ফিকশন: মেমোন্তো মরি (Memento mori) – ৫

কিস্তি ১।। কিস্তি ২ ।। কিস্তি ৩ ।। কিস্তি ৪ ।।
৭.০ থ্রি মার্স্কেটিয়ার
ইহুদিরা তখন মুসলমানদের মারতেছিলো প্যালেস্টাইনে, গাজা উপত্যকায়। আর এর লাইগা নিউইয়র্কে মিছিল করতেছিলো কয়েক হাজার মানুষ – কালা, ধলা, মিশ্রবর্ণের এশীয়, আরো অনেকে; সবাই আমরা মানুষ; মানুষ মারার এগেনেইস্টে আছি। কিশোর, মুসা আর রবিনও সেইখানে, মানুষদের সাথে। কিন্তু ওরা মুসলমানও, এই কারণে কিছুটা পাজলড। বাঙালি আইডেন্টিটি’র চাইতে মুসলমান তো মোর গ্লোবাল। কিন্তু খোকাভাই আবার কি যে বোঝায় ওরা ক্লিয়ার হইতে পারে না। উনি শাহবাগের পক্ষে, যদিও হেফাজতরে গালিগালাজ করেন না, কিন্তু প্রি-মর্ডান একটা ফোর্স বইলা এক্সপ্লেইন করেন আর বলেন প্রি-মর্ডান বইলা এইটারে মর্ডানিটি’র বিপক্ষে দাঁড়া করাইও না; তাইলে সেইটা মর্ডানিটিরই একটা তর্ক হইবো। কিশোরও পুরাটা বুঝতে পারে না, কনফিউজড থাকে; এইজন্য খোকাভাই’রে হেল্প করতে চায় তারা। কারণ আর যা-ই হোক, মানুষ হিসাবে উনি ভালো। আর যেহেতু উনি ভালো মানুষ উনি তো কোন খারাপ কাজ করতে পারেন না। ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটগুলা হ্যাক করতে গিয়া খোকা ভাইয়ের সাথে পরিচয় হইছিলো। আর খোকা ভাই-ই দেখাইলো যে, বাঁশের কেল্লার একটা বড় ফান্ড আসে বিজেপি’র কাছ থিকা, মিডলইস্ট থিকাও আসে। সব শালা ডাবল এজেন্ট!
এই মিছিলের শেষ কইরাই ওদেরকে গ্যারাজে ঢুকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হোক আর ইসলামের পক্ষেরই হোক সবগুলা সাইট আজকের রাতের জন্য ডাউন করতে হবে। তিনজনরেই থাকতে হবে। মুসা তো নাচতে নাচতে রাজি। রবিন একটু কাচুঁমাচু করতেছিলো। পরে জানা গেলো, নতুন স্কাইপ-ফ্রেন্ড হইছে ওর, ওই মাইয়ার আওয়াজ না শুনলে নাকি ঘুমাইতে পারে না; মানে, সারারাত ঘুমায়ই না আর কি। ওরে আলাদা রুম দেয়ার কনফার্মশেন দেয়ার পরেই রাজি হইলো আর কন্ডিশন হইলো মুসারে বলা যাবে না। মুসার কোন গার্লফ্রেন্ড নাই। বেচারা কষ্টেই আছে। এই ইনফর্মেশন জানলে মুসা কথা বলার লাইগা পীড়াপীড়ি করবে আর রবিন না করতে পারবে না; আর ও তো মুসার মতো এগ্রিসিভ না; সে খালি সারাজীবন আপুটার সাথে কথা-ই বলতে চায়। অদের এইসব ফিলিংস কিশোরের কাছে অনেক দূরের জিনিস মনেহয়। মনেহয় বড় হয়া সে হয়তো মাসুদ রানা-ই হবে। হয়তো সে মাসুদ রানা’র মতো চুম্বক হবে না; টানবেও না। টানাটানি ভাল্লাগে না। একলা থাকতে চায় সে। খোকাভাইয়ের মতো। লোনলি; বাট নট লুজার।
#
লাস্ট মোমেন্টে এমন একটা প্যাঁচে পড়লো যে, কেউই ছুটাইতে পারতেছে না। তখন কিশোরের মনে পড়লো জিনা’র কথা। এই জিনিস জিনা ছাড়া আর কেউ পারবো না।
জিনার মা বাংলাদেশ থিকা আসছিলো জিনা’র বাপের সাথে তার ফোনে বিয়া হইছিলো। কিন্তু ৩ বছরের মধ্যেই উনাদের ডির্ভোস হয়া যায়। জিনার মা খুব বিপদে পড়ছিলো, তার জামাইয়ের ফ্যামিলি তারে দেখে নাই। তখন তার সপুারস্টোরের ম্যানেজার জন তারে বিয়া করে। জন ছিল নিগ্রো…
কিশোর ওরে দলে নিতে চায় না। কিন্তু কিছু জিনিস আছে যেইটা জিনাই জানে। আর জিনাও জানে যে শে জানে। এই কারণে ওর কোন টেনশন নাই। শে জানে, শি ইজ পার্ট অফ দ্য গেইম।
কিশোর মুসারে কইলো জিনারে ফোন দেয়ার লাইগা। মুসা অবাক হয়া তাকাইলো। ‘ফোন ধরবো আমার?’ কিশোর রাগী চোখে তাকাইলো মুসার দিকে। মুসা একবারের জায়াগায় দুইবার ট্রাই করলো। প্রায় এক মিনিট ধইরা রিঙ্গার বাজলো, কিন্তু কলটা কেউ রিসিভ করলো না। মুসা তাকাইলো কিশোরের দিকে। কিশোর বুঝলো আর কোন উপায় নাই। নিজের মোবাইল হাতে নিয়া জিনারে ফোন দিলো। এইটা যে পারসোনাল কোন জিনিস না সেই সাহস দেখানোর লাইগা স্পিকারে রাখলো ফোনটা।
একটা রিং বাজতে না বাজতেই জিনা আদুরে গলায় বইলা উঠলো, ‘হেলাউ! বস কেমন আছেন?’
কিশোর কোন ইন্ট্রো না দিয়াই কমান্ড করলো। ‘জিনা, আপনারে গ্যারাজে আসতে হবে।’
জিনা জাস্ট এই ডাকটার লাইগাই ওয়েট করতেছিলো, কিন্তু প্যাঁচাইতে লাগলো কিশোররে। ‘এখনই বস? এতো রাতে! একলাই আসবো? কেন বস?’
‘আই নিড ইউ।’ বলার পরেই বুঝলো কিশোর, কি ধরাটা সে খাইছে।
‘এই কথাটা বলতে এতোদিন লাগলো আপনার! সন্ধ্যায় বললেই পারতেন। এতো রাতে মেকাপ কেমনে নিবো?’ জিনা সমানে হাসতে থাকে।
‘দশ মিনিটের মধ্যে আসেন আপনি। আমি ঘড়ি দেখতেছি।’ বইলা ফোনটা কাইটা দেয় কিশোর। মেজাজটাই পুরা খ্রাপ হয়া গেলো।
এতোক্ষণ হাসি ধইরা রাখছিল মুসা। ফোনটা রাখার পরে গড়াগড়ি দিয়া হাসতে লাগলো। রবিন পর্যন্ত পাশের রুম থিকা বইলা উঠলো, ‘থাম ব্যাটা!’ রবিন তো আর শুনে নাই কথাগুলা। সকালে রসাইয়া রসাইয়া বলতে হবে রবিনরে। মুসা ভাবলো।
নয় মিনিট ছত্রিশ সেকেন্ডের মাথায় জিনা আইসা পৌঁছাইলো। খুবই সিরিয়াস শে। তাঁর ল্যাপটপে বইসা কাজগুলি বুইঝা নিলো কিশোরের কাছ থিকা। চেহারা দেইখা বুঝার উপায় নাই এই মাইয়া কি ফাইজলামিটা করছে।
সবকিছু শেষ হওয়ার পরে খোকা ভাই-ই মেসেজ পাঠাইলো ভাইবারে, কিশোররে – ‘ওয়েল ডান, বয়েস!’ কিশোর জিনার দিকে তাকায়া মনে মনে কইলো, ‘অ্যান্ড দ্য গার্ল…’। মুখ হা কইরা জিনা ঘুমাইতেছিল তখন। লালা পড়তেছিল ঠোঁটের কিনার দিয়া। নাক ডাকতেছিল। ঘর্ঘর্রররর…। কিশোরেরও ঘুম পাইলো তখন।