(বাংলা-ক্লাসিক) বিশ্বনবী – গোলাম মোস্তফা [শর্ট ভার্সন।] পার্ট ৫ Featured
১৩. শাদী মুবারক
এই সময়ে মক্কানগরে কোরেশ গোত্রে এক সম্ভ্রান্ত বিধবা মহিলা বাস করিতেন। নাম তাঁহার খাদিজা। এমন সতীসাধ্বী পূণ্যময়ী নারী তখনকার দিনে আরবে আর দ্বিতীয়টি ছিল না। অন্তরের শুচিতায় ও শুভ্রতায় এতই তিনি যশস্বিনী হইয়াছিলেন যে, লোকে তাঁহাকে খাদিজা না বলিয়া ‘তাহিরা’ (পবিত্রা) বলিয়া ডাকিত।
খাদিজার দুইবার বিবাহ হইয়াছিল; কয়েকটি পুত্রকন্যাও জন্মিয়াছিল। দ্বিতীয় স্বামী মৃত্যুকালে অগাধ ধন- সম্পত্তি রাখিয়া গিয়াছিলেন; সেই সূত্রেই তিনি সম্পদশালিনী হইয়াছিলেন। তাঁহার বিস্তৃত বাণিজ্য ছিল। কর্মচারী দ্বারা তিনি নানাদেশে বাণিজ্য চালাইতেন এবং নিজেই সমস্ত বিষয়ের তত্ত্বাবধান করিতেন।
এদিকে আল-আমিনের গুণগরিমাও আরবের সর্বত্র ছড়াইয়া পড়িয়াছে। ত্যাগ, সেবা, সততা ও চরিত্র-মাধুর্য দ্বারা তিনি সারা আরবের হৃদয় জয় করিয়া ফেলিয়াছেন। যতবারই তিনি বাণিজ্য করিতে গিয়াছেন, ততবারই তিনি প্রচুর লাভ করিয়া ফিরিয়া আসিয়াছেন।
এই ধীশক্তিসম্পন্ন প্রতিভাবান যুবকটির কীর্তিকথা বিবি খাদিজার কর্ণে পৌঁছিতে বিলম্ব ঘটে নাই।
এই উদ্দেশ্যে খাদিজা একদিন মুহম্মদকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। দূর সম্পর্কে মুহম্মদ তাঁহার চাচাতো ভাই হইতেন। মুহম্মদ আসিলে খাদিজা বলিলেন: “আমার একটি অনুরোধ আপনি রাখিবেন কি?”
মুহম্মদ বিনীতভাবে উত্তর দিলেন “কী অনুরোধ, বলেন?”
“আমার এই তেজারতির ভার আপনাকে লইতে হইবে। ইহার জন্য আপনাকে আমি দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিব।” হযরত বললেন “আমার চাচাজীর মতামত লইয়া আপনাকে জানাইব।”
মুহম্মদ আসিয়া আবুতালিবকে এ কথা বলিলেন। এ প্রস্তাব তিনি সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করিলেন।
কাফেলা প্রস্তুত হইল। মুহম্মদ বাণিজ্যে চলিলেন। এবার দামেশক অভিমুখে। ইয়াস্রেল, হাইফা, জেরুজালেম প্রভৃতি প্রসিদ্ধ বাণিজ্য-কেন্দ্রের মধ্য দিয়া পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করিতে করিতে মুহম্মদ দামেশকে পৌছিলেন। সর্বত্রই তাঁহার প্রভূত লাভ হইল।
দীর্ঘদিন অতিবাহিত হইয়াছে। বিবি খাদিজা মুহম্মদের আসা-পথ চাহিয়া আছেন। বিধবা হইবার পর বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি খাদিজাকে বিবাহ করিবার জন্য পয়গাম পাঠাইয়াছেন, কিন্তু তিনি কাহারও প্রস্তাব গ্রহণ করেন নাই। আজ এ কী নতন অনভূতি তাঁহার অন্তর-তলে দেখা দিল। খাদিজা কিছুই বুঝিতে পারিলেন না।
একদিন অপরাহে খাদিজা আপন গৃহের চত্বরে দাঁড়াইয়া দিগন্তের পানে চাহিয়া আছেন, এমন সময় দেখিতে পাইলেন: মরুভূমির ওপার হইতে উটের পিঠে চড়িয়া ফিরিয়া আসিতেছেন। একদৃষ্টে তিনি সেইদিকে চাহিয়া রহিলেন। মনে হইতে লাগিল, একটি বিহিশতী রঙিন স্বপ্ন যেন ধীরে ধীরে তাঁহার নয়ন-পথে রূপায়িত হইয়া উঠিতেছে।
মুহম্মদ আসিয়া সমস্ত হিসাবপত্র ও টাকাকড়ি বুঝাইয়া দিলেন। প্রচুর লাভ হইয়াছে দেখিয়া খাদিজা মুহম্মদের উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইলেন। তাঁহার সততা ও বিশ্বস্ততা দেখিয়াও তিনি মুগ্ধ হইলেন।
Continue reading