়া যায় না। একবার সে আমারে কইছিলো, “আপনে লিখেন সাবজেক্ট এর উপর”। আর আমি কইছিলাম, “তুমি লিখো টুকরা টাকরার উপর”। পরে তার নেক্সট বইটা যখন আমারে পাঠাইলো, ঐটায় লিখে দিছিলো, “আরো কিছু টুকরা টাকরা”। সে আমার কথাটারে ভালোভাবেই নিছিলো। না, আমাদের লেখার মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছিলো না। এমনে আমরা ফ্রেন্ড ছিলাম। ও আল্লাহ, বহুদ্দূর। আমি জানিনা কার লগে আমারে কানেক্ট করা যাইতে পারে।

ইন্টারভিউয়ার: একবার আমার সামনে আপনে কইছিলেন যে রবার্ট লোয়েল আপনেরে ফকনারের লগে কানেক্ট করার ট্রাই করছেন। উনি কইছেন আপনে নাকি অনেকটাই ফকনারের মতন।

ফ্রস্ট: আমি কইছিলাম এইটা?

ইন্টারভিউয়ার: মানে, আপনে কইছিলেন যে রবার্ট লোয়েল আপনেরে কইছেন আপনে অনেকটা ফকনারের মতন।

ফ্রস্ট: ওয়েল, আপনে জানেন রবার্ট লোয়েল আরেকবার কী কইছিলো? কইছিলো, “আমার গ্রেট-গ্রেট-আংকেলের ডায়ালেক্ট, মানে নিউ ইংল্যান্ড ডায়ালেক্ট, যেইটা ওনার “দা বিগলো পেপার্স” বইয়ে দেখা যায়, ঐটা আর বার্নসের ডায়ালেক্ট একদম সেইম, তাই না?”

[রবার্ট লোয়েল এখানে ওনার পূর্বপুরুষ জেমস রাসেল লোয়েল, আর স্কটিশ কবি রবার্ট বার্নস এর কথা কইতেছিলেন : অনুবাদক]

এইটা শুইনা আমি কইলাম, “রবার্ট! বার্নসেরটা একটা ডায়ালেক্ট না। স্কচ একটা ডায়ালেক্ট না, ঐটা একটা ভাষা।” অয় জাস্ট যা-তা কয়।

ইন্টারভিউয়ার: তাইলে কি এইটা কইতে পারি যে, পড়ার ক্ষেত্রে আপনের জানামতে এমন কোনো ধারা নাই যেই ধারার জিনিশপাতি পড়তে আপনে অন্যগুলার তুলনায় বেশি পছন্দ করেন?

ফ্রস্ট: হ, সবই ত পড়ি আমি। আমি যাত্রা করি যেইসব পয়েন্ট থেইকা তার মধ্যে একটা হইলো এন্থোলজির জায়গাটা। আমি এডমায়ার করার মতো কোনো কবি খুঁইজা পাই, আর তখন ভাবি, এইরকম আরো অনেক কিছু পাওয়া যাইতে পারে। পুরাতন কোনো কবিতা, যেমন ধরেন শার্লির “The glories of our blood and state” এর মতো অসাধারণ কবিতা, আমি এর মতো আরো কবিতা খুঁজি। কিন্তু পাইনা। দুই চাইরটা পাই, এর বেশি না। আমার মনে পড়ে, আলাদা আলাদা ছেলেপেলে আলাদা আলাদা কবিতা লইয়া আমার লগে ইন্টারেস্ট শেয়ার করতো। আমার মনে আছে ব্রাউয়ারের লগের একটা ঘটনা – রুবেন ব্রাউয়ার, যে পরে হার্ভার্ডের অ্যাডামস হাউজের মাস্টার হইছিলো – তো, তখন সে আছিলো এমহার্স্টের স্টুডেন্ট, আমি অন্য একজনের ক্লাস লইতে আসছিলাম। আমার মনে পড়ে আমি কইতেছিলাম, “কেউ কি আমারে এই কবিতাটা পইড়া শুনাবা?” কবিতাটা আছিলো “In going to my naked bed as one that would have slept”, এডওয়ার্ডের পুরাতন কবিতা। ব্রাউয়ার এটারে এত ভালো আবৃতি করসিলো যে, আমি তারে কইলাম, “তোমারে আমি আজীবনের লাইগা A দিয়া দিলাম”। নিজেগোর মধ্যে এইরকম মজাটজা আমরা করতাম। অরে আমি আমার কোনো রেগুলার ক্লাসে পাই নাই। এমহার্স্টে আমি মাঝেমধ্যে অন্য ক্লাসগুলায় ভিজিট করতাম, আর অয় আমার চোখে পড়ছিলো অনেক আগেই। অর কণ্ঠটা যে এত দারুণভাবে বসতেছিলো লাইনগুলার উপ্রে, আহা! এত নেচারালি অয় পড়তেছিলো এত কঠিন কবিতাটা। ঐখানে একটা লাইন আছিলো – “The falling out of faithful friends is the renewing of love.” আমি খুবই ক্যাথলিক, এটাই কওয়া যাইতে পারে আমার রিডিং টেস্টের ব্যাপারে। আমি শিকারির মতো খুঁইজা খুঁইজা বাইর করছি। তবে আমি ঐরকম থরো আছিলাম না, পুরানা দিনের জার্মানির শিক্ষিত লোকেরা যেইরকম আছিলো। আমি ঐরকম না। কারোর আগাগোড়া সব পইড়া ফেলতে হইবো – এই আইডিয়ারে আমি হেইট করি। তবে আমি অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করছি, অনেক পড়ছি।

… … …

ইন্টারভিউয়ার: আপনের কবিতার ডিফিকাল্টি মেবি এই জায়গায় যে, আপনে গলার স্বরের টোন নানারকম করার উপর জোর দেন। আপনে একবার বলছিলেন, খেয়ালে বা বেখেয়ালে আপনে গলার টোনের উপরেই ডিপেন্ড করেন, যার দ্বারা নিজের প্রত্যেকটা স্টেটমেন্টরে ডাবল মিনিংয়ে নিয়া আসা যায়।

ফ্রস্ট: হ্যাঁ, যায়। আমি যা বলি তার প্রায় সবটারেই না-বলা কইরা দেয়া যাবে এভাবে। পরস্পর বিরোধী কথা কওয়া – এইটা আমার কবিতায় আছে। আপনে যাদের লগে ক্লোজ, তাদের লগে কথাবার্তায় বিপরীতমুখী ব্যাপার ইউজ কইরা দেখেন। তারা বুঝবে আপনে কী বুঝাইতেছেন। এইযে ইঙ্গিতের মাধ্যমে বলা এবং ডাবল মিনিং আর হিন্ট দেয়ার ভিতর দিয়া কথা কওয়ার পুরা বিষয়টা – পুরাটারে “হিন্টিং” ওয়ার্ডটা দিয়া বুঝানো যায়। যাদের উপ্রে ভরসা আছে তাদের লগে আপনে হিন্টস আর ইঙ্গিতের মাধ্যমে কথা কইতে পারবেন। রীতিমতো ফ্যামিলি ভাইঙ্গা যায় যখন আপনে হিন্টের মাধ্যমে যেইটা বুঝান নাই মানুষ সেইটা বুইঝা নিতে থাকে, আর যেইটা বুঝাইছেন সেইটা বুঝতে না পারে। সাইকোলজিস্টের চোখ দিয়া তাকাইলে দেখবেন এইগুলা ঘটতেছে। কী জানি। না না … আমার কথা কইতেছি না … । দেখেন, আমি কোনো লিটারারি লাইফ কাটাই নাই। এই লোকেরা, এনারা আসলেই তাদের গদ্যের ভিতর দিয়া কাজ করতেছেন, নিজেদের ডেসক্রাইব করতে চাইতেছেন, নিজেদের বুঝতে চাইতেছেন, এবং আরো অনেক কিছু। আমি তা করি না। আমি নিজের বিষয়ে বেশি কিছু জানতে চাই না। এটা আমার ইন্টারেস্ট জাগায় যে, শেপিরো ভাবে আমার লেখা কঠিন না। এই পর্যন্তই। আমি জীবনে কোনো রিভিউ লেখি নাই, কখনো আর্টিকেল লেখি নাই। আমি সবসময়ই রিফিউজ কইরা যাইতেছি আর্টিকেল লিখারে। এই লোকেরা সবাই লিটারারি ম্যান। আমার অনেক সময় নাই; আমি এই কাজে সময় দেই না আরকী। আমি কৃষক না, আমি ভাবও নিতেছি না। তবে আমি চাষবাস করছি কিছু, এবং আমি এটাসেটা কইরা বেড়াই। এবং আমি হাঁটাচলা করি, এবং অন্য মানুষদের সাথে থাকি। আড্ডা দিতে বেশ পছন্দ করি। তবে আমি খুবেকটা লিটারারি লাইফ কাটাই নাই, এবং আমি সেইসব গ্যাংয়ের সাথে খুবেকটা ছিলাম না। আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট, না, অনারারি প্রেসিডেন্ট – পোয়েট্রি সোসাইটি অফ এমেরিকার। অনেকদিন পরে পরে আমি যাই ঐদিকে। এবং আমি তাদের ভালো চাই। আমি আশা করি ফাউন্ডেশানগুলা অগোর সবাইরে নিবে, সবার ব্যাপার স্যাপারের খেয়াল রাখবে।

… … …

ইন্টারভিউয়ার: আপনে কি এই কথার সাথে একমত হইবেন যে, বর্তমানে কবিতার জন্য যতো ভালো ভালো প্রাইজ আছে তত ভালো ভালো কবি-ই নাই?

ফ্রস্ট: আমি জানি না। এইরকম জাজ করতে আমি হেইট করি। তারা ভালো কাজ করতেছেন – তারা অবশ্যই ভালো কাজ করতেছেন এইক্ষেত্রে, তাদের ফাউন্ডেশনগুলার থ্রুতে। এখান থেইকা কী বাইর হইয়া আসবে তা আমরা জানি না। আসল ব্যাপারটা হইতেছে, কুরবানি দেয়া আর ঝুঁকি নেয়ার বোধ দুনিয়ার সবচাইতে সেরা টনিক গুলার একটা। এবং এইগুলার সবই যদি আপনে সরাইয়া দেন – যদি এমন কইরা ফেলেন যে কবি হইবার রাস্তায় কোনো ঝুঁকিই নাই, তাইলে আমি নিশ্চিত এর আধ্যাত্মিক স্পিরিটের অনেকটাই হারাইয়া যাবে। মানুষ এই রাস্তায় আসে – রাস্তাটার জন্যই। ঠিক যেইরকম কিছু মানুষ আসমানের উপরে সাউন্ড ব্যারিয়ার ব্রেক করে যাইতেছে, এটাও সেইম ব্যাপার। [কোনো বিমান বা অবজেক্ট যখন শব্দের বেগ পার করে ফেলতে যায়, ঐ মোমেন্টে বাতাসের প্রেশার এবং অন্যান্য কারণে কিছু জটিলতা তৈয়ার হয়। সেইসব জটিলতা ওভারকাম করে যাওয়াটারে সাউন্ড ব্যারিয়ার ব্রেক করা বলে। ফ্রস্ট যে সময় ইন্টারভিউটা দিছেন সেই সময় এটা অতটা পুরান ব্যাপার হয়ে যায় নাই এবং এই লাইনে রিসার্চ ওয়ার্ক চলতেছিলো। : অনুবাদক] একবার পাবলিকলি – চার পাঁচশ মহিলার সামনে – আমারে প্রশ্ন করা হইছিলো যে কেমনে আমি লেখার লাইগা সুযোগ বাইর করি। আমি কইলাম, “গোপনে – যেহেতু এখানে আপনেরা মাত্র পাঁচশ জন, এবং সবাই মহিলা – একটা ছিঁচকা চোরের মতো আমি এর কিছুটা চুরি করলাম, একটা পুরুষ মানুষের মতো আমি এর কিছুটারে পাকড়াও করলাম – এবং কিছুটা আগের থেকে ছিলো আমার ঝোলাতে।” শুইনা মনে হয় আমি ভিখারি, তবে আমার কখনো কনশাসলি ভিখারি হওয়া লাগে নাই। আমি দয়া পাইছি … আমি লাভবান হইছি কলেজগুলা এবং আর সবকিছুর মাধ্যমে। আর এইটা এমেরিকান পন্থার সুবিধাগুলার মধ্যে একটা: আমি যাদের পয়শা পাইছি তাদের কাউরে ধন্যবাদ জানাইয়া পত্র লেখা লাগে নাই আমার। দুইপক্ষের মাঝখানে কলেজগুলা ছিল। কবিতা সবসময়ই ত ভিখারি। স্কলাররাও তা-ই, তবে ভিক্ষা করার কাজটা তাদের হইয়া তাদের কলেজের প্রেসিডেন্টরা করেন।

ইন্টারভিউয়ার: আমি যেইটা কইতে চাইতেছি সেটা হইতেছে, এখন কবিদের লাইগা যতরকম প্রণোদনা আছে তার তুলনায় এইগুলা পাইবার হকদার লোকের সংখ্যা সম্ভবত অনেক কম। এইরকম সিচুয়েশনে কি মিডিওক্রিটি জিনিশটা উপরে উইঠা আসতে পারে না? এবং এই সিচুয়েশনে বরং সেরা কাজগুলিই উল্টা ঢাকা পইড়া যাবার একটা সম্ভাবনা থাকে না?

ফ্রস্ট: আমারে আগেও এই প্রশ্ন করছে। আমি কইছি, আমি জানিনা কোন পরিমাণের অপকারিতা থাকলে কোনোকিছুরে ত্যাগ দেয়া লাগে। এবং আমরা জানিনা অপকারিতার পরিমাণ আমরা কী দিয়া মাপবো। কোনো সাইকোলজি আপনেরে কইতে পারবো না – রেইসে জিতার লাইগা কার লাগবো চাবুক আর কার লাগবো পিঠ চাপড়ানি। আমি যেইটারে মনে করি এইক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে ভালো ব্যাপার, এবং জানতে চাই অন্যরাও এইভাবে দেখে কিনা, সেইটা হইতেছে – আমি একটা কবিতারে দেখি একটা পারফর্মেন্স হিসাবে। আমি একজন কবিরে দেখি একজন স্কিলওয়ালা লোক হিসাবে, ঠিক যেইরকম একজন অ্যাথলেটরে দেখি। একজন পারফর্মার। এবং কবিতায় আপনে বিচিত্র রকমের কাজ করতে পারেন। বিভিন্ন ফিগার আপনে বর্ণনা করতে পারেন, গলার টোন সারাক্ষণ চেইঞ্জ করতে পারেন। আমি সবসময় ইন্টারেস্টেড, যখন আমার মাথায় তিন চারটা লাইন নিয়া কোনো ছন্দ ঘুরতেছে, তখন আমি ঐখানে সেন্টেন্স বসাইতে শুরু করি। সেন্টেন্সগুলা সব একরকমের হয়ে বসলে সেইটা আমার পছন্দ হয় না। সব কবিতা এইরকম : কোনো না কোনো ধরনের পারফর্মেন্সের ভিতর দিয়া এচিভ করা। কেউ একজন [থমাস ন্যাশ] কইছিলেন, কবিতা হইতেছে বুদ্ধি দিয়া গড়া ইমারত। এই কথাটা সম্ভবত বহু আগেরই কোথাও আছে। তো, এখানে বুদ্ধিরে কাজে লাগাইতে হবে। অনেকেই অনেক খাটুনি করে, কিন্তু এই জিনিশটা মিসিং। ফলে সেগুলা ঝিলিক মারে না। আরেকটা জিনিশ যেটা কওয়া দরকার, যেকোনো চিন্তা – পোয়েটিকাল বা অন্যকিছু – যেকোনো চিন্তাই অনেককিছুর জোট হইয়া তৈয়ার হয়। ওল্ড গিবন [এডওয়ার্ড গিবন, The History of the Decline and Fall of the Roman Empire এর রাইটার] এর ব্যাপারে এইরকম বলা হয় যে, উনি যখন মারা যাইতেছিলেন এবং উনি ইতিহাসের ঘটনাগুলিরে যেইভাবে লিখতেছিলেন তা প্যারালালি ঘটতেছিলো। সব চিন্তাই অনেককিছুর মিলনে তৈয়ার হয় : সামনে যা আছে তা আপনের মনে এমন কিছুর জন্ম দেয় যা আপনে জানতেনই না যে আপনের ভিতরে আছে। এইটা সেইটা নানাকিছু একলগে জোড়া দেয়া, এইভাবে ক্লিক করে বিষয়গুলা।

ইন্টারভিউয়ার: কীভাবে এই জোড়া দেয়ার ব্যাপারটা কাজ করে তার একটা উদাহরণ দিতে পারবেন?

ফ্রস্ট: ওয়েল, আমার কাব্যনাট্য দুইটার একটায় এইরকম জোড়া দেয়ার ব্যাপার আছে। গড কইলেন, “আমি জাস্ট ডেভিলরে দেখানোর জন্য এমন করতেছিলাম, জব।” জব ধাঁধায় পইড়া যায়, প্যারা খাইতে থাকে। গড কইলেন, “তোমার নারাজি আছে?” “না না”, সে কইলো। “না” – এই টোনটা খেয়াল করেন – “না”। এই টোনটাই সব, যেইভাবে এই “না”টা কওয়া হয়। আমি খেয়াল করছি এই জিনিশের লাইগা-ই আমি ঐভাবে লিখছি। জাস্ট এই এক জিনিশই এইটা তৈয়ার করছে।

ইন্টারভিউয়ার: আপনের অন্য কাব্যনাট্যটা – A Masque of Mercy – ঐখানেও কি এইরকম প্রেরণার ঘটনা আছে?

ফ্রস্ট: আমিই দুনিয়ার ইতিহাসে প্রথমবার এইটা খেয়াল করছি যে জোনাহ্’র কাহিনীর মূলকথা হইতেছে দয়া। বাইবেলের শুরুর দিকের কোথাও এইরকম আছে, যদি দশজন পাওয়া যায় শহরে, তাইলে কি ছাইড়া দিবা শহরটারে? দশজন ভালা মানুষ? কিন্তু জোনাহ্’র কাহিনীতে যা আছে তা আরো বেদনার। জোনাহ্ নির্দেশ পাইছে শহরটায় যাইতে এবং শহরটা যে ধ্বংস হবে সেইটা ঘোষণা করতে – এবং জোনাহ্ জানে (এইটা এড়াইতে গেলে) গড তারে পরাস্ত করবেন। সে এইটা বিশ্বাস করতে পারে না যে গড নির্দয় হইতে পারে। গড আর যাই হন, নির্দয় হইতে পারেন না। সুতরাং সে দূরে চইলা গেলো এবং – এবং তিমির পেটে প্রবেশ করলো। এটাই এখানে মূল ব্যাপারটা এবং এইটা কেউ খেয়াল করে না। তারা এইটা মিস কইরা যায়।

… … …

ইন্টারভিউয়ার: “মুহূর্তের দরকারে” জোড়া লাইন বান্ধা – এইটা কি শিডিউল বাইন্ধা লেখালিখি করা টাইপের ব্যাপারই না? আমি এক ইয়াং কবিরে চিনি যিনি দাবি করেন তিনি প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেইকা নয়টা পর্যন্ত লেখালেখি করেন, সম্ভবত ক্লাসের আগ পর্যন্ত।

ফ্রস্ট: ওয়েল, কোনো কাজ করার একাধিক রাস্তা থাকতে পারে। আমি জানিনা তার রাস্তাটা কেমন। আমার ক্ষেত্রে বলতে গেলে, আমার মাথায় যখন কিছু একটা ঘুরতে থাকে, আমি চাই না যে আমি খালি – কেমনে বুঝাই … একদম প্রথম যেই কবিতাটা আমি লেখছিলাম, আমি ইস্কুল থেইকা ফিরতেছিলাম আর তখন সেইটা বানাইতে শুরু করছিলাম – মার্চ মাসের একটা দিন ছিল এইটা – আমি সারা বিকাল ধইরা কবিতাটা বানাইতে ছিলাম, এইটা করতে করতে আমি আমার দাদীর বাসায় যাইতে লেইট করছিলাম যেখানে আমার ডিনার করার কথা। আমি কবিতাটা শেষ করছিলাম, কিন্তু তারপরেই এইটা পুইড়া গেছিলো, জাস্ট পুইড়া গেছিলো। কোন জিনিশটা কবিতাটারে জন্ম দিতে শুরু করছিলো? আর কোন জিনিশটা এইটারে পুড়াইয়া শেষ করলো? অনেকে অনেক কথা বলে, যেগুলা সবই ভান, কবিতার জন্য তারা কত কী ত্যাগ দিছে, লেখতে কত কত যন্ত্রণা এইসব। আমার একটা কথারে প্রায়ই কোট করা হয়, “রাইটারের চোখে পানি না আসলে, রিডারের চোখেও আসবে না। রাইটার সারপ্রাইজ না হইলে, রিডারও সারপ্রাইজ হবে না।” কিন্তু আরেকটা ব্যাপারেও আমি স্পষ্ট : কষ্ট যতই হোক, এটা নিয়া মাথা চাপড়ানির কিছু নাই। মাথা না চাপড়াইয়া দুঃখ ভোগ করো। কীভাবে আমি, কীভাবে যে কেউ, কোনোকিছুর সাথে ভালো টাইম কাটাবে যেইটা তারে খুব খুব যন্ত্রণা দেয়? কীভাবে? আমি কী বলতে চাই তা তো আছে, কিন্তু আমি ঐটা লিখতে গিয়া কতটা মারাত্মক ভালো সময় কাটাইসি – এইটা ব্যাপার। পুরা জিনিশটাই হইতেছে পারফর্মেন্স আর স্কিল আর জোড়া লাগানো। কেন ক্রিটিকরা এইগুলা নিয়া কথা কয় না – কীসের প্রভাবে কেউ কোনোকিছুরে মাথা থেইকা সরাইয়া দেয়, আবার কীসের প্রভাবে সেইটা মনে আসে, কোন কথা থেইকা কোন কথা কেমনে মাথায় আসে? কেন তারা এইসব নিয়া কথা কয় না? সবই হইতেছে স্কোরিং। আপনের স্কোর করা লাগবো। তারা কয় না, কিন্তু আপনারে স্কোর করতে হইবো, যেকোনো ক্ষেত্রেই – থিওলজি, পলিটিক্স, এস্ট্রোনমি, ইতিহাস, আর আপনের চাইর পাশের কান্ট্রি লাইফেও।

(সিলেক্টেড অংশ)

Series Navigation<< আমি সবসময় লিখতে লিখতে অনুবাদ করতে থাকি – অরুন্ধতী রায়একটা ভালো রোমান্স ফিল্ম সবসময় নিঃসঙ্গতার ফিলিংটার উপর নির্ভর করে – ওং কার ওয়াই >>
The following two tabs change content below.
Avatar photo

লাবিব ওয়াহিদ

কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →