Main menu

সাহিত্য এবং আর্টে কিছু ভড়ং, কিছু মহৎ এটিচিওড ঢুকে গেছে, যেগুলা ডেনজারাস – চেসোয়াফ মিয়শ

This entry is part 26 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

চেসোয়াফ মিয়শের ইন্টারভিউ তরজমা করবার ইচ্ছা আমার হইছিলো মেইনলি এই কারনে যে, কবি হিশাবে উনি একজন ইন্টারেস্টিং কেইস। তার জীবন এবং আইডেন্টিটি নানারকম কন্ট্রাডিকশন ও কনফ্লিক্টে ভরা। আর এই সমস্ত কনট্রাডিকশনের ফলে, এবং একটা নিদৃষ্ট আইডেন্টিটির অভাবে, উনি একভাবে রিলেট করতে পারছেন মডার্ন এইজে মানুশের ওভারঅল সিচুয়েশনের সাথেই। এই সমস্ত কনট্রাডিকশন এবং নিদৃষ্ট একটা পজিশনে দাড়াইতে না পারা, নিদৃষ্ট একটা পলিটিকাল পজিশনের ওপর ফেইথ রাখতে না পারা – এইগুলা ওনারে নিয়ে গেছে “দা রিয়েল” এর খোজে। যাকে আপনি খোদাও বলতে পারেন। এবং মিয়শ’কে আপনি মডার্ন এইজের লালন ফকিরও বলতে পারেন। লালন ফকিরও যেমন হিন্দু বা মুসলিম বা জাতপাতের কোনো আইডেন্টিটির ওপরেই নিজেকে বসাইতে পারেন নাই, বরং ট্রান্সেন্ড করছেন সবকিছুর মধ্যে, “দা রিয়েল” এর খোঁজ করছেন, বুঝতে পারছেন যে বাড়ির পাশের আরশি নগরেই সে থাকে, কিন্তু একদিনও তারে দেখতে পান না, মিয়শ-ও তার জীবনে লিথুয়েনিয়ান, পোলিশ, ফ্রেঞ্চ, আমেরিকান, ইস্ট ইয়োরোপিয়ান, ওয়েস্টার্ন, কমিউনিস্ট, লিবারেল কোনোটাই পুরাপুরি হইতে পারেন নাই, আর তিনিও একজন মিস্টিক সাধুর মতো এক ধরনের স্পিরিচুয়ালিটির খোঁজ করছেন, “সায়েন্টিফিক মোড অফ থিংকিং”-কে অপছন্দ করছেন, কবিতাকে মনে করছেন রিয়েলিটি’কে এক্সপ্রেস করার মিডিয়াম – যেটা করার জন্য তিনি ইস্ট এবং ওয়েস্ট এ দুই দুনিয়ার কবিতা থেকেই এলিমেন্ট নিছেন, এবং একইসাথে ইন্ডিভিজুয়াল হইতে চাইছেন আর ইন্ডিভিজুয়ালিটি’কে ডিমিন-ও করতে চাইছেন, এবং নানাভাবে পেসিমিজমের সাথে ডিল করে গেছেন, আর শেষমেশ উনিও বাড়ির পাশের আরশি নগরের পড়শী’কে কখনো দেখতে পান নাই।   

চেসোয়াফ মিয়শের জন্ম ১৯১১ সালের লিথুয়েনিয়া’য়, যেটা তখন ছিলো রাশিয়ান এম্পায়ারের আন্ডারে। কিন্তু এথনিকালি তারা লিথুয়েনিয়ান-ও ছিলেন না। তারা ছিলেন পোলিশ, এবং পোলিশ ভাষায় কথা বলতেন। ছোটবেলা থেকে দাদার লাইব্রেরি থেকে বই পড়তে পড়তে তার ইমাজিনেশন তৈরি হয়। বর্তমান লিথুয়েনিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াস তখন একটা প্রোভিনশিয়াল টাউন, এবং এখানে নানা জাতি, নানা ভাষা, খ্রিষ্টিয়ানিটির নানা শাখার মধ্যে উনি বড় হইছেন, পড়ালেখা করছেন। উনি একইসাথে ফেসিনেটেড হইছেন ডারউইনের থিওরি দিয়ে, আবার উনি ক্যাথলিসিজম’কেও আপন করে নিছেন। আর, আরো পরে যখন আইনস্টাইন তার থিওরি অফ রিলেটিভিটি পেশ করেন, তখন মিয়শ আপ্লুত হন এই ভেবে যে এর মধ্যে দিয়ে সায়েন্স আর স্পিরিচুয়ালিটির একটা কমন গ্রাউন্ড তৈরি হবে। 

একটা পর্যায়ে রাশিয়াতে বিপ্লবের মাধ্যমে জারের পতন হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন জন্ম লাভ করে। এরপর নানা কনফ্লিক্টের পরিপ্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে ভিলনিয়াস ছেড়ে মিয়শ’কে পোল্যান্ডের ওয়ারস’তে [Warsaw] পালায়ে আসতে হয়, যেটা তখন নাৎজি’দের দখলে। ওখানে উনি যোগ দেন সোশালিস্ট রেজিস্টেন্সে। আর, যুদ্ধের পর উনি পোলিশ কমিউনিস্ট রেজিমের কালচারাল এটাচে হিশাবে কাজ করেন। এই সময় ওনার ভেতরে নিজের সাথে নিজের যে বাহাশ চলতেছিলো, সেটা টের পাওয়া যায় ওনার বিখ্যাত নন-ফিকশন বই “দা ক্যাপটিভ মাইন্ড”-এ। একইসাথে কবিতার বইও বের হইতে থাকে ওনার। 

একটা পর্যায়ে উনি পোলিশ কমিউনিস্ট রেজিমের সাথে সম্পর্ক ভেঙে প্যারিসে চলে আসেন। আর এখানে উনি এমন এক সাহিত্যিক-দার্শনিক-ইন্টেলেকচুয়াল সিন্ডিকেটের মুখোমুখি হন, যারা কমিউনিজমের প্রেমে হাবুডুবু খাইতেছেন। কমিউনিজম’কে ত্যাগ করে আসা লোক হিশাবে ওখানে ওনার পজিশন বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। জীবন ভর এইরকম নানা কনফ্লিক্টেই উনি কাটাইছেন। আর আমেরিকায় চলে যাবার পর এবং ওখানে ইউনিভার্সিটি’র টিচার হিশাবে জীবন শুরু করার পর ওনার যেই কনফ্লিক্ট বড় হয়ে দেখা দেয় সেটা হইতেছে উনি তো পোলিশ ভাষার কবি। পোলিশ ভাষার খুবেকটা পাঠক আমেরিকায় ছিলো না। আর পোল্যান্ডে ওনার বই ছিলো নিষিদ্ধ। চোরাই পথে যাইতো বটে, কিন্তু পাঠকের সাথে ইন্টারেকশনের কোনো উপায় ছিলো না। 

বিশ শতকের যাবতীয় মিলিটারি কনফ্লিক্ট এবং ফিলোসফিকাল কনফ্লিক্ট ওনার জীবনের বাস্তবতা’কে শেইপ করছে, আর উনি কবিতায় এইগুলাকে ডিল করছেন। পার্সোনাল ক্রাইসিস থেকে উপরে উঠে এক ধরনের হিউমেন এবং গ্লোবাল ক্রাইসিসের জায়গা থেকে লেখার চেষ্টা করছেন। এই ইন্টারভিউ থেকে কবিতা’কে উনি কিভাবে ডিফাইন করেন এবং কোন জিনিশ’টাকে কবিতার পারপাস মনে করেন – এইগুলার ভালো আইডিয়া পাওয়া যায়। কবিতা লেখার ব্যাপার’টাকে উনি স্পন্টেনিয়াস প্রোসেস মনে করেন নাই, বরং কবিকে চুজিং করতে হবে। কবির সব কথা, সব এক্সপেরিয়েন্স, সব ফিলিং, যা কিছু কবির কাছে ইন্টারেস্টিং – তার সবকিছুই যে রিডারের কাছেও ইন্টারেস্টিং হবে তা তো না। তবে মিয়শ এটাও মনে করেন নাই যে, শুধু রিডারের জন্যই কবিতা’টা লেখা হইতেছে। বরং মিয়শ বলেন যে, উনি একটা অল্টার ইগো’কে ভেবে তার জন্য লিখতেছেন। এবং উনি লিখতে চাইতেছেন যেটা “প্রোপার”, কিন্তু কাব্যিক। আর ওইটা খুব বেশি “রিয়েলিস্টিক” হবে না, তবে ওইটা হবে ট্রুথ, “দা রিয়েল”। 

আর এটা মিয়শ ঠিক নিজেও লিখতেছেন না, বরং তার মতে তার কাছে অনেকগুলা ভয়েস আসে। এটাকে মডার্ন এইজের একটা ক্রাইসিস হিসাবেও মিয়শ আইডেন্টিফাই করছেন, তারকোভস্কি আর নীৎসের মতোই। মডার্ন মানুষ অনেকগুলা ভয়েস দিয়ে আক্রান্ত হইতে পারে। ওই ভয়েস’রা তাকে দিয়ে কবিতা লেখাইতে পারে। মানে, এক ধরনের স্পন্টেনেইটি’কে মিয়শ স্বীকার করতেছেন, যদিও পুরাটা উনি স্পন্টেনেইটি’র উপর ছেড়েও দিতেছেন না। এরকম একটা সরু পুলসিরাতের উপরেই হয়তো আর্ট জিনিশটা এক্সিস্ট করে।

লাবিব ওয়াহিদ
নভেম্বর, ২০২৩

যদিও নোবেল-বিজয়ী চেসোয়াফ মিয়শ নিজেকে পোলিশ কবি মনে করেন “নেটিভ মাতৃভাষা”য় লেখার কারনে, তবে উনি পোল্যান্ডে জন্মান নাই, উনি আধা শতকের বেশি সময় ধরে ওখানে বসবাস-ও করতেছেন না। তবে হ্যা, এই মিস্টিক সাধুর কবিতা আপনি দেখবেন [পোল্যান্ডের] কেডান্সক এর মনুমেন্টে খোদাই করা আছে, ঠিক যেরকম নিউ ইয়র্ক সিটির ট্রানজিট সিস্টেমের পোস্টারেও ছাপানো আছে।   

১৯১১ সালে লিথুয়েনিয়ার সেটেইনিয়া’য় দাদার গরিবি জমিদারি’তে মিয়শের জন্ম হয়। তার দাদা ছিলেন একজন ভদ্রলোক চাষা। মিয়শের মেমোরিতে রুরাল লিথুয়েনিয়া হইতেছে “মিথ এবং কবিতার দেশ”। তার শৈশবের জগত ভেঙে পড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কালে, যখন তার রোড এঞ্জিনিয়ার বাবা আলেকজান্ডার’কে নিয়োগ দেয়া হয় জারের আর্মিতে। মিয়শ এবং তার মা-ও ওনারে সঙ্গ দিছেন, যখন উনি রাশিয়ান যুদ্ধখেত্রের কাছে ব্রিজ বানানোর ডেঞ্জারাস মিশনে কাজ করতেছিলেন।  

পরিবার’টা লিথুয়েনিয়া’তে ফিরা আসে ১৯১৮ সালে। মিয়শ তার জীবনের শুরুর অনেকগুলা বছর সলিচিওডে কাটাইতে পারছেন, যতদিন না পোলিশ লিথুয়েনিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে তাকে কঠোর ফর্মাল পড়াশোনার লাইনে ঢুকায়ে দেয়া হয়। মিয়শ তার প্রথম কবিতার কালেকশন বের করেন তার আর্লি টুয়েন্টিজে, এ পোয়েম অন ফ্রোযেন টাইম [A Poem on Frozen Time]। তার দুই নম্বর কালেকশন থ্রি উইন্টার্স [Three Winters] বের হয় ১৯৩৬ এ। ইউনিভার্সিটি অফ ভিলনিয়াস থেকে মিয়শ একটা ল ডিগ্রি নেন, আর তারপর একটা স্কলারশিপ নিয়ে প্যারিসে এক বছর কাটান, যেখানে তার দেখা হয় তার দূর-সম্পর্কের কাজিন অস্কার মিয়শের সাথে। উনি ছিলেন একজন ফরাসি কবি, এবং তারপর উনি মিয়শের ওস্তাদ হন।    

ভিলনিয়াসে সোভিয়েত রেজিম মিয়শ’কে একটা সময় বাধ্য করে তার ছোটবেলার শহর ছেড়ে ওয়ারস’তে [Warsaw] পালায়ে আসতে, যেটা তখন নাৎজি’দের দখলে। তিনি ওখানকার সোশালিস্ট রেজিস্টেন্সে যোগ দেন। ওয়ারস’র আন্ডারগ্রাউন্ড প্রেস থেকে মিয়শের সম্পাদনায় এন্টি-নাৎজি কবিতার বই ‘দা ইনভিন্সিবল সং’ পাবলিশ হয়। যেখানে তার নিজের লেখাও ছিলো – “দা ওয়ার্ল্ড (এ নাইভ পোয়েম)” নামে একটা কবিতা এবং “ভয়েসেস অফ দা পুওর পিপল” নামে একটা সাইকেল। ওয়ারস’র ধ্বংসের পর উনি কিছুদিন থাকেন ক্রেকাও [Crakow] এর পাশে একটা এলাকায়। স্টেট পাবলিশিং হাউজ এক ভলিউমে ওনার কালেক্টেড পোয়েমস বের করে, যেটার টাইটেল “রেসকিউ”।      

যুদ্ধের শেষে তাকে আবার জায়গা বদলাইতে হয়। তখন মিয়শ পোল্যান্ডের কমিউনিস্ট সরকারের একজন কালচারাল এটাচে হিশাবে কাজ করেন, যার জন্য নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন এ দুইখানেই ওনার থাকা হয়। ১৯৫১ সালে উনি পোলিশ সরকারের সাথে সম্পর্ক ভাঙেন এবং ফ্রান্সে পলিটিকাল এসাইলাম চান, যদিও এর অর্থ ছিলো পোলিশ পাঠক’দের থেকে ভার্চুয়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। ফ্রান্সে কাটানো দশ বছর সময়কালে ওখানকার প্রো-সোশালিস্ট এবং কমিউনিস্ট ইন্টেলেকচুয়াল’দের সাথে মিয়শের সম্পর্ক ভালো ছিলো না। এই সময় ‘সিজার অফ পাওয়ার’ এবং ‘দা ইসা ভ্যালি’ এ দুইটা উপন্যাস লেখা হয় ওনার। এছাড়াও এ সময়কালে উনি লেখছেন ওনার সবচেয়ে বিখ্যাত বই ‘দা ক্যাপ্টিভ মাইন্ড’, যেখানে টোটালিটেরিয়ান চিন্তাভাবনার ডেঞ্জারাস আকর্ষনের ব্যাপারে লেখা হইছে, সাথে ওইসব বন্ধুদের পোর্ট্রে করা হইছে যারা এই আকর্ষনের খপ্পরে পড়ছে। মিয়শ সিমোন ওয়েইল [Simone Weil] এর একজন সমর্থক, এবং ওনার এসে [essay] পোলিশ ভাষায় তরজমা করেন। এছাড়াও নিজের দুই ভলিউম কবিতা পাবলিশ করেন উনি, এবং একটা ইন্টেলেকচুয়াল আত্ম-জীবনীও পাবলিশ করেন, যার নাম ‘নেটিভ রিলম :এ সার্চ ফর সেলফ-ডেফিনেশন’। মিয়শের কবিতা পোল্যান্ডে ব্যান হয়, এবং প্যারিসে ইন্সতিতুত লিতারাচকি থেকে পাবলিশ হয়।           

১৯৬১ সালে মিয়শ আরো পশ্চিমের দিকে মুভ করেন। ৫০ বছর বয়সে উনি নতুন ক্যারিয়ার শুরু করেন স্লাভিক ভাষা ও সাহিত্যের প্রফেসর হিশাবে, বার্কলি’র ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়ায়। যদিও শুরুতে উনি একটা ছোট ডিপার্টমেন্টের এক অচেনা প্রফেসর ছাড়া আর কিছু ছিলেন না, আস্তে আস্তে উনি পপুলার হইতে থাকেন দস্তয়েভস্কি’র উপর তার কোর্সের জন্য, আর ইউনিভার্সিটির বাইরের মানুশ’দের কাছে পপুলার হন ইজবিগনিয়ায়ে হারবার্ট [Zbigniew Herbert] এর কবিতা তরজমা করার জন্য। ইংরেজিতে মিয়শের সিলেক্টেড পোয়েমস পাবলিশ হইতে হইতে ১৯৭৩ সাল। ১৯৭৮ এ আসে তার কবিতার কালেকশন ‘বেলস ইন উইন্টার’। এরপর উনি সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান [১৯৮০ সালে]। ১৯৮১ তে উনি পোল্যান্ডে যান, তিরিশ বছর পর। ১৯৯২ তে উনি জন্মস্থান লিথুয়েনিয়া’য় যান, বায়ান্ন বছর পর।       

নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরে মিয়শ গদ্য আর কবিতার অনেকগুলা ভলিউম পাবলিশ করেন। ওনার গদ্যের কালেকশন’গুলার মধ্যে আছে ‘ভিশনস ফ্রম সান ফ্রানসিসকো বে’, ‘বিগিনিং উইথ মাই স্ট্রিটস’, ‘দা ল্যান্ড অফ উলরো’, ‘চার্লস এলিওট নরটন লেকচারস’, ‘দা উইটনেস অফ পোয়েট্রি’। ১৯৮৮ সালে আসে তার কালেক্টেড পোয়েমস, যেখানে ‘আন-এটেইনেবল আর্থ’ এর একটা অংশ ছিলো। এটার পরে মোস্ট রিসেন্টলি যে কবিতার কালেকশন আসছে সেটার নাম ‘প্রভিন্সেস’। ১৯৯৪ সালে বাইর হইছে ‘এ ডায়েরি অফ দা ইয়ার ১৯৮৮’, ‘এ ইয়ার অফ দা হান্টার’, আর একটা কবিতার কালেকশন ‘ফেসিং দা রিভার’ ১৯৯৫ তে বের হওয়ার কথা আছে। মিয়শ বছরের বেশির ভাগ সময় বার্কলি’তে থাকেন, তবে সামারের একটা অংশ উনি ক্রেকাও’তে কাটান।

এই ইন্টারভিউ’টা প্রাইমারিলি করা হইছিলো মিয়শের বার্কলি হিলের বাসায়, যেখান থেকে নিচে সান ফ্রানসিসকো বে দেখা যায়। ওখানে ওনার সাথে থাকেন ওনার ওয়াইফ ক্যারল এবং টাইনি নামে একটা বেড়াল। আর ইন্টারভিউর আরেকটা অংশ করা হইছিলো একটা লাইভ অডিয়েন্সের সামনে, উন্টারবার্গ পোয়েট্রি সেন্টার, নাইন্টি সেকেন্ড স্ট্রিট ওয়াইএমএইচএ, নিউ ইয়র্কে। বার্কলি’তে কনভারসেশনের ফার্স্ট পার্ট’টা কোনো থামাথামি ছাড়া টানা চার ঘন্টা চলে, যতক্ষন পর্যন্ত না কবি তার হাতঘড়ির দিকে চাইলেন, তারপর তার ইন্টার-লোকুটারের একজস্টেড অবস্থা দেখে তাকে সিমপ্যাথির সুরে কইলেন, “ছয়টা বেজে গেলো, চলো একটু ভোদকা খাওয়া যাক?’   

রবার্ট ফ্যাগেন, ১৯৯৪

ইন্টারভিউয়ার: রিসেন্টলি আপনি লিথুয়েনিয়া’য় গেছেন, বায়ান্ন বছর পর। গিয়ে কেমন লাগলো?

চেসোয়াফ মিয়শ: হৃদয় ছোয়া এক্সপেরিয়েন্স হইলো একটা। আমাকে যত্নের সাথে রিসিভ করা হইছিলো ওই মাটির সন্তান হিশাবে। ইউনিভার্সিটি অফ কাউনাস থেকে আমাকে একটা অনারারি ডিগ্রি দেয়া হইছে। তারপর আমি আমার কাউন্টি’তে গেছিলাম। ঢোকার পথে নেটিভ কস্টিউম পরা একটা প্রতিনিধি দল আমাকে রিসিভ করলো, ওই এলাকার হিশাবে একটা বড় ইভেন্ট হইছিলো। আমাকে একজন অনারারি সিটিজেন বানানো হয় এবং যে কাঠের গির্জায় আমাকে ব্যাপটাইজ করা হইছিলো সেখানে অনেক মানুশের জমায়েত হয় আমাকে দেখার জন্য। তবে অনেক গ্রাম এখন আর নাই। আমাকে ধরে নিতে হইতেছে যে একটা বিশাল সংখ্যক মানুশকে সাইবেরিয়া’তে পাঠায়ে দেয়া হইছে। গ্রাম’গুলার জায়গায় লাল-ইটের ছোট ছোট গোছানো শহর। আমার জন্ম যে জায়গাটায় হইছিলো, ওখানে আমি গেছি। কিন্তু ওখানে কোনো বাড়ি নাই আর। শুধু একটা পার্কের কিছু চিন্ন বাকি আছে। আর নদীটা পলিউটেড। 

ইন্টারভিউয়ার: লিথুয়েনিয়া’তে বড় হওয়ার সময় কোন ধরনের সাহিত্য আপনার ইমাজিনেশন’কে শেইপ দিছিলো?

মিয়শ: এমন একটা জগত কল্পনা করেন যেখানে কোনো টেলিভিশন নাই, রেডিও নাই, কোনো ফ্লিম নাই। এটাই ছিলো আমার শৈশব, ইয়োরোপের একটা প্রোভিনশিয়াল পার্টে। ওই সময় বইয়ের ভূমিকা ছিলো এখনকার চাইতে অনেক বেশি, আর আমি খুব লাভবান হইছি আমার দাদার লাইব্রেরি থেকে, যেখানে বেশির ভাগ বই ছিলো নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরির। যে একমাত্র ম্যাপ-বইটা ওখানে ছিলো সেটা এতোই আউট-ডেটেড ছিলো যে, আফ্রিকার মাঝখানে একটা বিরাট শাদা স্পট ছিলো। সময়ের রহস্য আমার কাছে মারসেল প্রাউস্টের দ্বারা না, বরং জেমস ফেন্টিমোর কুপার দ্বারা উন্মোচিত হইছিলো। ওই সময় ফেন্টিমোর কুপারের মতো লেখক’দের বইয়ের শিশুদের জন্য বানানো শর্ট ভার্শন’গুলা বেশ পপুলার ছিলো। যেমন ‘দা ডিয়ারস্লেয়ার’ এপিকের সবগুলা ভলিউম’কে এক ভলিউমের মধ্যে আঁটায়ে ফেলা হইছিলো। তারপরও এটা আমার উপরে গভীর ছাপ ফেলে, কারন এটা ছিলো একটা ইয়াং হান্টারের আস্তে আস্তে ম্যাচিওরিটিতে আসা এবং ধীরে ধীরে পুর্ব থেকে পশ্চিমে মুভ করতে করতে বুড়া হয়ে যাওয়ার কাহিনি। তার ট্র্যাজেডি ছিলো সে নির্বাসিত হয়েও সিভিলাইজেশন’কে এস্কেপ করতে পারে নাই। এমন লেখক’দের লেখাও আমার পড়া হইছে যারা কখনো ইউনাইটেড স্টেটস এর নাম শুনে নাই, যেমন থমাস মেইন রীড। উনি একজন আইরিশ লোক ছিলেন, যিনি কিছু সময় আমেরিকায় বাস করেন একজন হান্টার হিশাবে, এবং টিচার হিশাবে, আর পরে লন্ডনে থাকার সময় যিনি বাচ্চাদের বইয়ের লেখক হিশাবে ক্যারিয়ার করেন। তার বইতে থাকতো সব রকমের প্ল্যান্ট, এনিমেল আর পাখি – প্রত্যেক’কে একটা ল্যাটিন নাম দিয়ে আইডেন্টিফাই করা থাকতো। এটা আমার জন্য ক্রুশাল ছিলো, কারন ওই টাইমে আমি একজন অর্নিথলোজিস্ট হইতে চাইতাম [অর্নিথলোজিস্ট, Ornithologist – যিনি পাখিদের ব্যাপারে এক্সপার্ট]। আমি সব পাখিদের নাম জানতাম, তাদের ল্যাটিন নাম সহ। এছাড়াও আমার পড়া হইছে কার্ল মে’র লেখা, যাকে গোটা ইয়োরোপের ছোট ছোট ছেলেরা ভালোবাসতো, আর সব ইয়োরোপিয়ান ভাষায় তার বইয়ের তরজমা হইছিলো, কিন্তু আমেরিকায় উনি অচেনা ছিলেন। উনি একজন জার্মান ছিলেন, যিনি পাওনাদারের জেলখানায় বসে এডভেঞ্চার উপন্যাস লেখছেন।    

পরে যখন আমি ভিলনিয়াসে ছিলাম, তখন আমার ফ্লিম দেখা হয়। এখেত্রে আমার এডুকেশন কনটেম্পোরারি আমেরিকার বাচ্চাদের মতোই হইছে। মেরি পিকফোর্ড, লিলিয়ান গিশ, বাস্টার কীটন, চার্লি চ্যাপলিন, এবং পরে গ্রেটা গার্বো, সবাই আমার উপরে ছাপ ফেলছিলো। চাইল্ডহুড রিডিং থেকে কখন আরো ম্যাচিওরড বই পড়া শুরু হইলো সেই লাইনটা আঁকা খুব কঠিন। তবে আমার রুরাল এবং প্রভিনশিয়াল চাইল্ডহুডের কারনে আমি সবসময়ই নেচার নিয়া বইগুলার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলাম, বিশেষ করে যেগুলাতে ইলাস্ট্রেশান থাকতো, রঙিন উডকাট থাকতো – অডুবন, আলেকজান্ডার উইলসন, এবং আরো অনেকের বই। এসব বই নেচারের প্রতি আমার এটিচিওড ডিফাইন করে দিছিলো।  

ইন্টারভিউয়ার: নেচারের কোন দিকটা আপনাকে ফেসিনেট করতো?

মিয়শ: ওয়েল, আমার মহানায়ক ছিলো লিনিয়াস; এই ব্যাপারটা আমার সেরা লাগছিলো যে উনি ক্রিয়েচার’দের নাম দেয়ার একটা সিস্টেম বানাইছেন। নেচারের ব্যাপারে আমার আগ্রহের একটা বড় অংশ ছিলো নাম এবং নাম দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে ফেসিনেশন। তবে আমি একজন হান্টার-ও ছিলাম। আমার বাপও। এখন আমি অনেক শরমিন্দা ফিল করি আমার পশুপাখি মারা নিয়ে। এটা এখন আমি মোটেও করবো না, কিন্তু তখন এটা আমি এনজয় করতাম। আমি একজন ট্যাক্সিডারমিস্ট*-ও ছিলাম। হাইস্কুলে থাকার সময়, যখন বয়স তের কি চোদ্দ হবে, আমি ডারউইন এবং নেচারাল সিলেকশনের উপর তার থিওরি ডিসকোভার করলাম। আমার দারুন লাগছে। আমি নেচারালিস্টস’ ক্লাবে ডারউইনের উপরে লেকচার-ও দিছিলাম। তবে একইসাথে, যদিও এটা একটা স্টেট স্কুল ছিলো, তারপরও প্রিস্ট’রা অনেক ইম্পর্টেন্ট ছিলো। ফলে একদিকে আমার শেখা হইতেছিলো ধর্ম, হিস্ট্রি অফ চার্চ, ডগমাটিক্স এবং এপলোজেটিক্স*; আরেকদিকে আমি শিখতেছিলাম সায়েন্স, যেটা ধর্মকে আন্ডারমাইন করে। ধীরে ধীরে আমি ডারউইনিজম থেকে সরে আসছি তার ক্রুয়েল্টির কারনে, যদিও শুরুতে আমি এটাকে এমব্রেস করতাম। নেচার আসলে পেইন্টিংয়ে আরো অনেক বেশি সুন্দর, আমার মতে। 

[ট্যাক্সিডার্মিস্ট, Taxidermist – যিনি ট্যাক্সিডার্মি’তে এক্সপার্ট। ট্যাক্সিডার্মি হইতেছে মরা প্রানী বা তাদের বডির কোনো অংশ’কে, যেমন মাথা, ডিসপ্লে বা রিসার্চ করার জন্য জীবন্ত প্রানীর মতো প্রিজার্ভ করার প্রক্রিয়া।

ডগমাটিক্স এবং এপলোজেটিক্স, Dogmatics and Aplogetics –  ডগমাটিক্স হইতেছে রিলিজিয়াস থিওলজির সেই অংশ যেটা এর থিওরেটিকাল ট্রুথ নিয়ে কাজ করে। আর এপলোজেটিক্স হইতেছে ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সিস্টেমেটিক আলোচনা এবং আর্গুমেন্টেশনের বিদ্যা। এই দুইটা টার্মের ঐতিহাসিক ব্যবহারের সাথে খ্রিষ্টান চার্চের সম্পর্ক ঘনিষ্ট।]

ইন্টারভিউয়ার: নেচারের প্রতি নেচারালিস্ট আর কবির এপ্রিসিয়েশনের মধ্যে কি একটা কানেকশন দাড়া করানো যায়?

মিয়শ: ডেভিড ওয়াগোনার একটা কবিতা লেখছেন, “দা অথর অফ এমেরিকান অর্নিথলোজি স্কেচেস এ বার্ড, নাও এক্সটিংকট” এই নামে। এই কবিতাটা আমেরিকার একজন লিডিং অর্নিথলোজিস্ট আলেকজান্ডার উইলসন’কে নিয়ে, যিনি একটা আইভোরি-বিলড উডপেকার’কে গুলি করে আহত করার পর পাখিটারে রেখে দিছেন ছবি আঁকার জন্য, কারন পাখিটা তার কাছে নতুন ছিলো। পাখিটা ধীরে ধীরে মারা যাইতেছিলো তার বাসায়। উইলসন এক্সপ্লেইন করতেছেন, তাকে পাখি মারতে হয় যাতে তারা বইয়ের পাতায় বেঁচে থাকতে পারে। কবিতাটা বেশ ড্রামাটিক। তো, সায়েন্সের সাথে নেচারের রিলেশন, এবং আমার সন্দেহ আর্টের সাথে নেচারের রিলেশনও, হইতেছে সায়েন্টিস্ট এবং আর্টিস্টের মাইন্ডের সাথে দুনিয়াটার এক ধরনের সাক্ষাৎ, যেখানে তারা দুনিয়া’কে মুঠির মধ্যে ধরতে চান। আমি বেশি কনসার্নড সায়েন্সের ইমপ্যাক্টে রিলিজিয়াস ইমাজিনেশনের হারায়ে যাওয়া নিয়া। এটা আমাদের সময়ের একটা এসেনশিয়াল প্রবলেমের রুট – এখনকার মানুশ’দের রিলিজিয়াস টার্মসে ভাবতে না পারা। আমি থমাস মের্টনের দ্বারাও ইনফ্লুয়েন্সড হইছি, যার সাথে আমি অনেক বছর যোগাযোগ রেখে গেছিলাম। আমরা ধর্ম আর নেচার নিয়াই বেশি কথা বলতাম। আর, নেচারের প্রতি তার অপ্টিমিস্টিক এবং লার্জলি আমেরিকান এটিচিওডের কারনে আমি বিরক্তি জানাইতাম।    

ইন্টারভিউয়ার: তার মানে, যে ক্যাথলিক ফেইথের মধ্যে আপনাকে বড় করা হইছে সেটা সায়েন্সের ইমপ্যাক্টের চাইতে বড় হয়ে ওঠে? 

মিয়শ: ওহ ইয়েস। কিন্তু সমস্যাটা হইলো এই বিশ শতকে রিলিজিয়াস কবিতা লেখা খুব কঠিন। আমরা যে দুনিয়াটায় আছি সেটা লার্জলি পোস্ট-রিলিজিয়াস। বর্তমান পোপের সাথে আমার বাতচিত হইছিলো। উনি আমার কোনো কোনো কাজের উপর কমেন্ট করতেছিলেন, বিশেষ করে “সিক্স লেকচারস ইন ভার্স”। উনি বলতেছিলেন, আপনি একধাপ আগান, আবার একধাপ পিছায়ে যান। আমি উত্তরে বলি, পবিত্র পিতা, এই বিশ শতকের কেউ কিভাবে এরচেয়ে ডিফারেন্টলি রিলিজিয়াস কবিতা লিখবে? 

ইন্টারভিউয়ার: তখন পোপের রেসপন্স কি ছিলো?

মিয়শ: মুচকি হাসছিলেন।   

ইন্টারভিউয়ার: আপনার বই “দা ল্যান্ড অফ উলরো’তে এইসব প্রবলেম’কে এড্রেস করা হইছে, এবং আপনার জন্য আপনার ওল্ডার কাজিন অস্কার মিয়শের ইম্পরটেন্সের কথাও আছে ওখানে। আপনার কাজের উপর ওনার ইনফ্লুয়েন্স কতটা?

মিয়শ: স্টাইলের দিক দিয়ে বললে, আমি জানতাম যে তার ইনফ্লুয়েন্স ডেনজারাস। তার স্টাইল ছিলো লেট সিম্বলিস্ট, যেটার ব্যাপারে আমার ফিলিং ছিলো যে এই সময়ে এটার মতো লেখা ঠিক হবে না। কিন্তু তার মিস্টিকাল লেখাগুলা, যেমন “দা এপিস্টল টু স্টোরেজ” এবং “দা আর্স ম্যাগনা” – এগুলার এসেন্স’টা – যেমন, দুনিয়ার সৃষ্টি হইছে নন-ফিজিকাল লাইটের ট্রান্স-মিউটেশন হয়ে ফিজিকাল লাইটে রূপ নেয়ার মাধ্যমে – এটা অনেক ইম্পর্টেন্ট ছিলো আমার জন্য। সে তার ইন্টুইশন দিয়া একটা কসমোলজি অফ রিলেটিভিটির ধারনা করতে পারছিলো; তখন সে আইনস্টাইনের কাজের ব্যাপারে জানতো না। সে একটা মোমেন্টের ধারনা করছিলো যখন কোনো স্পেস ছিলো না, ম্যাটার ছিলো না, টাইম ছিলো না; তার ইমাজিনেশনে এই তিনটাই একসাথে মুভমেন্টের মধ্যে ছিলো।

ইন্টারভিউয়ার: আইনস্টাইন’কে ডেডিকেট করে একটা কবিতা আছে আপনার।

মিয়শ: আমি আইনস্টাইন’কে চিনতাম। ইন ফ্যাক্ট, আমি আইনস্টাইন-পুজারী ছিলাম। আমার কাজিন অস্কার মিয়শ বিশ্বাস করতো যে আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি মানবজাতির জন্য একটা নতুন জমানার দুয়ার খুলে দিছে – যেই জমানা’টা হারমোনির, যেখানে সায়েন্স, ধর্ম এবং আর্টের মধ্যে রিকনসিলিয়েশন হবে। আইনস্টাইনের আবিস্কারের পজিটিভ ফলাফল হইতেছে নিউটনিয়ান টাইম এবং স্পেস’কে ইনফিনিট ভাবার থেকে সরে আসা, এবং টাইম ও স্পেস’কে রিলেটিভ হিশাবে তুলে ধরা – যারা আমাদের কসমলোজির ভিতর মিলিত অবস্থায় থাকে, এবং এর মধ্যেকার বিগ ব্যাং এর ধারনা। সেসময় আমি আইনস্টাইন’কে অত্যন্ত সম্মানের সাথে এপ্রোচ করি। আর আমি তারে নিয়া একটা কবিতা লেখি। ওই সময় উনি কনভিন্সড ছিলেন যে পারমানবিক বোমার কারনে পৃথিবি’টা ধ্বংসের দিকে যাইতেছে। এবং একমাত্র সমাধান হইতেছে একটা ওয়ার্ল্ড গর্ভমেন্ট তৈরি করা, যে অস্ত্র নিয়ন্ত্রন করবে। ১৯৪৮ সালে এই স্পিরিট থেকে উনি একটা পেপার লেখেন, এবং সেটা পাঠান পোল্যান্ডের রকলো’তে ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস ফর ইন্টেলেকচুয়ালস’এ। এই কংগ্রেস ছিলো স্তালিনের অস্ত্র পলিসির-ই একটা মুখোশ, এবং রাশিয়ান’রা লেখাটা পড়তে ইনকার করলো। এইরকম সময়ে আমি আইনস্টাইনের কাছে জানতে চাইছিলাম আমার কি পোল্যান্ডে ব্যাক করা উচিত, নাকি প্রবাসেই থাকা উচিত। ওনার চিন্তা ছিলো যে আমার দেশে ফেরা উচিত, এবং এই ব্যাপারে উনি খোলাখুলি ভাবেই জানাইছিলেন।

ইন্টারভিউয়ার: তার সাথে আপনার দেখা হওয়ার প্রেক্ষাপট কি ছিলো?

মিয়শ: আমি পোলিশ এম্বাসির একজন এটাচে হিশাবে ওয়াশিংটনে ছিলাম তখন। এটা আমার জন্য একটা কঠিন সময় ছিলো। আমি ডিসাইড করতে পারতেছিলাম না, পোল্যান্ডের কমিউনিস্ট রেজিমের সাথে সম্পর্ক ভাংবো নাকি ভাংবো না। আইনস্টাইন তখন আমেরিকায় ছিলেন, নির্বাসনে অবশ্যই। এবং আমি তারে খুঁজছিলাম একজন অথরিটি খোঁজার তাড়না থেকে। একদিন নিউ ইয়র্ক থেকে সরাসরি ওয়াশিংটনের দিকে ড্রাইভ করার বদলে আমি দিক বদলে প্রিন্সটন চলে গেলাম। আমার জানা ছিলো যে আইনস্টাইন ওখানে থাকেন। আমার সেন্স অফ আয়রনি সত্তেও তখন আমার নেচার খুজতেছিলো এমন কাওকে যাকে আমি সম্মান করতে পারবো, তারিফ করতে পারবো। আইনস্টাইনের শাদা চুল, তার ছাই রঙের সোয়েট-শার্ট, যেটার সাথে লেগে ছিলো ফাউন্টেন পেন’টা, তার নরম হাত এবং স্বর, সবকিছুই একজন ফাদার ফিগার ও একজন লিডারের জন্য আমার মধ্যে জন্মানো জরুরত’টার প্রতি ইনসাফ করছে। উনি ছিলেন একজন এবসোলুটলি চার্মিং এবং দরদি দিলের মানুশ। উনি আমার এমিগ্রেন্ট হওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। উনি আমাকে রেসপন্ড করছেন ইমোশনাল লেভেলে। উনি বলছিলেন, তুমি তোমার দেশের সাথে গিঁট ছিড়ে ফেলতে পারো না; একজন কবির উচিত তার দেশের মাটি কামড়ে থাকা। আমি জানি এটা কঠিন, কিন্তু এই অবস্থাটার বদল হবে। এটা এরকম চলতে থাকতে পারে না। উনি আশাবাদী ছিলেন যে এই রেজিম পার হয়ে যাবে। একজন হিউমেনিটারিয়ান হিশাবে, উনি ধরে নিছিলেন যে মানুশ একটা রিজনেবল ক্রিয়েচার। কিন্তু আমার জেনারেশন মানুশকে বেশি দেখছে শয়তানি শক্তির হাতে নাচা পুতুল হিশাবে। তো, আমি ওনার মার্সার স্ট্রিটের বাসা থেকে বের হয়ে একরকম নাম্ব অবস্থায় গাড়ি চালায়ে ফিরলাম। আমরা সবাই হাইয়েস্ট উইজডমের কাছে যেতে চাই, কিন্তু শেষে ভরসা করতে হয় নিজের উপরেই।

[ইন্টারভিউ’র একটা পার্ট… ]

Series Navigation<< এমন এক অডিয়েন্স থাকে যারা আসলে কোথাও এগজিস্ট করে না – হা জিনএকটা নভেলের জন্ম একটা কবিতা দিয়া শুরু হয় – গুন্টার গ্রাস >>
The following two tabs change content below.
Avatar photo

লাবিব ওয়াহিদ

কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →