আজিকার মানুষের পলিটিকাল বাস্তুসংস্থানঃ প্রিকন্ডিশন ও প্রায়োরিটি Featured

১
নেটফ্লিক্সে মুভ নামে একটা ডকুমেন্টারি সিরিজ আছে। নাচানাচির লাইনের সেরাদের লাইফ লইয়া বানাইছে। ওইখানে একটা পর্ব আকরাম খানরে লইয়া। আকরাম বিটিশ বাংলাদেশী ড্যান্সার, কোরিওগ্রাফার। উনি উনার লাইফের কথা কইতে গিয়া এক জায়গায় বিলাতে উনার ফেমিলির স্ট্রাগলের কথা কইলো।
উনার বাপ রেস্টুরেন্টের বিজনেসে নামছিল। খুব স্ট্রাগল করতে হইছে। দিনরাত খাটতে হইত। তারপর রাত্তিরে যখন একটু ঘুমানোর ফুরসত হইত, তখনই বারফেরত বিটিশ জুয়ান পোলাপান আইসা রেসিস্ট গালাগালি করতো। ঢিল ছুইড়া রেস্টুরেন্টের কাচ ভাইঙ্গা ফেলত। আকরাম কইতেছেন, এমন না এগুলি বছরে এক দুইবার ঘটত; এইটা ছিল একটা রেগুলার ঘটনা। আকরাম রাগে ফুসত, তেইড়া জওয়াব দিতে চাইত। কিন্তু উনার বাপ উনারে আটকায়ে দিত। কেন আটকায় দিত? কেন গ্যাঞ্জামে যাইতে চাইত না? আন্দাজ করি, ফিউচারের কথা ভাবত, যে পয়সা ইনকাম করা যাইত তাতে ওইখানে উনাদের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার বাস্তব সম্ভাবনা দেখতে পাইতেন, সেই পর্যন্ত এগুলি সইয়া যাওয়ার কথা ভাবতেন, ফলেই এত হিউমিলিয়েশনের পরেও ওই দেশ ছাড়ার কথা ভাবেন নাই।
চিন্তা করেন সিমিলার পজিশনে বাংলাদেশে উনারা পড়ছেন, গ্যাঞ্জাম হয়ত করতেন একটু, কিন্তু দিনের পর দিন চলতে থাকলে দেশ ছাইড়া যাওয়ার কথাই ভাবতেন। লোকে সেইসব জায়গায়ই থাকে বা থাকার জন্য স্ট্রাগল করে, যেইখানে তার উন্নতির সম্ভাবনা আছে, ফিনানশিয়ালি সিকিউরড লাইফ। এইভাবে মোটামুটি এক দুই জেনারেশন পার হইলেই লোকেরা লোকদের পলিটিকাল রাইটস লইয়াও ভোকাল হইতে শুরু করে। ওয়েস্টে নানান কিসিমের পলিটিকাল মুভমেন্ট দেখা যায় তাই। রেসিজমবিরুধী মুভমেন্ট বা, ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট বা, এলজিবিটি মুভমেন্ট এই কারণে ওইখানে বেশি পাইবেন। কেন এমন মুভমেন্ট ওইখানে লোকেরা করতে পারে, কারণ ওইখানের লোকেরা ওইখানেই তাদের ফিউচারটা দেখতে পায়। সাথে মুভমেন্ট করারও পরিস্থিতি ওইখানে থাকে। তো এইরকম একটা স্টেবল ফিউচার প্রজেক্ট করতে ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটির দরকার হয়, যেই স্ট্যাবিলিটি থাকলে লোকে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবে না। ওই জায়গায় পইড়া থাকে।
২
কিন্তু ওই জায়গায় পইড়া থাকাই তো সব না। মানে ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটিটাই সব না। তাইলে সৌদি, চায়নার লোকজনও ওয়েস্টে যাইতে চাইত না। তাইলে আরেকটা যে জিনিস দরকার তা হইল নিজের রাইটগুলারে স্ট্যাবলিশ করতে পারার স্কোপ। মানেই মুভমেন্টের স্পেস। ওই যে রেসিজমবিরুধী মুভমেন্ট, ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট, এলজিবিটি মুভমেন্ট, ক্লাইমেট মুভমেন্ট, উনাদের সকল মুভমেন্ট তবুও কারে লক্ষ্য করে? একটা ডেমোক্রেটিক গবর্নমেন্টরে লক্ষ্য করে। ডেমোক্রেসি ভালো, কারণ ডেমোক্রেসি ত্রুটিহীন তা নয়। আমরা তো দেখলামই আকরামের ফেমিলিরে কেমন জেনোফোবিয়ার, রেসিজমের শিকার হইতে হইছে। পশ্চিমে এগুলি সবই আছে, তা ইউরোফাইলেরা যতই রোজি দেখানোর চেষ্টা করুক। ওইখানের কেরামতিটা হইতেছে ওইখানকার পাবলিক তাদের নিজেদের পলিটিক্স লইয়া সক্রিয় হইতে পারতেছে। সেই স্পেসটা আছে।
তো একটা দেশের মানুষরে যদি ওই দেশটা ওউন করতে হয়, তাইলে দুইটা প্রিকন্ডিশন ফুলফিল করা লাগে; একটা ইকোনমিক প্রিকন্ডিশন, যেইটার ফলে পাবলিক দেশটায় থাকতে চাইবে, আরেকটা হইল পলিটিকাল প্রিকন্ডিশন- যেইটা থাকলে সিটিজেন তার পুরা ডিগনিটি লইয়া থাকার জন্য তৎপর হইবে, যেইটা ডেমোক্রেসিতে থাকে। ইকোনমিক সলভেন্সি আর ডেমোক্রেসি দুইটাই হইল প্রিকন্ডিশন। এই প্রিকন্ডিশনগুলি ফুলফিল না হইলে সমাজে মানুষের যে শতবিধ পলিটিক্সের উদ্ভাবনা ঘটতে পারত সেইটাই আর হয় না।
এই দেশে এনভায়রনমেন্ট লইয়া কোন কামের কাম হইতে পারে না ক্যান? বা এলজিবিটির কথা তো ভাবতেই পারেন না। ফেমিনিস্ট ডিসকোর্সগুলাও তো নাই বা, আদিবাসী আন্দোলনগুলাও তো ইনভিজিবল। বা ক্রসফায়ারবিরুধী বা ফাসীবিরুধী পলিটিক্স সবই তো নিজেদের মইধ্যে আলাপ রইয়াই ফুরাইতেছে, পাবলিক ডিসকোর্স হইতেছে না বা মুভমেন্টে গড়াইতে পারতেছে না। কারণ সরকারের কাছে এগুলি নিয়া কাজ করার কোন পাবলিক ম্যান্ডেট নাই। ম্যান্ডেট ছাড়া সরকারের যেকোনো কামই আরবিট্রারি। এমন কামে কোন কিছুই টেকসই হয় না, সমাজে দেখা যায় বিভেদের ঘনঘটা। এই মাইক্রোপলিটিকসগুলি এক্টিভেট করতে হইলেও পলিটিকাল প্রিকন্ডিশন ফুলফিল করতে হইবে তো!