Main menu

(বাংলা-ক্লাসিক) বিশ্বনবী – গোলাম মোস্তফা [শর্ট ভার্সন।] পার্ট ৫ Featured

১৩. শাদী মুবারক

এই সময়ে মক্কানগরে কোরেশ গোত্রে এক সম্ভ্রান্ত বিধবা মহিলা বাস করিতেন। নাম তাঁহার খাদিজা। এমন সতীসাধ্বী পূণ্যময়ী নারী তখনকার দিনে আরবে আর দ্বিতীয়টি ছিল না। অন্তরের শুচিতায় ও শুভ্রতায় এতই তিনি যশস্বিনী হইয়াছিলেন যে, লোকে তাঁহাকে খাদিজা না বলিয়া ‘তাহিরা’ (পবিত্রা) বলিয়া ডাকিত।

খাদিজার দুইবার বিবাহ হইয়াছিল; কয়েকটি পুত্রকন্যাও জন্মিয়াছিল। দ্বিতীয় স্বামী মৃত্যুকালে অগাধ ধন- সম্পত্তি রাখিয়া গিয়াছিলেন; সেই সূত্রেই তিনি সম্পদশালিনী হইয়াছিলেন। তাঁহার বিস্তৃত বাণিজ্য ছিল। কর্মচারী দ্বারা তিনি নানাদেশে বাণিজ্য চালাইতেন এবং নিজেই সমস্ত বিষয়ের তত্ত্বাবধান করিতেন।

এদিকে আল-আমিনের গুণগরিমাও আরবের সর্বত্র ছড়াইয়া পড়িয়াছে। ত্যাগ, সেবা, সততা ও চরিত্র-মাধুর্য দ্বারা তিনি সারা আরবের হৃদয় জয় করিয়া ফেলিয়াছেন। যতবারই তিনি বাণিজ্য করিতে গিয়াছেন, ততবারই তিনি প্রচুর লাভ করিয়া ফিরিয়া আসিয়াছেন।

এই ধীশক্তিসম্পন্ন প্রতিভাবান যুবকটির কীর্তিকথা বিবি খাদিজার কর্ণে পৌঁছিতে বিলম্ব ঘটে নাই।

এই উদ্দেশ্যে খাদিজা একদিন মুহম্মদকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। দূর সম্পর্কে মুহম্মদ তাঁহার চাচাতো ভাই হইতেন। মুহম্মদ আসিলে খাদিজা বলিলেন: “আমার একটি অনুরোধ আপনি রাখিবেন কি?”

মুহম্মদ বিনীতভাবে উত্তর দিলেন “কী অনুরোধ, বলেন?”

“আমার এই তেজারতির ভার আপনাকে লইতে হইবে। ইহার জন্য আপনাকে আমি দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিব।” হযরত বললেন “আমার চাচাজীর মতামত লইয়া আপনাকে জানাইব।”

মুহম্মদ আসিয়া আবুতালিবকে এ কথা বলিলেন। এ প্রস্তাব তিনি সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করিলেন।

কাফেলা প্রস্তুত হইল। মুহম্মদ বাণিজ্যে চলিলেন। এবার দামেশক অভিমুখে। ইয়াস্রেল, হাইফা, জেরুজালেম প্রভৃতি প্রসিদ্ধ বাণিজ্য-কেন্দ্রের মধ্য দিয়া পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করিতে করিতে মুহম্মদ দামেশকে পৌছিলেন। সর্বত্রই তাঁহার প্রভূত লাভ হইল।

দীর্ঘদিন অতিবাহিত হইয়াছে। বিবি খাদিজা মুহম্মদের আসা-পথ চাহিয়া আছেন। বিধবা হইবার পর বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি খাদিজাকে বিবাহ করিবার জন্য পয়গাম পাঠাইয়াছেন, কিন্তু তিনি কাহারও প্রস্তাব গ্রহণ করেন নাই। আজ এ কী নতন অনভূতি তাঁহার অন্তর-তলে দেখা দিল। খাদিজা কিছু‍ই বুঝিতে পারিলেন না।

একদিন অপরাহে খাদিজা আপন গৃহের চত্বরে দাঁড়াইয়া দিগন্তের পানে চাহিয়া আছেন, এমন সময় দেখিতে পাইলেন: মরুভূমির ওপার হইতে উটের পিঠে চড়িয়া ফিরিয়া আসিতেছেন। একদৃষ্টে তিনি সেইদিকে চাহিয়া রহিলেন। মনে হইতে লাগিল, একটি বিহিশতী রঙিন স্বপ্ন যেন ধীরে ধীরে তাঁহার নয়ন-পথে রূপায়িত হইয়া উঠিতেছে।

মুহম্মদ আসিয়া সমস্ত হিসাবপত্র ও টাকাকড়ি বুঝাইয়া দিলেন। প্রচুর লাভ হইয়াছে দেখিয়া খাদিজা মুহম্মদের উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইলেন। তাঁহার সততা ও বিশ্বস্ততা দেখিয়াও তিনি মুগ্ধ হইলেন।
Continue reading

মরম আল মাসরী’র কবিতা Featured

মরম আল মাসরী ২ আগস্ট, ১৯৬২ সালে সিরিয়ার লাটাকিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। পড়ালেখা শেষ করেন দামাস্কাস ইউনিভার্সিটি থেকে, ইংরেজি সাহিত্যে। এরপরে ওনি আরব ম্যাগাজিনে ওনার লেখা ছাপাইতে শুরু করেন। বর্তমানে তিনি তাঁর প্রজন্মের সেরাদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী, বিদুষী, চিত্তাকর্ষক নারীকণ্ঠ হিসাবে বিবেচিত। তাঁর লেখা ফ্রান্স, জার্মান, ইংরেজি, ইতালিয়ান, স্পেনিশ, সার্বিয়ান, তার্কিশসহ প্রায় এগারোটি ভাষায় তরজমা হইছে।

ওনার লাস্ট বের হওয়া বই The Abduction(২০১৫)। বইটা মরম আল মাসরীর নিজের জীবনীরই ঘটনা। যখন, ২০১১ সালে দেশের চলমান অস্থিরতার কারণে একজন ইয়াং আরব মহিলা হিসাবে তিনি সিরিয়া ছেড়ে ফ্রান্সে থাকা শুরু করেন। আর ব্যক্তিগত কারণে সিদ্ধান্ত নেন যে নিজের হাজব্যান্ডের লগেও আর থাকবেন না, নিজের ছোট্ট ছেলেটারে নিয়েই থাকবেন। কিন্তু ছেলের বাপ বেড়াতে নেওয়ার নাম করে ছেলেরে কিডন্যাপ করে সিরিয়া চলে যায়। এদিকে আল মাসরী ১৩ টা বছর ওনার ছেলেরে আর দেখতে পান নাই। এইটাই ট্র্যাজেডি যে একজন মা, মায়ের অধিকার থাকা সত্ত্বেও সন্তানের বড় হওয়া নিজের চোখের সামনে দেখতে পাইলেন না। এগুলি হলো গা শিউরে ওঠা, দগদগে কবিতা, প্রেমের, হতাশার এবং আশার। এই বইটা সূক্ষ্ম, গভীর এবং শক্তিশালী অন্তরঙ্গতার বই যেখানে একজন মায়ের অধিকার, যুদ্ধ, নির্বাসন এবং স্বাধীনতাও বিষয় হয়ে উঠে।

মরম আল মাসরী সেইসব মা-বাবাদের ভয়েসটারে এক করছেন, যারা একদিন, যেকোন কারণে হোক, জোরপূর্বক তাদের সন্তান থেকে আলাদা থাকতে হইছে। তিনি নারীদের পদমর্যাদা নিয়েও লেখেন। তাদের ভূমিকা মনে করাইতে চান মা হিসাবে তার লেখা দিয়ে।

আমি তার কবিতা বাছাই করছি মূলত কবিতায় একজন সন্তানহারা মায়ের বেদনার সাবলীল উপস্থাপন দেখে। একটা যুদ্ধ খারাপ হওয়ার একটা কারণ ত এইটা যে মায়েরা তাদের সন্তানদের হারাইতে হয়। কিন্তু ব্যক্তিজীবনেও যখন যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করে, একটা সন্তান, একজন মা কিংবা বাবার দ্বন্দ্বের মাঝখানে পুতুল হয়ে যাইতে হয়। এই দূরত্বের কষ্ট এত সাবলীলভাবে প্রকাশ তো ঘটে না আসলে, গোমরায়ে মরা লাগে, যার যার ভিতর। গুগলে ঘাটতে ঘাটতেই যখন পেয়ে গেলাম ওনার কবিতা, মনে হইলো, তরজমা করা যাক।

 

বর্ণের রুটি

গাছেরে ব্লেইম করবে কে
যখন তারা তাদের পাতা হারায়ে ফেলে?
কে দরিয়ারে দোষারোপ করবে
বালিতে শামুক ফেলে যায় বলে?

আমি, মা-নারী, নারী-মা
ভোগসুখের জন্যে দুইটা ব্রেস্ট যার
আর মাতৃত্বের জন্যেও দুইটা ব্রেস্ট
যে দুধ পান করায় সুর করে
গল্প বলে
খেলতে শিখায়
অনুভূতি আর
চিন্তার মূলে শান দেয়
আমি, ফূর্তির নারী
আর মোহেরও
আমি পবিত্র আর পাপী
ম্যাচিউর এন্ড চাইল্ডলাইক
আমার মুখসহ
আমি রুটি খাওয়াই বর্ণের
স্বরবর্ণের আর ব্যঞ্জনবর্ণের
বাক্যের, সিনোনেইমস এন্ড কম্পারিজনের

কে আমারে দোষারোপ করবে
ভালোবাসার জন্যে আমার শরীরটারে
নজরানা বানাইলাম বলে?

 

লেখালেখি

এটা কি একটা জঘন্য কাজ না নিজেই?

লেখা হইতেছে
আমাদের সবচাইতে ঘনিষ্ট চিন্তাগুলারে জানতে শিখা

হ্যাঁ, আমি জঘন্য
কারণ আমি আমার সত্যরে শো করি
আর আমার নারীরূপি ছলাকলাহীনতারে

হ্যাঁ, আমি জঘন্য
কারণ আমি চিল্লায়ে বলি আমার দুঃখ আর আমার আশা
আমার আকাঙ্ক্ষা, আমার ক্ষুধা আর আমার পিপাসা

লেখা হইতেছে বর্ণনা করা
পুরুষের বহুরূপি চেহারা
সুন্দর আর বিশ্রী
আবেগপ্রবণ আর নিষ্ঠুর

লেখা হইতেছে
মারা যাওয়া অন্যের সামনে
যে তোমার দিকে তাকায়ে আছে, স্থির
কিংবা তোমারে খেয়াল না করেই পাশ কাটানো একটা নৌকার সামনে ডুবি যাওয়া

লেখা হইতেছে সেই নৌকাটাই হওয়া যা ডুবি যাওয়া থেকে বাঁচায়

লেখা হইতেছে
খাঁড়া পর্বতের চূড়ায় বাস করা
ঘাসের ফলায় ঝুলি থাকা

যখন আমি লেখি, আমি আরেকজন হয়ে উঠি
এই বিশ্বাসে যে
আমি মুক্ত
Continue reading

‘উইন্টার ইজ কামিং’ Featured

একটা মাকড়শা তার বাচ্চাদের গুতা দিতেছে বারবার, বাচ্চাগুলার তুমুল খিদা, তবু শুরুতে মশকরাই ভাবলো বুঝি! কিন্তু মা মাকড়শা থামে না, আরো জোরে থাপ্পড় দিতে থাকে, ব্যথা পায় বাচ্চাগুলা–এমন চলতে চলতে বাচ্চাগুলার ভিতর কিলার ইন্সটিংকট জাইগা ওঠে, তারা শবাই তখন এক লগে ঝাপাইয়া পড়ে মায়ের উপর, মায়ের গতর ফুটা কইরা ঢুইকা জায় ভিতরে, বেশুমার ব্যথা লইয়া মরতে থাকে মা–ছুইছাইডেও ব্যথা তো লাগে… পালায় না, মারার চেশ্টাও করে না বাচ্চাদের, নিজেরে খাওয়াইয়া ফেলে পুরা… এই বাচ্চাদের পয়লা শিকার তাহাদের মা, শিকারের ছবক পাইলো এইভাবে, এখন থিকা পারবে নারাজ শিকার ধরতেও! মাকে খাইয়া ফেলা তাই জরুর দরকারি ছবক ঐ বাচ্চাগুলার।
মাকে খাইয়া ফেলার পরে ভরপেট বাচ্চাগুলার কেমন লাগতেছে? জানি না আমি 🙁 !

তবে জানি, মানুশের ইতিহাশে অমন ঘটনা ততো ঠিক না ঘটলেও কতগুলা ঘটনারে ঐভাবে কদ্দুর বুঝতে পারি হয়তো!

পুরাতনের লগে নতুনের একটা নেছেছারি জুদ্ধ হয় পেরায়ই, পুরাতন জদি খুব নাছোড় হয়, আকড়ে থাকতে চায়, পেরায়ই ভায়োলেন্স হয় তখন! বাদশাহি মছনদ লইয়া অমন কায়কারবার ইতিহাশে বেশুমার আছে। কিন্তু পুরাতন জদি ছাড়তে রাজি হয়, খুবই পিরিতির ভিতর দিয়া, পিছফুল দরদি তরিকায় ঘটনাগুলা ঘটতে পারে। ইতিহাশে ডেমোক্রেছি খুব শম্ভব এই অর্থে টেরান্জিশনকে পিছফুল করার একটা কায়দা।

তো, এই আলাপটা পাড়ছি দুয়েকদিনের ভিতর ঘটতে জাওয়া একটা জলশা/মশলিশের ব্যাপারে। ভাববৈঠকি-১৩ নামে ঐ মজলিশ বশবে ঢাকার পরিবাগে, শেইখানে ভাশার ব্যাপারে অনেক আলাপ হবে।

ইতিহাশের এমন একটা টাইমে এমন একটা মজলিশের জরুরত কেমনে ঘটলো, শেইটাই ভাবতেছিলাম এবং শেই ভাবনার শুরুতেই পেরায় বেহুদা ঐ কথাগুলা পেশ করলাম!

গত কয় বছরে বাংলা ভাশা লেখা এবং বুলিতে এমন একটা দশায় হাজির হইছে জেইখানে কোন বাংলাটা পুরাতন, কোন খোশাটা ছাইড়া বাইরায়া জাইতেছে শাপটা, শেইটা বেশ কিলিয়ার হইয়া উঠছে! ছোশাল মিডিয়া থিকা নাটক-ছিনামা-গান, এফএম রেডিও, তরজমা থিকা অরিজিনাল ফিকশন-কেচ্ছা-কাহিনি, ইতিহাশ-রাজনিতি-ভাবের আলাপ–শবখানেই বোরিং একটা পুরাতন বাংলার ছেন্স পয়দা হইছে, হালের জেনারেশন তাদের বলনে-লেখনে [এরা হয়তো ইংরাজি মিডিয়ামে পড়ে, তাই কেলাছিক বাংলা কেতাবের বদলে বাংলাটা শিখতেছে ডাইরেক শমাজ থিকা] একটা নয়া বাংলা পেশ করতেছে, জেইটা আশলে নয়া না, ডাইরেক শমাজ থিকা লওয়া, কলোনিয়াল কলিকাতার ছিলছিলার বাইরের একটা বাংলা, জেইটা রাধারমন-চন্ডিদাশ-হাছন রাজা-শা আবদুল করিম-মোমেনশাহি গিতের ভাব আর ভংগিমার কাছের একটা বাংলা!
এতে কেলাছিকের আরাম হারাম হইয়া গেছে, তারা নয়া বাংলার এই ফর্মেশনের দশার নাম দিছে এনার্কি! ঐ এনার্কি ঠেকাইতে আমাদের বাহানা পার্লামেন্টে আইন পাশ করার চেশ্টার কথাও শুনছি আমরা! Continue reading

দি ওভাল পোর্ট্রেইট – এডগার এলান পো

যে প্রাসাদটাতে আমার খানসামা প্রায় জোর কইরাই আমারে নিয়া ঢুকলো—আমার জখমি দশার কারণে খোলা বাতাসে থাকতে না দিয়া—সেইটা ছিল বিষাদ আর রাজকীয়তার এক মিশেল যা বহুকাল ধইরা অ্যাপেনাইন পাহাড়ের সামনে মাথা নিচু কইরা দাঁড়ায়ে আছে নির্ঘাত। চোখের দেখায় এইটারে দেইখা মনে হইতেসিল খুব অল্পদিন আগে এবং সাময়িকভাবে এই বাড়িটা কেউ ছাইড়া চইলা গেসে। সবচেয়ে ছোট ও কম আসবাবপত্রওয়ালা একটা ঘরে আমরা ঠাঁই নিলাম। দালানটার খুব চিপা এক গম্বুজের কাছে ছিল ঘরটা। ঘরটার সাজ-সজ্জা ছিল খুবই দামি, তবু মলিন আর বহু পুরানো। দেয়ালে ঝুলানো ছিল পরদা ও তাতে আঁকা ছিল বহু জমিদারি নিশানা ও অস্ত্র-বর্মওয়ালা পুরস্কার, তার সাথে ছিল একটু অস্বাভাবিকরকমের অনেকগুলা আধুনিক পেইন্টিং যার ফ্রেম ছিল দামি সোনালি আরবীয় নকশায় কাঁটা। এই ছবিগুলা কেবল দেয়াল থেকে সোজাসুজি ঝুলানো ছিল না, বরং বাড়িটার উদ্ভট নকশার কারণে আরো নানারকম পেরেকের মাধ্যমে ঝুলায়ে রাখা লাগসিল। এই ছবিগুলার দিকে তাকায়ে শুরুতেই আমি এমন এক ধন্ধে পইড়া গেলাম যে তাদের প্রতি আমার আগ্রহ বাইড়া গেল। তাই আমি পেদ্রোরে বললাম ঘরের ভারি ঝাপগুলা নামায়ে দিতে যেহেতু ততক্ষণে রাত হয়ে গেসে—আর আমার বিছানার মাথায় থাকা মোমবাতিটা জ্বালায়ে দিতে—আর তারপর বিছানা পর্যন্ত ছড়ায়ে থালা বিশাল কালো ঝালরওয়ালা পরদাগুলারে দুই পাশে টাইনা দিতে। এইসব আমি করাইলাম যাতে শান্তিতে বইসা, যদি ঘুমাইতে নাও পারি, যেন অন্তত ছবিগুলারে আরো গভীরভাবে খুটায়ে দেখতে পারি। বিছানার পাশেই একটা ছোট্ট বই পাওয়া গেল, যেইখানে ছবিগুলার ব্যাখ্যা দেয়া ছিল।

অনেক—অনেকক্ষণ ধইরা আমি পড়লাম—এবং মগ্ন, নিমগ্নভাবে আমি তাকায়ে থাকলাম ছবিগুলার দিকে। দ্রুত ও অসাধারণভাবে পার হয়ে গেল ঘণ্টার পর ঘণ্টা, আর হাজির হইলো গভীর মধ্যরাত। এমন জায়গায় মোমবাতিদানিটা রাখা ছিল যে আমার বিরক্ত লাগতেসিল, তাই খানসামার ঘুম না ভাঙায়ে আমি নিজেই খানিকটা কসরত কইরা হাত বাড়াইলাম, আর এমনভাবে বসাইলাম যাতে বইটার উপর সরাসরি আলো পড়ে।

কিন্তু এর ফলে যা হইলো তা ছিল পুরাপুরি আন্দাজের বাইরে। এতগুলা মোমবাতির আলোয় (কেননা মোমবাতি ছিল অনেকগুলা) আমার চোখের সামনে ফুইটা উঠলো ঘরের এমন এক কোণ যা বিছানার এক পায়ার ছায়ায় এতক্ষণ ঢাকা পইড়া ছিল। সেই আলোয় আমি দেখতে পাইলাম একটা ছবি যা এর আগে আমার নজর এড়ায়ে গেসিল। চোখেমুখে সদ্য নারীত্ব ফুইটা ওঠা এক মেয়ের ছবি ছিল ওইটা। খুব তাড়াহুড়ায় একবার নজর ফেললাম ছবিটার উপর, তারপর চোখ বুইজা ফেললাম। এইটা আমি কেন করলাম তা প্রথমে আমি নিজেও বুইঝা উঠতে পারি নাই। চোখের পাতা এইরকম বোজা থাকতে থাকতেই আমি এমনটা করার কারণ ভাবতে থাকলাম। একটু ভাবার সময় বের করার জন্যই হুজুগে তা কইরা বসছিলাম আমি—নিশ্চিত হইতে যে আমার নজর আমারে ধোঁকা দেয় নাই—নিজের কল্পনায় লাগাম লাগায়ে শান্ত ও নিশ্চিতভাবে আরো একবার তাকানোর জন্য প্রস্তুত করতেসিলাম নিজেরে। আর কয়েক পলক পরেই আমি আরো স্থিরভাবে চোখ ফেললাম ছবিটায়। Continue reading

একটা নভেলের জন্ম একটা কবিতা দিয়া শুরু হয় – গুন্টার গ্রাস

This entry is part 27 of 27 in the series ইন্টারভিউ সিরিজ

এই ইন্টারভিউটা যখন আমি অনুবাদ করতে বসি তখন গুন্টার গ্রাস সম্বন্ধে আমার জ্ঞান বিসিএস প্রিলিমিনারি পর্যন্ত। দ্য টিন ড্রাম বইয়ের লেখক কে? গুন্টার গ্রাস। এরপর আর কোনো কিছু না জেনেই যখন বইটা পড়া শুরু করলাম, প্রথম চাপ্টারে পুলিশের ধাওয়া থেকে পালাইতে আর্সোনিস্ট কালিয়াইচেক যখন আনা ব্রনস্কির স্কার্টের নিচে আশ্রয় নিলো, তখন অদ্ভুত আনন্দে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগলো, গ্রাস কি মার্কেজ পড়ে এ জিনিস লেখতে বসছিলো? প্যারাগ্রাফসম সেন্টেন্স, এবজার্ড হিউমার, ফুলানো ফাঁপানো লিরিকাল প্রোজ, সঙ্গে সকল ট্যাবুকে তাচ্ছিল্য করা একটা ইঁচড়ে পাকা হাসি। দ্য টিন ড্রাম পড়ে যে আমার মার্কেজের কথা মনে পড়ে গেছে তার কারণ ম্যাজিক রিয়ালিজম না। গ্রাসকে যে ‘ইউরোপিয়ান ম্যাজিক রিয়ালিজম’-এর এক প্রধান হোতা হিসাবে সাব্যস্ত করা হয় তা জানতে আমার আরো সময় লেগে গেছে। (বাই দ্য ওয়ে মার্কেজ মার্কেজ হওয়ার আগে গ্রাস গ্রাস হয়ে গেছেন। দ্য টিন ড্রাম এর প্রকাশকাল ১৯৫৯-এ, সলিটিউড ১৯৬৭-এ।) স্কার্টের নিচে ঢুকে পড়ার ঘটনাকে যে আমি ‘মার্কেজ’ বলে আইডেন্টিফাই করছি তার কারণ ছিলো একে অতীত বর্ণনার এক বিশেষ টেকনিক হিসাবে দেখা, যে টেকনিক অতীতকে মহিমান্বিতভাবে বর্ণনা করার যে চল আছে তাকে ইউনিকভাবে ডাইভার্ট করতে পারছে, যে ধরণের ন্যারেটিভ আমরা দেখতে পাই রুশদি ও বুলগাকভে।

এদের মধ্যে আমরা যা কমন পাই তা হলো, ‘অফিশিয়াল হিস্টোরি’ বা জনরা হিসাবেই ‘হিস্টোরি’র এক ধরণের প্যারোডি তৈরি করা, যেই প্যারোডি ইতিহাসের প্রচ্ছন্ন বিষয়গুলি নিয়া কোনো রাখ ঢাক ছাড়াই কথা বলতে পারে। গ্রাস তার এই ইন্টারভিউতে জানাচ্ছেন, পোস্ট-ওয়ার জার্মান সোসাইটিতে নাৎসি পিরিয়ড নিয়া আলাপ করা এক ধরণের ট্যাবু ছিলো, যে ট্যাবু পরবর্তীতে নানা ধরণের ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দিছে। (এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্য ও সেগুলা যেধরণের একপাক্ষিক ও সীমিত এক্সপেরিয়েন্স অফার করে তার কথা চিন্তা করতে পারি।) যুদ্ধের পর গ্রুপ-৪৭ নামে রাইটার ক্রিটিকদের যে গ্রুপ তৈরি হয়, এবং গ্রাস যে গ্রুপের অংশ ছিলেন, তাদের প্রধান কাজ ছিলো এমন সাহিত্য ভাষা উদ্ভাবন করা যা ওই ট্যাবুকে ভাঙতে পারে। এভাবে চিন্তা করলে গ্রাসের সাহিত্যকে এক ধরণের ‘অথেনটিক এক্সপেরিয়েন্স’ বা ‘কলম তুলে নেওয়া’ ধরণের সাহিত্য হিসাবেও দেখা যাইতে পারে। গ্রাসের যাপিত জীবন রিডারকে সে ধরণের এক রিডিং-এ যাওয়ার দিকেই প্ররোচিত করে। ভার্সাই চুক্তির ক্ষত বহন করা জার্মানিতে বড় হওয়া, টিএনএইজ থাকতে নাৎসিদের প্রতি সমর্থন, জার্মান আর্মিতে সার্ভ করা, যুদ্ধের পর ডুসেলডর্ফ ও বার্লিনে স্কাল্পটিং ও পেইন্টিং শেখা, ষাটের দশকে সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে ক্যাম্পেইন করা, এনভাইরনমেন্টাল ইস্যু নিয়া তার কর্নসার্ন, সত্তুর ও আশির দশকে ইন্ডিয়া ট্রাভেল, জার্মান রি-ইউনিফিকেশনের বিরোধিতা — এসব বায়োগ্রাফিকাল ডিটেইল তার কাজে কেবল পার্সোনাল ইন্টেগ্রিটি যুক্ত করে তা না, ব্যক্তিকে সমষ্টির সঙ্গেও একাকার করে দেয়। গ্রাসকে মার্কেজের সঙ্গে তুলনা করার আরেকটা সুবিধা হলো, শুধু সাহিত্যিক হিসাবেই না, যার যার জমিনে তারা যে কালচারাল আইকনে পরিণত হইছেন, তাও মাথায় রাখা।

কিন্তু কেবল বায়োগ্রাফি ও প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক কর্মকান্ড নির্ভর ইন্টারপ্রিটেশন সমস্যাজনক হতে পারে। প্রথমত এইটা ইন্টারপ্রিটেশনের স্কোপকে কেবল একধরণের ‘বাস্তবিকতা’র মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলতে পারে, দ্বিতীয়ত এরকম ইন্টারপ্রিটেশন গ্রাসের কাজকে তার রাজনৈতিক পজিশন, সোশাল এক্টিভিজম এবং তিনি যে পাবলিক পারসোনা তৈরি করছেন শুধু তার জাস্টিফিকেশনে ব্যবহার করতে পারে। এ ধরণের সীমাবদ্ধতা উতরানোর একটা উপায় হলো, আর্টকে সব কিছুর উপরে একটা ‘এস্থেটিক কনস্ট্রাক্ট’ হিসাবে দেখা। ইন্টারভিউতে গ্রাস তার এস্থেটিক কনসার্নের কথা নানান ভাবে জানান দিচ্ছেন। ফিকশনে ‘মিথ্যা’ বলার গুরুত্ব, তার প্রথম দিককার বইগুলাকে তার একটা বিশেষ ‘পলিটিকাল’ ফেইজের প্রোডাক্ট হিসাবে দেখা, ফিকশন-ননফিকশন ক্যাটাগরিগুলার সাথে তার সম্পর্ক, নভেলকে জনরা হিসাবে কিভাবে দেখেন, তার কোন কোন নভেলে ফরমাল ইনোভেশন আছে, কোনগুলা ফর্মের দিক দিয়া পিউর, ড্রয়িং কিভাবে তার রাইটিংকে সাপ্লিমেন্ট করে, প্রোজ কবিতা ও ড্রয়িং কিভাবে তার লেখায় সম-অধিকার পায় বা আদও পায় কী না, যে মিশ্র সময়কালকে উনি Vergegenkunft বলেন তা কিভাবে নতুন পার্সপেক্টিভ তৈরি করতেছে, এনথ্রোপসেন্ট্রিক ন্যারেটিভ থেকে বের হয়ে বইয়ের কেন্দ্রে প্রানীদের রাখা, কিংবা কোন জার্মান ট্র্যাডিশন ও অন্যান্য লিটারেরি সোর্স গ্রাসকে আকৃতি দিছে ইত্যাদি সব কিছুই এ ধরণের এস্থেটিক কনসার্নের বিষয়বস্তু। আল্টিমেটলি ইন্টারপ্রিটেশনের গুরুত্বটা এখানে সবার উপরে থাকতেছে টেক্সটের উপর। Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →