Main menu

কত সময় গেলে প্রিয়জনরে বিদায় বলার পার্ফেক্ট টাইম হয়? Featured

এই বছর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অব দ্যা ইয়ার হইসে যে ছবিটা সেই ছবিটা মেবি আমরা সবাই দেখসি। যারা দেখি নাই তাদের দেখার জন্য ছবিটা আমি ইনক্লুডো করে দিসি। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন হইলো এইযে ফটোগ্রাফটা ফটো অব দ্যা ইয়ার হইলো- তাতে আসলে কার কি আসে যায়?

না যুদ্ধ বন্ধ হইসে, না একটা বোমা পড়া থামসে, না মানুষের মরা কমসে, না কমসে ক্ষুধার্ত মানুষের পেটের খিদা। যেই ঘটনা গুলা এই ছবিটারে সম্ভব করসে, তার কোনোটাই কি এই ছবিটা বন্ধ করতে সক্ষম?

না, সক্ষম তো না। তাতো আমরা নিজের চোখেই দেখতেসি।

তাইলে আসলে কি লাভ? আবার করি প্রশ্নটা- কার কি আসে যায়? এর মধ্যে দিয়া আমি আরো একটা প্রশ্ন আসলে করতেসি… সেইটা হইলো, এই ডিজিটাল টাইমে যখন প্রতিদিন লাখ লাখ ইমেজ প্রোডিউস হইতেসে, তখন একজন ফটোগ্রাফারের ছবি তোলার মানেটা কি? কি অর্থ বহন করে একটা ছবি, আজকের এই সময়ে? ইমেজের ইফেক্ট কি আমাদের উপর কমতেসে?

ছবিটা আরো একবার দেখি আমরা… প্লাস আমি কি দেখতেসি তা আপনেদেরে আমি বাংলায় তরজমা করেও বলতেসি। যদিও আপনেরা নিজেরাই দেখতে পারতেসেন ইমেজ টা… তাইলে আমি ক্যান আবার ছবিটারে বাংলায় বলতেসি? বলতেসি কারণ আমি কি দেখতেসি তা আমি বলতে চাই। এমনতো প্রায়ই হয় যে আমি যা দেখি আপনে তা দ্যাখেন না… মানুষ শুধু তাই দ্যাখে যা সে দেখার জন্য প্রস্তুত থাকে, বা যা সে দেখবে বলে আশা করে। যা সে দেখতে প্রস্তুত থাকে না, যা তার আশার বাইরে থাকে- তা সে মিস করে যায়। একদম চোখের সামনে থাকলেও। তাই আমি কি দেখতেসি তা আমি আপনেদেরে বলতে চাই। প্লাস ইমেজ নিজেও তো একটা ভাষা… বাংলাও একটা ভাষা… দুইটাই আমি পড়ার চেষ্টা করি, এবং দুইটা দিয়াই আমি লেখারো চেষ্টা করি… এবং ভাষা যখন একটা থেকে আরেকটায় তরজমা হয় তখন অনেক কিছু চেঞ্জ হয়ে যায়, বাতিল হয় আবার অনেক কিছু এডো হয়। লস্ট ইন ট্রান্সলেশন বইলা একটা কথাও চালু আছে। তো সেই ব্যাপারটাই আমি আসলে করতে চাইতেসি। আমি কি বাতিল করলাম বা এড করলাম, বা কি হারায় গেলো আমার এক ভাষা থেইকা আরেক ভাষায় করা তরজমায়। তা আপনেরা আমারে জানান দিতে পারেন।

Continue reading

বুদ্ধিজীবীদের মজ্জার ভিতরেই এই জিনিসটা আছে যে তারা সবকিছু নিয়া ভুয়া আইডিয়া বানাইতে পারে – হানা আরেন্ট

জার্মানির ফ্রেইবার্গ, হেইডেলবার্গ এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন নিয়ে পড়ালেখা করছেন আরেন্ট। তারে পড়াইছেন হেইডেগার, কার্ল জ্যাসপাগো মতো বড় বড় দার্শনিক। তয় তিনি নিজেরে দার্শনিক বলেন না। উনার লেখাপত্তর সব পলিটিকাল থিওরি নিয়ে। তাই নিজেরে মনে করেন এক পলিটিকাল থিওরিস্ট। রাজনীতি আর দর্শনের ভিতর ভাইটাল একটা দ্বন্দ্ব আছে। দার্শনিকরা নিরপেক্ষ থাকতে পারে, আর পলিটিকাল থিওরিস্টগো নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব না, প্লেটোর পর কেউ থাকতে পারে নাই আরকি। দ্বন্দ্ব নাকি আছে নারী-পুরুষের বোঝাপড়াতেও। পুরুষ সবসময় চায় প্রভাব বিস্তার করতে, আর আরেন্টের মতো নারীরা চান সবকিছু বুঝতে। আরেন্ট ইহুদি। জন্মাইছিলেন ১৯০৬ সালে, জার্মানির হ্যানোভারে। বাপ মা ছিলেন ইহুদি সেক্যুলার। তিনি বড় হইছেন আর তার সাথে পাল্লা দিয়া বাড়ছে হিটলারের দাপট। যার শেষ পরিণতি তো ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ইহুদিগো একেবারে মাইরা ফেলা। আর যারা বাঁচছিলো, তারা একেবারে ফিলিস্তিন গিয়া ওঠে। এবং আমরা সবাই জানি, সেইখানে তৈরি হইছে আরেক কাহিনি।

হিটলারের অত্যাচার তুঙ্গে উঠলে দেশ ছাইড়া পালাইয়া আসেন তিনি। ফ্রান্সে ইহুদি সংগঠনগো সাথে কাজ করছেন। ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি গইড়া তুলার সাথে সরাসরি কানেক্টেড ছিলেন। কিন্তু এখন ইসরায়েল সেইখানে যা চালাচ্ছে, সেইডা তিনি দেখতে পারেন না। তাই এখনকার ইহুদি জাতীয়তাবাদিরাও তারে দেখতে পারে না। ১৯৪১ সালে তিনি আমেরিকা চইলা যান। তার একদশক পরে বই লেখালেখির মাধ্যমে একাডেমিক তাত্ত্বিক হিসাবে নিজের অবস্থানডা শক্তপোক্ত কইরা নেন।

রাজনীতিতে একটা জিনিস উনি খুব মানেন। সেইডা হইলো ‘কিছু করা’। ‘কিছু করাডা’-রে উনি অত্যন্ত পজিটিভ হিসাবে দেখেন। আর মনে করেন যে, আমাগো অবশ্যই লাইফের পুরা আনন্দ পাইতে হলে পাবলিক লাইফে আসতে হবে, ‘কিছু করতে’ হবে। আর এইডা তখনই সম্ভব হবে, যখন অন্য মানুষের উপর আমাগো আস্থা থাকবে। কম্যুনিজম নিয়া আরেন্টের বোঝাপড়া বেশ ইন্টারেস্টিং। কম্যুনিস্টগো উনি খুব একটা কাজের মনে করেন না। সমালোচনা করেন অনেক শক্ত কইরা। যুক্তি দিয়া দেখান যে এইডা পুঁজিবাদেরই অন্যরূপ। কিন্তু ওনার দ্বিতীয় স্বামী, হেনরিক ব্লুচার ছিলেন একজন কমুনিস্ট। লোকে বলাবলি করে, সমালোচনা করলেও নাকি কমুনিস্টগো উপর উনার সিমপ্যাথি ছিলো। আর আমেরিকারেও উনি পুরোপুরি সুবিধার জিনিস মনে করতেন না।

উনার বিখ্যাত বইগুলার মধ্যে আছে দ্য অরিজিন্স অফ টোটালিটারিয়ানিজম (১৯৫১), দ্য হিউম্যান কন্ডিশন (১৯৫৮), অন রেভ্যুলিউশন (১৯৬৩), ইশমান ইন জেরুজালেম (১৯৬৪)।

১৯৭৫ সালে উনি মারা যান।

সুমাইয়া ফেরদৌস
জানুয়ারি, ২০২৪

[ইন্টারভিউ’র শেষের দিকের অংশ…]

গাউস: মিস আরেন্ট, আপনার রাজনৈতিক-দার্শনিক ভাবনাচিন্তা, বা সামাজিক বিশ্লেষণ, এইগুলার মাধ্যমে আপনি যেইটা জানতে পারেন, সেইটা প্রকাশ করাটাকে কি আপনার দায়িত্ব বইলা মনে করেন? নাকি আপনি যেইটা জানেন, সেইটা নিয়া নীরব থাকারও বিষয়-আশয় থাকে?

আরেন্ট: হুম, এইটা আসলে অনেক কঠিন একটা সমস্যা। আইখম্যানের বই নিয়া যে বিতর্ক হইছিলো, শুধু এই প্রশ্নটার কারণেই ঐটা নিয়া আমার আগ্রহ ছিলো। কিন্তু আমি শুরু না করলে এইটা নিয়া কখনো কথা হইতো না। এইটাই ছিলো একমাত্র সিরিয়াস প্রশ্ন, বাকিসব হইলো পিওর প্রোপাগান্ডা। তো, প্রশ্ন হইতেছে, ফিয়াট ওয়েরিটাস, এট পেরেয়াট মুন্ডুস [দুনিয়া ধ্বংস হোক, তাও সত্য কও]? কিন্তু, আইখম্যানের বইতে আসলে এই ধরণের কোনো বিষয় ধরাই হয়নি। বইটা কোনোভাবেই কারো বৈধ স্বার্থের কোনো ক্ষতি করে না। কেউ কেউ এমনটা ভাবছে আরকি শুধু।

[ফিয়াট ইয়াস্টিয়া, এট পেরেয়াট মুন্ডুস [দুনিয়া ধ্বংস হোক, তাও ন্যায় থাক] — এইডা একটা পুরালো ল্যাটিন প্রবাদ। আরেন্ট এইটারেই ঘুরাইয়া কইছিলেন। চাইলে আরো দেখতে পারেন পাস্ট & ফিউচারের (নিউ ইয়র্ক: ভাইকিং প্রেস, ১৯৬৮) ১২৮ নাম্বার পাতা।]

গাউস: কোনটা বৈধ, সেই প্রশ্নটা অবশ্যই আলোচনার সুযোগ রাখা উচিত।

আরেন্ট: হ, সেইটা সত্য। আপনি ঠিক বলছেন। কোনটা বৈধ, সেইটা নিয়া আলোচনার সুযোগ এখনও আছে। আমি আসলে “বৈধ” [লেজিটিমেট] কইতে যেইটা বুঝাইছি, সেইটার সাথে মনে হয় ইহুদি সংগঠনগুলো যেইটা বুঝায়, তার মিল নাই। কিন্তু ধইরা নেওয়া যাক, সত্যিকারের স্বার্থ ঝুঁকিতে ছিলো, যেইটা আমিও স্বীকার করতেছি।

গাউস: তারমানে সত্য জাইনাও কেউ চাইলে চুপ থাকতে পারে?

আরেন্ট: আমি কি চাইলে চুপ থাকতে পারতাম? অবশ্যই! আসলে আমি লিখতাম হয়তো… কিন্তু দেখেন, আমারে একজন জিজ্ঞাস করছিলো, আমি যদি কোনো না কোনো একটা বিষয় ধইরা নিতাম, তাইলে কি আইখম্যানের বইটা ভিন্নরকম কইরা লেখতাম না? আমি কইছিলাম, না। বরং, বিকল্প নিয়া ভাবতাম। সেইটা হইলো, বইটা লিখবো, নাকি লিখবো না? কারণ, চাইলে কেউ চুপ কইরাও থাকতে পারে।

গাউস:হ্যাঁ।

আরেন্ট: কাউরে সবসময় কথা কইতে হবে বিষয়টা এমন না। কিন্তু এরপর যে প্রশ্নটা আসে, সেইটারে আঠারো শতকে ‘ট্রুথস অফ ফ্যাক্ট’ নামে ডাকা হইতো। এইটা কিন্তু আসলেই ট্রুথস অফ ফ্যাক্টেরই একটা বিষয়, কার কি মতামত সেইটার বিষয় না। এই ট্রুথস অফ ফ্যাক্টের গার্ডিয়ান হইলো বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ইতিহাস বিজ্ঞানগুলা পড়ানো হয়, সেইগুলা।

গাউস: তারা গার্ডিয়ান হিসাবে সবসময়ই যে ভালো, সেইটাও কিন্তু না।

আরেন্ট: না। তারা কলাপস করে। তাগোরে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে। আমারে কেউ একজন এক ইতিহাসবিদের কথা কইছিলো। সেই ইতিহাসবিদ নাকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অরিজিন নিয়া লেখা কোনো বইয়ের উপর মন্তব্য করছিলো: “আমি এইটারে ওইরকম চমৎকার একটা সময়ের স্মৃতি নষ্ট করতে দিবো না।” এ হইলো এমন এক মানুষ যে আসলে জানেনা সে কে। কিন্তু এইটা তেমন ইন্টারেস্টিং না। বাস্তবে সে হইলো ঐতিহাসিক সত্যের গার্ডিয়ান, ট্রুথ অফ ফ্যাক্টের গার্ডিয়ান। আর বলশেভিক ইতিহাস থাইকা আমরা জানি এই গার্ডিয়ানগো গুরুত্ব আসলে কতখানি। যেমন, পাঁচ বছর পর পর ইতিহাস নতুন কইরা লেখা হয়, কিন্তু সত্যি কথা অজানাই থাইকা যায়: যেমন ধরেন, মিস্টার ট্রটস্কি বইলা একজন ছিলো কিন্তু। আমরা কি এইরকম কিছু চাই? সরকার কি এইসব জিনিস নিয়া ইন্টারেস্টেড?

গাউস: এইগুলা নিয়া তারা ইন্টারেস্টেড হইতেই পারে। কিন্তু তাগোর কি এইসব করার রাইট আছে?

আরেন্ট: তাগোর কি এইসব করার রাইট আছে? দেইখা মনে হয় যে এইটা তারা নিজেরাও বিশ্বাস করে না। নাইলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলারে সহ্য করার কোনো দরকার ছিলো না তাগোর। তারমানে সত্য নিয়া রাষ্ট্রেরও আগ্রহ আছে। আমি কিন্তু মিলিটারি সিক্রেটের কথা কইতাছি না; ওইডা ভিন্ন জিনিস। কিন্তু এই ঘটনাগুলার বয়স বিশ বছর। তাইলে সত্যিটা না কওয়ার কি কারণ আছে?

গাউস: এমন তো হইতে পারে যে বিশ বছর এখনো অনেক কম সময়?

আরেন্ট: এইকথা ম্যালা মানুষ কয়; আবার অনেকেই আছে কয় যে বিশ বছর পর আসলে কেউ আর সত্যিটা খুঁইজা বাইর করতে পারে না। ব্যাপার যা-ই হোক, আসল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ব্যাপারে একটা ইন্টারেস্ট আছে। কিন্তু তার মানে এই না যে সেইটা একটা বৈধ ইন্টারেস্ট। Continue reading

পোস্ট লিবারেশন ওয়ার বাংলাদেশ আর কতগুলা বান্দর

এবং যখন শহীদুল জহিরের মুখের দিকে দেখি বইটা নিয়ে অনেককে আলোচনা করতে দেখি, দেখি এদের মধ্যে মোটামুটি সবাই বইয়ের ভুয়সী প্রশংসা করলেও কন্টেন্টকে পুরাপুরি উপেক্ষা করে যায়। এর অজুহাত হিসাবে তারা দেয় হয়তো তারা বইটা বুঝছে, হয়তো বুঝে নাই। তাই তারা তখন ভাবে বই যেহেতু তারা বুঝে নাই, খালি গল্পে কিছু আজিব আজিব ব্যাপার আছে, যেটা তাদের ভালোলাগছে, তাই তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসে জহিরের প্রশংসা করে মুখে ফ্যানা তুইলা ফালায়।

আমিও হয়তো বইটা বুঝছি, হয়তো বুঝি নাই। লেখনী হয়তো আমারও ভালোলাগছে, অথবা লাগে নাই। কে বলতে পারে, এই আলোচনা পুরাটাই হয়তো জহিরকে নিয়া এস্থেটিক পাঠকমহলের প্রিটেনশনের অংশ। কিন্তু বইটা পড়ে আমি অনেকগুলা জিনিস খেয়াল করছি। হয়তো, জহির যেই সুক্ষ্ম খোঁচাটা বইয়ের মাধ্যমে দিতে চাইছেন, সেটা আমি কিছুটা হলেও ধরতে পারছি, হয়তো পারি নাই। কিন্তু বলাতে তো দোষ নাই, তাই আমি বলে ফেলার স্পর্ধা করতেই পারি।

চানমিয়ার মাদি বান্দরের দুধ খাওয়া থেকে শুরু করে খরকোসের খাঁচায় আটকে থাকার মার্কেসীয় ধাঁচের গল্পটা আমাকে অনেকদিন মোহাচ্ছন্ন করে রাখছে। না রাখার কোনো কারন নাই; জাদুবস্তবতারে আমি অলস লেখকদের টেকনিক হিসাবে ধরলেও জাদুবস্তব সাহিত্য পড়তে আমি ভালোবাসি, গল্পে রস থাকলে আমার ভালোলাগে। জহির বাংলাদেশি সাহিত্যে ল্যাটিন আমেরিকান জাদুবাস্তবতার আমদানি করছেন, এটা আমার জানা ছিল।

কিন্তু জহিরকে অনেকদিন ফালায় রাখছিলাম এই ভাইবা, যে জহির হয়তো বাংলাদেশের তথাকথিত সেই প্রখ্যাত সাহিত্যিক গোষ্ঠীর মতই তাদের আষাঢ়ে গল্পরে গ্রহনযোগ্য করতে জাদুবাস্তবতার নাম দিয়া চালায় দেয়, অথবা দেয় না। কিন্তু পড়ার পর দেখলাম, তাঁর জাদুবাস্তবতা খুব সাট্ল, বুঝা যায় কিছু একটা হইতেছে, কিছু একটা গলদ আছে, কিন্তু কী গলদ আছে তাই বলা যায় না। তার গল্পে সবকিছু plausible, হইতে পারে, আবার নাও হইতে পারে। বাস্তবে না ঘটাই বেশি স্বাভবিক। এমন না যে ওইসব হইতেই পারে না, আজাইরা জাদুবস্তবতার মতো কোনো কার্পেট আকাশে ওড়ে না বা কাটা মাথা কথা কয় না। Continue reading

ডায়েরি : ঢাকা খ্রিশ্চিয়ান গ্রেইভইয়ার্ড

ঢাকায় আইসা আমার কোনদিনই গা ছমছমে টাইপ ফিলিংস হয়নাই৷ কিন্তু আজকে ভোরবেলা চারশ বছরের পুরানা ওয়ারীর খ্রিশ্চিয়ান গোরস্থানটাতে ঢুইকা যে ভয়টা পাইছি তা আর বলার মত না!

অনেকদিন ধইরাই এই গোরস্থানে যামু যামু ভাবতেছিলাম৷ সারা রাত না ঘুমায়ে সাত সকালে নাফিরে বললাম – চলো মামা ঘুইরা আসি৷ নাফি যে রাজি হইবো— জানতাম৷ গোপালের কাচা ঘুম ভাঙাইলাম৷ কেমনে যামু জিগাইতে ও কইলো – বলধা গার্ডেনের অপজিটেই তো! এক ঢিলে দুই পাখি মারার আনন্দ হইলো ৷ বলধা গার্ডেনেও যাই নাই কোনদিন। ঠিক করলাম আগে বলধা গার্ডেনেই ঢুকি ৷ ওয়ারীর রিকশা সূর্য উঠার সাথে সাথে আমাদের বলধা গার্ডেন গেইটে নামায় দিলো ৷

বসন্ত যেন একলাই ফুইটা আছে এই এলাকায়! তাও নিরিবিলিতে। আগে দেখিনাই এমন ছয় সাত রকমের ফুল দেখলাম৷ নতুন গাছও চিনলাম অনেকগুলা ৷ সারা উদ্যানেই ডায়বেটিস, হার্টের রোগী, মিড ও এইজড লাইফ নরনারী চারপাশে ভয়ংকর তাড়া নিয়া হাটাহাটির নামে ছোটাছুটি করতেছেন ! বলধা গার্ডেনের দুইটা উদ্যান! সাইকি আর সিবলী ৷ সাইকি বন্ধ থাকে বিধায় সিবলীর উপর বেশি চাপ থাকে ৷ সেই চাপের কারনেই বসন্ত সম্পর্কে কারো ফ্লাইং ফাক দেয়ার টাইমটাও নাই । ম্যাক্সিমাম লোকজনের চেহারাতেই বয়স হওয়ার কারনে ডরের ছাপ, থলথলে ভুড়ি আর ম্যাক্সিমামেরই চুলে পাক ধইরা গেছে৷ ওল্ড ম্যানস কেইভ পুরা ! মহিলারা হাটাহাটির ক্ষেত্রে বেশি একটিভ ৷ মশার কারনে বেশিক্ষণ ঘুরতে পারলাম না ৷ তারপরেও দারুন আরাম লাগলো ৷ কিন্তু মজা হইলো বের হবার সময় ৷ এক লোক থামাইলো আমাদের ৷ বললো— টিকেট নেন ৷ বিশ টাকার টিকেট ৷ টিকেট দিয়াই সামনে একটা ঝুড়ি দেখায় দিলো ৷ বললো— ছিড়া ফালায় দেন! লোকটারে ইন্টারেস্টিং লাগলো ৷ জিগাইলাম— ভাইয়ের নাম কী? কঠিন রাইগা গেলেন উনি! বললেন— আপনারে নাম বলা তো আমার ডিউটি না ভাই! ডিস্টার্ব কইরেন না!

এই ঘটনা নিয়া হাসতে হাসতে বলধা গার্ডেন থিকা বাইর হয়া গোরস্থানের রাস্তা ধরলাম ৷ হাটতে হাটতে মনে হইলো এই গোরস্থান আর্মেনিয়ানটা গোরস্থানটার থিকা দ্বিগুন তিনগুন বড় হবে ৷ ভাল ছবি পাইতে পারি প্লাস সাথে ভাল একটা ক্যামেরাও আছে — আনন্দে মনটা পুরা চনমন কইরা উঠলো! Continue reading

কলকাতার পুরস্কার—কীভাবে নিব?

[এডিটর’স নোট: লেখাটা পুব বাংলার কথা ও কালচার লইয়া কলিকাতার দেখনভঙ্গির বেশ পুরানা কিছু নজির আমাদের শামনে আনছে। এগুলি তো আমরা বহুদিন ধইরাই বলতেছি, আমরা ও অনেকেই, কিন্তু এই দেশি কিছু ভাবুক সেগুলি একরকম আমাদের আবিষ্কার বইলাই গনেনাই আর। কিন্তু ওই দেখনভঙ্গির পিছনে যে শচেতন বর্নবাদি পজিশন আছে, শেইটা হইলো আমাদের কনছার্নের জায়গা। এই লেখায় ওই জায়গাটা আশছে।

এছারাও আরও কিছু জায়গা কলিকাতার ওই অবস্থানের শুতা ধইরা কাভার করতে চাইছে রাইটার, শেইটা অনেক শময় মনে হইছে এই লেখার অংশ না হইলেও পারতো। তবে লেখকের লেখার গরনগারন কেমন হবে তা লেখকের অভিরুচি মোতাবেক নির্ধারিত হওয়াই ভালো এবং তাতে যে কোন ধরনের উপদেশনা এক ধরনের অযাচিত মাতবরিই আশলে। আমরা বরং এইটাও মনে করি, যে কোন লেখাই পরার খেত্রে রিডাররেও দায়িত্ত নিতে হবে, লেখারে নিতে হবে উইথ মডারেশনস। পরারে একটা প্যাসিভ ঘটনা বানায় রাখা কাজের কথা না।]

বাংলাদেশি শিল্পীরা ঘনঘন কলকাতায় পুরস্কার পাচ্ছেন। আজকেও দেখলাম জয়া আহসান, সোহেল মণ্ডল আরো কে কে যেন পুরস্কার পাইলেন। ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। সেরা অভিনেতার পুরস্কার। চমৎকার দৃশ্য। পুরস্কার পাওয়া তো ভালো ঘটনা। তার উপর যদি হয় বিদেশে, তাইলে তো গর্ব করাই যায়!

থামেন, অল্পতেই গর্বিত হওয়ার রোগটা কিন্তু মারাত্মক লেভেলে চলে গেছে আমাদের। অমুকে গুগলে চাকরি পাইছে, একই দেশের লোক তাই আপনি গর্বিত হলেন, তমুকে ইউটিউবের হেডঅফিসে গেছে, একই জাতি বলে আপনি গর্বিত হলেন, কয়দিন পর তো এমন অবস্থা হবে যে অমুক সেলিব্রেটি পাদ মারছে, আপনি তাতেও গর্বিত হবেন!

কলকাতায় বাংলাদেশি অভিনেতা অভিনেত্রী পুরস্কার পাইছে এইটাতে খুশী হবেন না বেজার হবেন সেইটা ঠিক করে দেওয়ার আমি কেউ না। তবে পুরস্কার যেহেতু খুশীই হবেন, যেহেতু খুশী হওয়ার অভ্যাস আপনাদের আছে, এইটাই স্বাভাবিক। কিন্তু খুশী হওয়ার কারণ যদি খাসি বানানোর কারণও হয়? তাইলে তো সমস্যা। খুশী হওয়া যাইতো, যদি উদ্দেশ্য ভালো হইতো। তারা যে পুরস্কার দিছে তা খালি চোখে পুরস্কার মনে হইলেও এইটা নিয়া একটু ভাবলেই বুঝবেন যে এইটার পেছনের উদ্দেশ্য খুবই সমস্যাজনক। আজ যারা কলকাতায় গিয়া পুরস্কার আনতেছে তারা মূলত খাল কাইটা কুমির আনতেছে।

অনেক দিন ধরেই কলকাতার লোকেরা হায়হুতাশ করতেছে বাংলা ভাষা গেল গেল বলে। এই কান্নাকাটির বয়স অনেক হইলেও তীব্রতা পাইছে ২০১৯ সালে। ব্যাপকভাবে প্রতিবাদ শুরু হয় তখন থেকে। মাঝখানে একটু থামছিল। ২০২২ সাল থেকে আবারও বাড়ছে।

২০১৯ সালের নিউজ দেখেন বিবিসি বাংলা আর ডয়েচে ভেলে শিরোনাম করছে “পশ্চিমবঙ্গে প্রবল হচ্ছে ‘হিন্দির আগ্রাসন’ বিরোধী প্রচারণা, রাজ্যে থাকার শর্ত ‘বাংলা জানা’ (বিবিসি বাংলা)”, “পশ্চিমবঙ্গে হিন্দির আগ্রাসনের অভিযোগ (ডয়েচে ভেলে)”।

যখন কিনা কলকাতাই স্ট্রাগল করতেছে তাদের ভাষার ওপর হিন্দি ভাষার আধিপত্য ঠেকাইতে নিজের ভাষা আর বাঙালিত্ব বাঁচাইতে, সেই একই সময়ে তারা বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী লোকদের পুরস্কার দিতেছে! ইন্টারেস্টিং না?

পুরস্কার কারা দিল? কলকাতার বাঙালি হিন্দুরা, যারা কিনা এক সময় মুসলমানকে বাঙালি বলতেই রাজি ছিল না (এখনও মন থেকে রাজি আছে তো?)।

রাজি আছে কিনা তা বুঝতে হলে দেখতে হবে কলকাতার সাধারণ পাবলিক আমাদের কোন চোখে দেখে। বাংলাদেশিদের কলকাতার লোকেরা যে ব্যাঙ্গ করে কাঙালি বা কাংলু বলে। সামান্য কিছুতেই বাংলাদেশিরা যে ছোট জাতের বলে। এই মনোভাবই কিন্তু তাদের মনের আসল অবস্থা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশিদের প্রতি ভারতীয় বাঙালিদের ঘৃণা জানানোর তথ্যের ভিত্তিতে এই দাবি করতেছি না, ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতেই এই দাবি। তাদের যারা পূর্বপুরুষ—নীরদচন্দ্র চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, তারাও আমাদের প্রতি (পূর্ববঙ্গের মুসলমান ও হিন্দু) যে ঘৃণা পোষণ করতেন তা আরও ভয়াবহ আরও জঘন্য।

আমরা সবাই মূলত জানি শনিবারের চিঠি সাহিত্যিক দলাদলি থেকে বের হইছিল। কিন্তু তাদের মূল টার্গেট ছিল পূর্ববঙ্গের লোকদের, আরো ভালো করে বললে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের বাংলা সাহিত্যে আগমন ঠেকানো। এ কথার সাক্ষ্য দিয়া গেছেন স্বয়ং সজনীকান্ত দাস তাঁর ‘আত্মস্মৃতি’তে। স্বীকার করে গেছেন : ‘সাহিত্যক্ষেত্রে কাজি নজরুল ইসলাম… সাপ্তাহিক ‘শনিবারের চিঠি’র প্রত্যক্ষ লক্ষ্য ছিলেন।’

আত্মস্মৃতির দ্বিতীয় খণ্ডে শনিবারের চিঠির সাথে নজরুলের সম্পর্ক-সম্বন্ধটি উপভোগ্য ভাষায় ব্যক্ত হয়েছে: ‘সত্য কথা বলিতে গেলে শনিবারের চিঠি’র জন্মকাল হইতেই সাহিত্যের ব্যাপারে একমাত্র নজরুলকে লক্ষ্য করিয়াই প্রথম উদ্যোক্তারা তাক করিতেন। তখন আমি আসিয়া জুটি নাই। অশোক-যোগানন্দ-হেমন্ত এলাইয়া পড়িলে ওই নজরুলী রন্ধ্র-পথেই আমি শনিবারের চিঠি’তে প্রবেশাধিকার পাইয়াছিলাম। প্রকৃতপক্ষে ‘শনিবারের চিঠি’র একমাত্র প্রধান লক্ষ্য ছিল নজরুল এবং ব্যঙ্গ বিদ্রুপে তাকে ধরাশায়ী করাই ছিল সে লক্ষ্যের সঞ্চরণক্ষেত্র।’
Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →