Main menu

ন্যারেটিভের বাইরে সিনামার কি কোনো ফিউচার আছে? – রজার এবার্ট (পার্ট ১)

ট্রান্সলেটরের ইন্ট্রো

এবার্ট ১৯৪২ সালে আম্রিকার ইলিনয় স্টেটে জন্মান। ‘৬৭ সাল থেকে নেক্সট ৪০+ বছর তিনি শিকাগো সান-টাইমস পত্রিকার ফিল্ম ক্রিটিক ছিলেন। ক্রিটিসিজম ক্যাটাগরিতে পুলিৎজার আর হলিউডের ওয়াক অফ ফেইমে স্থান পাওয়া একমাত্র ফিল্ম ক্রিটিক তিনি।

উনার লেখা কেমন?

কমন একটা কথা আছে যে, “ওয়ান পারসন’স প্রিটেনশাস ইজ এনাদার পারসন’স মাস্টারপিস”। গুগলে সার্চ দিলে এবার্টের লেখা নিয়াও পোলারাইজড কমেন্ট পাবেন। তবে, পারসোনালি উনার লেখায় আম্রিকান আউটলুক আর অপ্টিমিস্টিক অ্যাপ্রোচ ফিল করছি খুব। শুধু সিনামা না, সিনামার দর্শকদের প্রতিও একটা দরদ উনার লেখায় টের পাওয়া যায়। জনপ্রিয় বা কমার্শিয়াল সিনামারে উনি গুরুত্ব দিয়া বিবেচনা করতেন। বিনোদন দেয়াই সিনামার বেসিক ডিউটি, কিন্তু ফর্ম হিসেবে আমাদের আরেকটু ভালো মানুশ করার পটেনশিয়ালিটি সিনামার আছে— নানান লেখাজোকায় এমনটা বলছেন। তাঁর মতে, একটা সিনামা ‘কি নিয়া’, সেইটা সেই সিনামার মূল অ্যাস্পেক্ট না, বরং সেই ‘কি নিয়া’টা আসলে ‘কেমনে’ হইতেছে—সেইটাই সিনামা।

তিনি মনে করতেন ভিডিও গেমস কোনদিন আর্ট হইতে পারবে না।

তিনি ২০১৩ সালে শিকাগোতে মারা যান।

******

অনুবাদের লেখাটা প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৭৮ সালে, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার ‘দ্য গ্রেট আইডিয়া টুডে’ বইয়ে। ২০২৩ সালে লেখাটা পড়তে গেলে কিছু জায়গা, স্পেশালি টেলিভিশন নিয়া অংশটুকু অনেক ডেইটেড লাগবে, কিন্তু স্টাইলিস্টিক যেসব টেন্ডেনসির কথা এবার্ট বলছেন, তা এখনও রিলেভেন্ট। এখনও সিনামার ‘কাহিনী’ নিয়াই মাতামাতি চলে দুনিয়া জুইড়া, চলে ‘স্পয়লার অ্যালার্ট’। এখনো সিনামা হয়া আছে গল্পের ভিজুয়ালাইজেশন। অথচ সিনামা-ই একমাত্র আর্ট ফর্ম যেইটা আমাদের প্রতিদিনের ড্রিম আর ডেড্রিমরে হুবহু ক্যাপচার করতে পারে। কিন্তু আমরা হাজারবছর পুরানো থ্রি-এক্ট স্ট্রাকচারের ভিতরে সিনামারে স্টিল বন্দি করে রাখছি। এই বস্তাপচা স্ট্রাকচার বা ন্যারেটিভরে বাদ দিলে সিনামার যে দীঘল দিগন্ত আমাদের হাতছানি দেয়, এই আর্টিকেলে এবার্ট সেই ডাকে সাড়া দিতে বলছেন।

******

আবীর হাসান একা
ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

******

ন্যারেটিভের বাইরে সিনামার কি কোনো ফিউচার আছে?

অন্য যেকোনো আর্টফর্মের চে সিনামা নিয়াই সবচে বেশি আবোলতাবোল সমালোচনা লেখা হয়। কারণ সবচে কম বোঝা-পড়া নিয়া মানুশ সিনামা দেখে, সিনামা নিয়া লেখে। আমাদের মেন্টালিটি এমন যে, আমরা ধইরা নিসি চিত্রকলা, সঙ্গীত বা নৃত্যকলা পুরোপুরি উপভোগ করতে আমাদের আগে থেকে কিছু জানাশোনা দরকার, কিন্তু সিনামার বেলায় আমাদের এইসব বাছবিচার আর জারি থাকে না—আমরা আত্মচেতনা-মেতনা সব বাদ দিয়া দেই আর চুপচাপ বইসা থাকি, যাতে নিখাদ অভিজ্ঞতা আমাদের খাইয়া ফেলতে পারে।

বাজে পরিচালকরা সেলফ-কনশাস শট আর সেলফ-এভিডেন্ট স্ট্র্যাটেজি দিয়া দর্শকদের এটেনশন নিতে চায়। অন্যদিকে, ভালো পরিচালকদের দেখবেন – সিনামার প্রতি তাদের একটা সহজ-সরল ভালবাসা থাকে। তারা জানে টেকনিক্যাল সার্কাস বাদ দিয়া কেমনে সিনামার ফ্লো’টারে সুন্দর করা যায়। সিরিয়াস ফিল্মমেকার হিসেবে মেলাদিন আউট-অফ-ফোকাসে থাকা জন ফোর্ড তার সাক্ষাৎকারে “ইনভিজিবল কাটিং”-এর কথা বারবার বলতেন। বলতেন শ্যুট করার পর এমনভাবে এডিট করো যেন ন্যারেটিভের গতি (momentum) দর্শকের কাছে সবকিছু ছাপায়া হাজির হয়।

১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দর্শকেরা ফোর্ড কিংবা তার এই থিওরি সম্পর্কে জানতো না। তবে তারা জানতো যে ফোর্ড এবং অন্যান্য হলিউড ডিরেক্টরের সিনামা তাদের ভালো লাগে। ক্যামেরার কাজের চে, ‘নায়ক কি নায়িকারে পাবে?’ তা নিয়ে তাদের আগ্রহ বেশি ছিল। একটা লেভেলে তারা ছিল সফল দর্শক, কারণ তারা ছিল প্যাসিভ দর্শক। সিনামারে তারা তাদের সাথে ‘ঘটতে’ দিতো। সত্যি বলতে অন্য কোন আর্ট ফর্ম প্যাসিভ এস্কেপিজমরে ফিল্মের মতন এতটা এনকারেজ করে না।

এইসব কারণে একদম শুরু থেকেই সিনামারে নৈতিকভাবে সন্দেহ করা হইতেছে। ইউলিসিসের মতো বইয়ের জন্য বাকস্বাধীনতার মহান লড়াই চলছে এবং বাকস্বাধীনতা জিতছে। কিন্তু সিনামার বেলায় প্রথম সংশোধনী প্রয়োগের কথা কেউ ভাবে না! অবশ্য আপনি ভাবতে পারেন যে সিনামা সেন্সর হইতেই পারে, মেইবি করা উচিতও! যেমন আদালত চাইলে বলতে পারে যে পেশাদার বেসবলকে কোনো ধরনের সাংবিধানিক সাপোর্ট দেয়া হবে না। আমাদের কাছে সিনামা ছিল একটা নেশা, যার ভিতর লুকানো থাকতো অচিন কোনো রহস্য। আর আমরা ছিলাম সেই সিনামার শিকার, সিনামা দিয়াই আমরা মোরালিটি আর লাইফরে বুঝতে চাইতাম। আমরা যদি ভ্যাটিকান II-এর আগের যুগের ক্যাথলিক হইতাম, তাইলে বছরে একবার গির্জায় গিয়া ঠিকই ডান হাত তুলে অনৈতিক সিনামা না-দেখার শপথ নিতাম।* পুল হল, সেলুন, এমনকি ব্রোথেলের জন্যেও এইভাবে পাবলিক শপথ নেয়ানো হয় নাই, ভাবতে পারেন!

কিন্তু সিনামা আসলে অন্যরকম কিছু। সিনামা, আমাদের প্রথমদিককার পলায়নবাদী ইমোশনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়ায় ছিলো। সিনামা দেখেই আমরা শিখছি কমেডি কাকে বলে। সিনামা দেখেই আমরা শিখছি নায়ক বলতে কি বুঝায়। আমরা জানসি (এবং জানার সময় চিল্লাইসি) যে, নারী ও পুরুষ পারফেক্টলি লজিকাল কাজ করার সময় হঠাৎ কাজ বাদ দিয়া চুমু খায়। এর কয়েক বছর পর আবিষ্কার করলাম আমরা নিজেরাই স্ক্রিন থেকে মুখ ঘুরিয়ে চুমু খাচ্ছি— পৃথিবীর কত প্রথম চুমু যে সিনামা হলে খাওয়া হয়েছে! শৈশবে, সিনামা দেখে আমরা বড়দের রোল প্লে করতাম। আমরা প্রক্সি প্রতিবাদ করতাম। সিনামা দেখে আমরা এমন সব জিনিস শিখছি, বাসনা করছি – আমাদের ডেইলি লাইফে যেসবের ছিঁটা-ফোঁটা আনাগোনা ছিল না।

সিনামা দেখার এই বছরগুলোয় আমরা সিনামারে অতটা সিরিয়াসলি নেই নাই। সিনামাগুলা সরাসরি আমাদের মন, মেমরি আর আচরণে ঢুকে গেলেও চিন্তার ভিতরে তখনও যেতে পারে নাই। কলেজে উঠা ছেলেমেয়েদের কাছে ফ্যাশনেবল বিলিফ ছিলো যে ডিরেক্টর-ই সিনামার অথর, এবং তখন আমরা নতুন ক্যারি গ্র্যান্টের বদলে নতুন হিচকক সিনামা দেখতে হলে যাইতাম। যদিও, তখন পর্যন্ত আমাদের ধারণা ছিলো ভালো সিনামা এক্সপেরিয়েন্স করার জিনিস, ভাবাভাবির জিনিস না। আন্তোনিওনি, ফেলিনি, ট্রুফো বা বুনুয়েল দেখে বের হয়ে বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা হইলে আমরা ঐসব সিনামায় কারা এক্টিং করছে বা কি কি ঘটসে সেগুলাই আলাপ করতাম। কোনো স্পেসিফিক শট বা ক্যামেরা মুভমেন্ট বা ওভার অল ভিজুয়াল স্ট্র্যাটেজি নিয়া আলাপ হইছে বলে মনে পড়ে না।

একই লিমিটেশন ফিল্ম ক্রিটিসিজমেরও ছিলো এবং এখনও আছে। দুনিয়ার সবচে ইজি জিনিস হইলো প্লট নিয়া কথা বলা। গ্রেট গ্রেট ডায়লগ কৌট করাও মজার। নিজেদের সাথে কানেক্ট করে এমন অভিনেতাদের প্রতি আমাদের অটোমেটিক্যালি দরদ কাজ করে। কিন্তু সিনামার মূল বিষয়াদি — শট, কম্পোজিশন, ক্যামেরা মুভমেন্ট, ফ্রেমের ইউজ, স্ক্রিনের একেক দিকে একেক ইমোশন আনা নিয়া কারও আগ্রহ নাই। ‘ক্যাসাবাঙ্কা’তে ইংগ্রিড বার্গম্যানকে বলা হামফ্রে বোগার্টের ডায়লগ আমরা কোনোদিন ভুলবো না, কিন্তু ফ্রেমের কোথায় তাদের প্লেসমেন্ট ছিলো তা আমরা অলরেডি ভুইলা গেছি। মাছেরা যেমন পানিরে টের পায় না, পাখিরা যেমন বাতাসরে ঠাহর করে না, তেমনি ফিল্ম দর্শকরাও ফিল্ম মিডিয়ামরে নোটিশ করে না।

গ্রেট ডিরেক্টররা এইটাই চায়। তাঁরা চায় সিনামা হলে আমাদের সিটের পিছনে দাঁড়ায়া আমাদের মাথা হাতে নিয়া কমান্ড করতে: এইটা দেখো, এবার ঐদিকে তাকাও, এইটা ফিল করো, এখন ঐটা ফিল করো। তাঁরা চায় ঐ মুহূর্তে আমরা যেন আমাদের ইন্ডিভিজুয়াল সত্তা ভুইলা যাই, আমরা যেন ভুইলা যাই যে আমরা যা দেখতেছি সেইটা ‘শুধুমাত্র একটা মুভি’। এইটা মোটেও কাকতালীয় না যে মহাকালের পরীক্ষায় টিকে যাওয়া সিনামারা, যেগুলারে আমরা গ্রেট সিনামা বলি সেগুলা আদতে ‘দর্শকের ছবি’। এই সিনামাগুলা সকল দর্শককে কালেকটিভলি একটা পারসোনালিটিতে নিয়া আসে। এই সিনামাগুলা অনেকে একসাথে দেখতেই বেশি আনন্দ প্লাস এই সিনামারা কালেক্টিভ রেসপন্স ডিমান্ড করে।

আমার ধারণা, যত সময় যাবে তত বুঝা যাবে যে বাজে ডিরেক্টররাই দর্শকদের ভিজুয়াল স্টাইল নোটিশ করাইতে চায়। আপনি পরপর আন্তোনিওনি’র ‘রেড ডেজার্ট’ আর ফেলিনি’র ‘এইট এন্ড আ হাফ’ দেখেন, পার্থক্যটা নিজেই টের পাবেন। আন্তোনিওনি ব্যাপক স্টাডি আর প্রচুর শ্রম দিয়া একটা সেলফ-কনশাস সিনামা বানাইসে যা দেখে আমরা ইন্টেলেকচুয়ালি প্রশংসা করতে পারি, কিন্তু ঐ সিনামা আমাদের বোর করে। অন্যদিকে ফেলিনির ক্যামেরা এতটাই ফ্লুইড যে আমরা তাঁর ফ্যান্টাসির ভিতর আরামসে ঢুকে পড়ি আর মুগ্ধ হইতে থাকি।

এই কথাগুলো বলার পর, আমি একটা প্যারাডক্স হাজির করতে চাই। গত ১০ বছর ধরে আমি টিচারি করছি। ক্লাসে আমরা স্টপ-একশন প্রোজেক্টর বা ফিল্ম এনাইলাইজার ইউজ করে সিনামার কোনো একটা ফ্রেম ফ্রিজ করতাম, এরপর কম্পোজিশন স্টাডি করতাম। অনেকটা ফটোগ্রাফের মতন করে আরকি। গভীর মনোযোগ দিয়া আমরা ফ্রেমের মধ্যে থাকা অবজেক্ট (ক্যারি গ্র্যান্ট আর ইংগ্রিড বার্গম্যানরেও আমরা অবজেক্ট হিসেবে কাউন্ট করতেছি, সরি!) আর ক্যামেরা মুভমেন্ট লক্ষ্য করছি। ইন শর্ট আমরা সিনামার মেকানিজমগুলারে ভেঙে দেখার চেষ্টা করছি। কোন্‌ টেকনিকে ডিরেক্টররা আমাদের কল্পনাগুলা নিজেদের হাতে তুলে নেয় সেগুলা বের করার ট্রাই করছি।

এই কাজে আমরা সিনেমাটিক কম্পোজিশনের মৌলিক কিছু নিয়ম বিবেচনা করছি—যেমন পর্দার ডান দিকটা বাম দিকের চেয়ে বেশি পজিটিভ, বা ইমোশনালি লোডেড এবং ডানদিকের মুভমেন্ট বাম দিকের মুভমেন্টের চেয়ে বেশি স্বাভাবিক বলে মনে হয়। আমরা লক্ষ্য করেছি যে স্ক্রিনের সবচেয়ে শক্তিশালী এক্সিস ঠিক কেন্দ্রে না, বরং কেন্দ্র থেকে সামান্য ডানদিকে। (ডান-বামের এই কারবারের জন্য দায়ী মস্তিষ্কের দুই হেমিস্ফিয়ার। ডান হেমিস্ফিয়ার ইন্টুইটিভ আর ইমোশনাল, অন্যদিকে বাম হেমিস্ফিয়ার এনালিটিকাল এবং অবজেক্টিভ। আর তাই ন্যারেটিভ সিনামার সেন্সুয়াল এস্কেপিজমের সাথে পেরে না উঠে মস্তিষ্কের বাম সাইড র‍্যাশনাল এনালাইসিস অফ করে দিয়া ডান সাইডকে গল্পের ভিতরে হারায়ে যাইতে দেয়।) এছাড়াও আমরা খেয়াল করছি ফোরগ্রাউন্ডের চে ব্যাকগ্রাউন্ডের পাওয়ার বেশি। সিমিলারলি ফ্রেমের নিচের চে উপরের অংশে নজর বেশি পড়ে। ফ্রেমের ডায়াগোনাল রেখাগুলা স্ক্রিন থেকে বের হয়ে যেতে চায় কিন্তু ভার্টিকাল আর হোরাইজোন্টাল রেখারা জায়গামতই থেকে যায়। স্থির অবজেক্টের চে মুভমেন্টের পাওয়ার সবসময়ই বেশি টের পাওয়া গেছে স্ক্রিনে। ডার্ক কালারের চে ব্রাইট কালার স্ক্রিনে বেশি ফুটে উঠে। কিছু ডিরেক্টর ফ্রেমের ভিতরে মোরালিটি আর জাজমেন্ট সেট করতো এবং সেই অনুযায়ী কেরেক্টারদের প্লেস করতো। আমরা কমন কিছু জিনিস আবিষ্কার করছি যেমন ক্লোজ শট সাবজেক্টিভ ফিল দেয় আর লং শট ইক্টু বেশি অবজেক্টিভ। হাই এঙ্গেল কেরেক্টারের গুরুত্ব কমায় দেয় আর লো এঙ্গেল গুরুত্ব বাড়ায়।

ক্লাসে আমরা এইসব আলোচনা করার পর লাইট নিভিয়ে দিয়া প্রোজেক্টরে ডজন ডজন সিনেমাটিক শট শো করছি। এবং আমরা আবিষ্কার করছি যে হিচককের একটা শটও উপরের রুলগুলার বাইরে যায় নাই। আবার কীটনের ‘দ্য জেনারেল’-এর পর আর কোনো কমেডি সিনামাতে এইসব নিয়মের একটাও খুঁজে পাই নাই। আমরা দেখছি যে হাতেগোনা কয়টা গ্রেট সিনামা (প্রতি মাসে বের হওয়া ‘ক্লাসিক’গুলা না, সত্যিকার অর্থেই গ্রেট সিনামা) যত বেশি স্টাডি করি, তারা তত বেশি রহস্যময় আর কানেক্টিং হয়ে উঠে। ডিরেক্টরের ভিজুয়াল স্ট্র্যাটেজির উদ্দেশ্য ধরা গেলেও শেক্সপিয়ারের সনেট ফর্ম-এর মতন তারাও বিশ্বাসঘাতকতা করে না। তারপরেও, সিনামার প্লট নিয়া যে একচেটিয়া-সহজাত আলোচনা চলে তার থেকে মুক্তি পেতে এবং ভিজুয়াল টোটালিটির প্রতি এপ্রিসিয়েশন তৈরি করতে এইধরনের এক্সপেরিমেন্ট অনেক হেল্পফুল।

ডিরেক্টরের ভিজুয়াল কারিগরির টেকনিকাল ট্রুথ, থিওরি এবং ধারণা নিয়া আলোচনা করা আমার মেইন উদ্দেশ্য। এই আর্টিকেলের শেষের দিকে ‘পারসোনা’ সিনামাতে বার্গম্যানের ভিজুয়াল স্ট্র্যাটেজি — স্পেশালি স্বপ্ন (ঐটা কি আদৌ স্বপ্ন?) দৃশ্যে ডান ও বাম দিকের মুভমেন্ট কী মিন করছে, লিভ উলম্যান যখন বিবি এন্ডারসনের চুল সরায়ে দেন, ঠিক ঐ মুহূর্তটারে কেনো আমার মনে হইছে মানুশের পারসোনালিটিরে এক্সপ্রেস করা সেরা ফিল্ম মোমেন্ট — এইসব নিয়াই কথা বলবো। সংক্ষেপে রবার্ট অল্টম্যানের ‘থ্রি উইমেন’ সিনামা নিয়াও লিখবো – ক্যামনে সিনামার শুরুতে মনে হয় এইগুলা জাস্ট স্লাইস অফ লাইফের সিনারিও, তারপর সিনামাটা কিভাবে ব্যক্তিগত রহস্যের দুনিয়ার ঢুকে পড়ে এইসব নিয়াও কথা বলবো।

লিখিত সমালোচনার (সাহিত্য সমালোচনার বাইরে) বড় একটা সমস্যা হইতেছে একটা মিডিয়ামরে আরেকটার সাপেক্ষে আলোচনা করা লাগে, কিন্তু আমার এপ্রোচ হইতেছে সিনামারে সামনে রাখা। পেশাদার ফিল্ম ক্রিটিক হিসেবে কাজ করার ১২ বছর পর এখন আমার চেষ্টা থাকবে সিনামার ৩টা ইন্টারেস্টিং (এবং গোলমেলে) এসপেক্ট নিয়া আলোচনা করা।

সিনামার এক নাম্বার এসপেক্ট হইতেছে – ২০ বছর আগের থেকে এখন আমরা সিনামারে ভিন্নভাবে জাজ করি। সিনামারে ক্যাটাগরি করা, পছন্দ করা সবকিছুই আগের থেকে আলাদা। সেকেন্ড এসপেক্ট হইতেছে: কেন আমরা সব সিনামারেই ন্যারেটিভের ভাষায় জোর করে প্রকাশ করতে চাই, যখন সিনামা ফর্মটাই ন্যারেটিভরে রেসিস্ট করে? এবং এত এত সেরা সিনামারে কেন ভাষায় প্রকাশ করা যায় না? ক্যামনে একটা সিনামারে আমরা এক্সপেরিয়েন্স করি এবং সেই এক্সপেরিয়েন্সটা বই পড়া বা থিয়েটার দেখার চে কতটা আলাদা, এবং সেই ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত কিনা? থার্ড এসপেক্টটা সমালোচকের সাথে দর্শকের সম্পর্ক নিয়া – আগের দুইটা এসপেক্ট বিবেচনা করলেই তিন নম্বরটা বেরিয়ে আসবে।

কিভাবে আমরা সিনামা সিলেক্ট করি, তার কাছে যাই এবং প্রতিক্রিয়া জানাই??

কমন একটা প্রশ্ন। উত্তরটাও অবভিয়াস। ‘ফিল্ম এপ্রিসিয়েশন’ ক্লাসগুলাতে দেখা যাইতো যে, কোনো সিনামার ফটোগ্রাফি সুন্দর, পারফরমেন্স ভালো হইলেই পরের আলোচনা সিনামার ‘মিনিং’-এ চইলা যাইতো। বাজে সিনামা মানেই অখাদ্য, সেগুলা বানানো-ই হয় হলিউডের গড় দর্শকদের জন্য, ১২ বছরের শিশুদের সমান যাদের বুদ্ধি। অন্যদিকে ভালো সিনামাতে থাকতো শিক্ষা বা জ্ঞান। জন ফোর্ডের ‘স্টেজকোচ’রে ওয়েস্টার্ন তকমা দিয়া বাতিল করা হইছিলো কিন্তু একই ডিরেক্টরের ‘গ্রেইপস অফ রেথ’রে মন্দাজনিত ইনসাইটের জন্য বাহ্বা দেয়া হইছে। অথচ দুইটা সিনামার বিষয় আদতে যে একই (হিংস্র প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সেইম স্বার্থে এক হওয়া একদল মানুশ) তা বেমালুম এড়ায়ে যাওয়া হইছে।

যেসব জিনিস সিনামারে অন্যান্য মিডিয়াম থেকে আলাদা করে তুলে, ফিল্ম এপ্রিসিয়েশনে সেইসব দিকগুলাই এড়ায়ে যাওয়া হইতো । লরেন্স অলিভারের অদ্ভুত-সুন্দর সিনামা ‘রিচার্ড টু’ কখনোই কোনো ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় নাই, উল্টা শেক্সপিয়ারের টেক্সট পড়ার জন্য এইটারে ভিজুয়াল এইড হিসেবে ক্লাসরুমে ব্যবহার করা হইছে। অথচ এই ‘ভিজুয়াল এইড’রে কেমনে দেখা উচিত সেইটা নিয়াই আরেকটা ‘এইড’ দরকার ছিল। কিন্তু কার এত সাহস যে বলবে সিনামার আল্টিমেইট কারিগর অলিভার, শেক্সপিয়ার না?

হাই স্কুল লেভেলের কোর্স হিসেবে ‘ফিল্ম এপ্রিসিয়েশন’ এখনও স্ট্যান্ডার্ড। ভার্সিটি লেভেলে আরও সফিস্টিকেটেড পদ্ধতি পপুলার হয়ে উঠেছে। আমার ধারণা এইটা সম্ভব হইছে ৫০’র দশকের শেষে ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ এবং তার প্রাণভোমরা অতারিজম-এর সাথে পরিচিত হওয়ার পর থেকে। সিনামার সিরিয়াস দর্শকদের মাথায় এরপর থেকেই ঘুরতে থাকে— কোনো সিনামার ‘কাহিনী’ সেই সিনামা প্রথমবার দেখার মূল কারণ হইতে পারে না, এমনকি সেকেন্ড টাইম দেখারও কারণ হইতে পারে না, এবং বারবার দেখার কারণ তো হইতে-ই পারে না।

নিউ ওয়েভের মূল কারিগরেরা (ত্রুফো, গদার, শ্যাব্রল, রেনেঁ, ব্রেসঁ, মালে) হলিউড বা তাদের ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষদের মতন প্র্যাকটিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসেন নাই। প্রতিষ্ঠিত কোন ডিরেক্টরের আন্ডারে কিংবা বাণিজ্যিক কি ন্যাশনাল ফিল্ম স্টুডিওতে এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করার পরিবর্তে উনারা সিনামাতেক কিংবা প্যারিসের অন্ধকার সিনামা হলগুলায় ঘন্টার পর ঘণ্টা সিনামা গিলতেন। দুনিয়ার প্রত্যেকটা সিনামারে উনারা ভালবাসতেন (এতটাই ভালবাসতেন যে প্রভাবশালী পত্রিকা কাইয়ে দ্যু সিনামা চালু করার পর পলিসি ছিল সিনামার রিভিউ সেই লিখবে যার ঐ সিনামাটার প্রতি সিম্প্যাথি আছে)। তবে উনারা সবচে বেশি পছন্দ করতেন হলিউডের সিনামা। তার কারণ হিসেবে ত্রুফো বলছিলেন, এক – উনারা ইংরেজি ভাষা জানতেন না, আর দুই – সিনামাতেক-এর পলিসি ছিলো সাবটাইটেল ছাড়া সিনামা প্রদর্শন, ফলে ন্যারেটিভ থেকে বের হয়ে সিনামাটারেই দেখতো হইতো উনাদের।

ত্রুফোর ‘ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ’ সিনামার দুই দশক পর নিউ ওয়েভের ডিরেক্টররা আলাদা আলাদা পথে (শ্যাব্রল থ্রিলার আর গদার র‍্যাডিকাল ভিডিও বানাচ্ছেন) এমনভাবে ছড়িয়ে গেছেন যে এখন আর বিশ্বাস হতে চায় না এককালে উন্সরা একই স্টাইলের সার্পোটার ছিলেন। যদিও একদম শুরু থেকেই প্রচলিত ন্যারেটিভ স্টাইলের প্রতি তেনাদের তেমন আগ্রহ ছিলো না। ১৯৬০ সালে উনাদের সিনামা আজকের চে বেশি র‍্যাডিকেল ফিল হইতো, তারপরেও গদারের ব্রেথলেস বজ্রপাতের মতন এসে সিনামা দেখার প্রচলিত সব দৃষ্টিভঙ্গীকে ঝড়ের মতন উড়িয়ে দিছিলো।

এমন না যে নিউ ওয়েভের আগে ডিরেক্টরদের কেউ চিনতো না বা তারা অদৃশ্য কোন জন্তু ছিল। কিংবা ফ্রেঞ্চরাই প্রথম বলছে যে ডিরেক্টররাই সিনামার মূল কারিগর, তাও না। ইট’স জাস্ট ১৯৫৮-৬২ সালের পর, দর্শকরা প্রথমবারের মতন কাহিনী বা নায়ক-নায়িকার বদলে ডিরেক্টর-এর জন্য হলে যাওয়া শুরু করে। ডিরেক্টরদের জনপ্রিয়তা আগেও ছিলো। ফ্র্যাংক ক্যাপ্রার আত্মজীবনীর নাম-ই ছিলো ‘দ্য নেইম এবোভ দ্য টাইটেল’। ডেমিল, হিচকক, কুকর, ফোর্ডসহ বেশকিছু ইউরোপিয়ান ডিরেক্টরদের দর্শকেরা চিনতো। যদিও বেশিরভাগই বুঝতো না ডিরেক্টর আসলে করেটা কি। ফ্যান ম্যাগাজিনের বদৌলতে মানুশ ভাবতো কাস্টিং-এর সিদ্ধান্ত নেয়াই ডিরেক্টরের মূল কাজ। চরিত্রের জন্য ঠিকঠাক অভিনেতা বাছাইয়ের পর ডিরেক্টরের কাজ বলতে লোকে বুঝতো একশন আর কাট বলা! ‘লরা’র মতন আইকনিক নোয়ার ফিল্ম পরিচালনার চে আইওয়া থেকে জিন সিবার্গরে আবিষ্কার করার কারণেই ওটো প্রেমিঙ্গার বেশি পরিচিত।

কিন্তু এখন একধরণের মেন্টালিটি গ্রো করছে যে ঔপন্যাসিকরা যেমন পারসোনাল পেরেশানি আবিষ্কার করতে উপন্যাস লেখেন, ফিল্মমেকাররাও একই রকম পারসোনাল কারণে সিনামা বানান। ইউরোপিয়ান ফিল্মমেকাররাই প্রথম এইভাবে ফাংশন করা শুরু করেন। বার্গম্যানের সিনামায় ঘুরেফিরে ৩ টা থিম (ঈশ্বরের মৃত্যু, শিল্পীর নীরবতা এবং দাম্পত্য যন্ত্রণা) পাওয়া যাইতো। ইতালিয়ান নিও-রিয়ালিস্টরা সামাজিক অবিচার নিয়া ব্যস্ত ছিলেন। ব্রিটিশ কিচেন সিঙ্ক মুভমেন্টের এঙ্গরি ইয়াং মেনরা এক দশক পর একই কাজ করতে ফিল্মে যোগ দেয়। ফেলিনি গা ভাসান তাঁর সাজানো বাসনা, নস্টালজিয়া এবং অধঃপতনের মিছিলে। এরপর আসে ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ।

হলিউড ডিরেক্টররাও যে একই ভাবে সিনামা বানান তখন পর্যন্ত এইটা কেউ ভাবতে পারে নাই। বার্গম্যানের সিনামা যে পারসোনাল সেইটা খুব সহজে টের পাওয়া গেলেও হিচককের সিনামাতেও যে পারসোনাল থিম (অবসেশন, অপরাধবোধ, সন্দেহ এবং পরিস্থিতি) বারবার ফিরে আসতেছে সেইটা কেউ লক্ষ্যই করে নাই। সম্ভবত সমস্যাটা ছিল যে, বার্গম্যান অনেক কম বাজেটে উনার বিষয়গুলারে রিলেটিভলি সহজ-সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতেন, অন্যদিকে মুভি স্টারদের ক্রেজ দর্শক ও হিচককের থিমের মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়াইতো! যাই হোক, ১৯৬০-এর দশকে সিরিয়াস ফিল্ম দর্শকরা (বড় শহর এবং কলেজ ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক) ইউরোপিয়ানদের ইম্পর্টেন্ট হিসাবে নিলেও হলিউডের সিনেমারে পাতে তুলতো না। তখন মনে হইতো যে সম্পূর্ণ আলাদা দুইটা লেভেল এস্টাবলিশড হয়ে গেছে যাদের উপর ফিল্ম মিডিয়ামটা কাজ করে, এবং লেভেল দুইটার একে অপরের সাথে কোনো লেনাদেনা পসিবল না।

কিন্তু দুইটা ঘটনা ঘটে। একটা হইলো ৬০’র দশকে ম্যাস মিডিয়া হিসেবে সিনামারে টপকায় ফেলে টেলিভিশন এবং সিনামা হলে যাওয়ার অভ্যাসরে একেবারে শেষ করে দেয়। ফিল্ম কোয়ার্টার্লি’র ১৯৭২ সালের জরিপে দেখা যায় একজন সাধারণ আম্রিকান সারাবছর ১২০০ ঘণ্টা টিভি দেখে, আর সিনামা দেখে ৯ ঘণ্টা। দর্শকের এহেন কমতিতে হলিউড তার সিগনেচার বি মুভি বানানো বন্ধ করে দেয়, তখন টেলিভিশন-ই বি মুভি হয়ে উঠে। দর্শকদের জন্য আর “সিনামা” বলে কিছু অবশিষ্ট ছিল না, ছিল কিছু ‘নির্দিষ্ট’ সিনামা (শো বিজনেস পত্রিকা ভ্যারাইটি এর নাম দেয় “ইভেন্ট পিকচার”—যে সিনামা আপনাকে দেখতে হবে কারণ অন্য সবাই সেইটা দেখতেছে)। বেশিরভাগ ইভেন্ট পিকচার ছিলো স্থুল, যেকোনো প্রোপার ডিরেক্টর এইসব সিনামা বিনোদনের জন্য বানাইতে পারতো (উদাহরণস্বরূপ জেমস বন্ড, টাওয়ারিং ইনফার্নো বা এয়ারপোর্ট সাগা’র নাম করা যায়)। কিন্তু ৬০-এর মাঝামাঝি এবং ৭০-এর দশকের শেষের দিকে ইউরোপিয়ানদের মতো আম্রিকান ডিরেক্টরদের প্রোফাইলও দৃশ্যমান হইতে শুরু করে। এরা ছিল ‘পারসোনাল ফিল্মমেকার’। কলেজ সেমিনারগুলাতেও তাদেরকে আগের চে বেশি ওয়েলকাম জানানো হইতো। বার্গম্যানের যন্ত্রণার সাথে এবার যুক্ত হয় মার্টিন স্করসেইজি’র আরবান ভায়োলেন্স আর ক্যাথলিক অপরাধবোধ, রবার্ট অল্টম্যানের সিনামা স্ক্রিনে কমিউনিটি তৈরি করার চেষ্টা, পল মাজুরস্কি’র পরিপাটি সেলফ-এনালাইসিস আর স্টানলি কুবরিকের মাথার ভিতর থেকে সাধারণ মানুশের অনুভূতিরে সিস্টেম করে বাদ দেয়া।

সেকেন্ড চেঞ্জ হইলো: সিরিয়াস ফিল্ম দর্শকদের মধ্যে যখন এই ধারণাগুলোর বদল হচ্ছিলো, ঠিক তখন পাল্প, জনরা আর ম্যাস এন্টারটেইনমেন্টের দুনিয়ায় নিরবে একটা একাডেমিক বিপ্লব ঘটে। তার আগ পর্যন্ত ‘সিনামা’রে সিরিয়াস একাডেমিক স্টাডির যোগ্য বলে মনে করা হইতো না। এখন, পপুলার কালচার তকমা দিয়া বেস্ট-সেলিং বই আর কমিক বইয়ের সাথে সাথে জনরা সিনামাও ক্যাম্পাসগুলোতে প্রবেশ করছে। আম্রিকার সবচে প্রভাবশালী ক্রিটিক পলিন কায়েল এই পরিবর্তনের যৌক্তিকতা দিছেনঃ ‘’সিনামা কালেভদ্রে গ্রেট আর্ট হয়, এখন আমরা যদি গ্রেট বস্তাপচারে প্রশংসা করতে না পারি, তাইলে আর সিনামা হলে গিয়ে লাভ কি?’’ মহতী আবর্জনা? পপুলার কালচারিস্টরা এইসব সিনামারে ‘মহতী আবর্জনা’ বলতেন। কারণ এদের রাফ স্ট্রাকচারের ভিতরে লুকায় থাকতো আমাদের সমাজের শেয়ার্ড মিথগুলা।

এই পরিবর্তনগুলো—অতারিজমের উত্থান, বাণিজ্যিক হলিউড সিনামার সাথে এর মানায় নেওয়া এবং জনসংস্কৃতির প্রতি নতুন সিরিয়াসনেস— মিড সেভেন্টিজের মধ্যে আমাদের সিনামা দেখার রুচি পারমানেন্টলি বদলায় ফেলে। এখন ভাবাই যায় না ২০ বছর আগে কত কম সমালোচক ছিলেন (যখন টাইম ম্যাগাজিন ছিল বাকি সব মিডিয়ার চেয়ে বেশি প্রভাবশালী)। নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য স্যাটারডে রিভিউ এবং হার্পারস/আটলান্টিক গোষ্ঠির সমালোচকরা ছিলেন; এসকোয়ার-এ ডোয়াইট ম্যাকডোনাল্ড ছিলেন উদারপন্থী সাপ্তাহিকগুলোর লোনলি ভয়েস —আর বাদ বাকি সব ছিল “পর্যালোচনা”, “বিনোদন সংবাদ” কিংবা নির্লজ্জ গসিপ।

আর, সিরিয়াস সমালোচকরা এত আন্তরিক ছিলেন যে সিনামাগুলারে কালজয়ী বানায় ফেলতেন। যেমন স্ট্যানলি ক্রামারের ‘অন দ্য বিচ’ সিনামাতে পারমানবিক বিষে বিধ্বস্ত দুনিয়ায় মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা প্রেমিক-প্রেমিকাদের ওয়ালজিং মাটিল্ডা* সুরে তাঁরা কালজয়ী উপাদান খুঁজে পাইছিলেন। ১৯৫৯ সালের এই সিনামার সাথে ১৯৬২ সালে স্টানলি কুবরিকের পারমানবিক কমেডি ‘ড. স্ট্রেঞ্জলাভ’রে পাশাপাশি রাখেন, তাইলেই দেখতে পারবেন ওল্ড আম্রিকান কমার্শিয়াল সিনামার শেষের শুরু আর অটারিজম ও ইভেন্ট সিনামার সূত্রপাত। বিপ্লবের বহু বছর কেটে গেছে, কমবেশি এইটাই এখন বাস্তবতা। স্টারের নামে এখনও সিনামা চলে (জন ট্র্যাভোল্টা’র স্যাটারডে নাইট ফিভার সিনামার ডিরেক্টর জন ব্যাডামরে কেউ চিনে?)। কিন্তু স্টাররাই এখন ডিরেক্টরদের খুঁজে; “ট্যালেন্ট সার্চের” দান এখন ঘুরে গেছে।

(টু বি কন্টিনিউ)

The following two tabs change content below.
Avatar photo

আবীর হাসান একা

জন্ম সিরাজগঞ্জে। ডাকনাম নানুর দেয়া। বিজ্ঞাপন পেশা আর সিনামা নেশা।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →